প্রকাশঃ ০৪ জানুয়ারী, ২০১৯ ১১:০২:৩২
| আপডেটঃ ২০ নভেম্বর, ২০২৪ ০৭:৫০:৫০
শাহ আলম, সিএইচটি টুডে ডট কম, রাঙামাটি। পার্বত্য জনসংহতি সমিতি (জেএসএস) সমর্থিত প্রার্থী ঊষাতন তালুকদারকে (স্বতন্ত্র) প্রায় ৫১ হাজার ২৫৩ ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করে রাঙামাটি আসনে চতুর্থ বারের মত সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন দাদা নামে খ্যাত দীপংকর তালুকদার।
৩০শে ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত নির্বাচনে দীপংকর তালুকদার মোট ভোট পেয়েছেন ১লাখ ৫৯ হাজার ২৮৯ ভোট। অন্যদিকে জেএসএস সমর্থিত নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বি স্বতন্ত্র প্রার্থী ঊষাতন তালুকদার ভোট পেয়েছেন ১লাখ ৮ হাজার ৩৬ ভোট। সংসদ নির্বাচনে বিপুল ভোটে রাঙামাটির সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন দীপংকর তালুকদার। তার জয়ে উচ্ছাসিত পার্বত্য বাসী। নানা বাঁধা বিপত্তি পেরিয়ে প্রথমে দলীয় মনোনয়ন পেয়েই বিজয়ী হয়ে সবাই কে চমকে দেন তিনি।
এবারের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পার্বত্য ৩ জেলার আসনই ক্ষমতাসীন দল আওয়ামীলীগের দখলে, এতদিন সবাই নির্বাচন নিয়ে ব্যস্ত থাকলেও নির্বাচনে জেতার পর এবার কে হবেন পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের মন্ত্রী, এনিয়ে জল্পনা কল্পনার শেষ নেই। ৩ জানুয়ারী নব-নির্বাচিত সংসদ সদস্যর শপথ গ্রহণের পর সোমবার নতুন মন্ত্রীসভার শপথ গ্রহণ করার কথা। পার্বত্য শান্তি চুক্তি অনুযায়ী পার্বত্য মন্ত্রনালয়টি একমাত্র পাহাড়ীদের জন্য সংরক্ষিত থাকায় ইতিমধ্যে দৌড়ঝাপ শুরু হয়েছে।
রাঙামাটি ২৯৯নং আসনে পার্বত্য জনসংহতি সমিতি (জেএসএস) সমর্তিক প্রার্থী ঊষাতন তালুকদারকে রেকর্ড পরিমাণ ভোটের ব্যবধানে নির্বাচিত দাদা নামে খ্যাত দিপংকর তালুকদাররকে মন্ত্রী হিসেবে দেখতে চান রাঙামাটিবাসী।
পার্বত্য তিনটি আসন থেকে সাধারণত দেয়া হয় পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের দায়িত্ব। তবে এবার কার ভাগ্যে জুটছে এ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব, এ নিয়ে রাঙামাটিতে চলছে নানা গুঞ্জন। মন্ত্রীত্ব পাওয়ায় তালিকায় রয়েছেন- দীপংকর তালুকদার, বীর বাহাদুর ঊশৈসিং, কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা।
এরইমধ্যে দীপংকর তালুকদারকে মন্ত্রী করার দাবিতে রাঙামাটি নির্বাচনী এলাকার ভোটারসহ দেশ-বিদেশের মাটিতে থাকা ব্যক্তিবর্গ ফেসবুকসহ বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া মন্ত্রী করার দাবিতে ষ্ট্যাটাস ভাইরালে পরিণত হয়েছে।
রাঙামাটি জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি চিংকিউ রোয়াজা বলেন, সঠিক উন্নয়নের জন্যই দীপংকর তালুকদারকে প্রয়োজন। যেহেতু এর আগে তিনি পার্বত্য মন্ত্রনালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বে ছিলেন, তাই এবার তাকে পূর্ণমন্ত্রী হিসেবে দেখতে চাই।
জেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক হাজী মুছা মাতব্বর বলেন, আমরা রাঙামাটিবাসী পাহাড়ী বাঙালী ঐক্যের প্রতীক দীপংকর তালুকদারকে পার্বত্য মন্ত্রনালয়ের পুর্ণমন্ত্রী হিসেবে দেখতে চাই, আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় থাকলেও ২০১৪ সনের পর রাঙামাটিবাসী মন্ত্রিত্ব পাওয়া থেকে বঞ্চিত ছিল। দীপংকর তালুকদারের আমলে সুষম উন্নয়ন হয়েছে দাবি করে তিনি নেত্রীর কাছে মন্ত্রীসভা গঠনের সময় দাদাকে (দীপংকর তালুকদার) পুর্ণমন্ত্রী করার দাবি জানান।
দলীয় নেতাকর্মীরা জানান, পার্বত্যাঞ্চলে আওয়ামী লীগের ঘাঁটি স্থাপিত হয়েছে দীপংকর তালুকদারের নেতৃত্বে। এখানকার রাজনৈতিক সমস্যা সমাধানসহ পার্বত্য শান্তি প্রক্রিয়া দীপংকর তালুকদারের অবদান সবচেয়ে বেশি। ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে আওয়ীমী লীগ ক্ষমতায় গিয়ে পার্বত্য সমস্যা সমাধানের সফল পদক্ষেপ নেয়। এবারের দলীয় ইস্তেহারে পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তি সম্পূর্ণভাবে বাস্তবায়নের অঙ্গিকার করা হয়েছে। সেক্ষেত্রে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে দীপংকর তালুকদারের মতো রাজনৈতিক বিচক্ষণ ও অভিজ্ঞ ব্যক্তিকে আবারো নিয়োগ দেওয়া দরকার।
বিভিন্ন পর্যায়ের দলীয় নেতাকর্মীরা জানান, পার্বত্যাঞ্চলে রাজনীতিতে সর্ব প্রথম আওয়ামী লীগের বীজ বপন করেছিলেন দীপংকর তালুকদার। তার প্রচেষ্ঠায় এখানকার রাজনৈতিক সমস্যা সমাধানসহ পার্বত্য শান্তি শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরের প্রক্রিয়া ত্বরাণি¦ত করা সম্ভব হয়েছিল। ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় গিয়ে পার্বত্য সমস্যা সমাধানের সফল পদক্ষেপ নেয়। এবারের দলীয় ইস্তেহারে পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তি সম্পূর্ণভাবে বাস্তবায়নের অঙ্গিকার করা হয়েছে। সেক্ষেত্রে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে দীপংকর তালুকদারের মতো রাজনৈতিক বিচক্ষণ ও অভিজ্ঞ ব্যক্তিকে আবারো নিয়োগ দেওয়া দরকার।
সাধারণ মানুষ এবং বিভিন্ন সুত্রে জানা যায়, দীপংকর তালুকদার দলীয় সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রিয় মুখ। দীপংকর তালুকদারকে যদি পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব না দেয়া হয় তখন অন্য কোন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর দায়িত্ব হয়তো তাকে দেয়া হবে। সে আশাবাদ সাধারণ জনগনের।
বঙ্গবন্ধুকে স্বপরিবারে নৃশংস হত্যার পর তিনি কাদের সিদ্দিকীর প্রতিরোধ বাহিনীতে যোগ দেন। তিনি ১৯৮৬ সালে তিনি রাঙামাটি জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।
তিনি ১৯৯১ সালে বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের স্থায়ী কমিটির সদস্য, ১৯৯৬ সালের বাংলাদেশ শিক্ষা কমিটি, সংস্থাপন মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত স্থায়ী কমিটি ও জাতীয় সংসদ হাউস কমিটির সদস্য ছিলেন। ১৯৯৮ সালে প্রতিমন্ত্রীর পদ মর্যাদায় পার্বত্য চট্টগ্রাম শরণার্থী বিষয়ক টাস্কফোর্সেরচয়ারম্যান নিযুক্ত হন। ১৯৯৭ সালের পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তি সম্পাদনে রয়েছে তাঁর বিশেষ অবদান।
১৯৯৬ ও ২০০২ সালে তিনি পরপর দুইবার জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন। তিনি ১৯৯১, ১৯৯৬ ও ২০০৮ এবং সর্ব শেষ ২০১৮সালে বিপুল ভোটে রাঙামাটির ২৯৯ নং থেকে সাংসদ নির্বাচিত হন।
২০০৯ সালের তিনি পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী নিযুক্ত। বর্তমানে তিনি বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য ও এখনো পর্যন্ত তিনি দলটির নেতাকর্মীদের সমর্থনে সভাপতি পদে বহাল রয়েছেন।
অতীতের সব রেকর্ড ভাঙায় দীপংকর তালুকদারকে আওয়ামীলীগ ও তার অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীসহ নির্বাচনী এলাকার জনগণ মন্ত্রীসভায় স্থান দেয়ার জোর দাবি জানান।
এদিকে রাঙামাটি আসনে দীপংকর তালুকদারের রেকর্ড পরিমাণ ভোট পেয়ে জয়ের পর নতুন সরকারে অভিজ্ঞ রাজনীতিবিদ হিসেবে দীপংকর তালুকদারই একটি সম্মানজনক অবস্থান পাচ্ছেন- এটা এখন অনেকটাই নিশ্চিত বলে ধারণা করা যাচ্ছে ।