প্রকাশঃ ০৬ ডিসেম্বর, ২০২৩ ০৯:৪১:৫১
| আপডেটঃ ২১ নভেম্বর, ২০২৪ ০৩:২৪:২৭
সিএইচটি টুডে ডট কম, রাঙামাটি। দীপংকর তালুকদার; যাকে রাঙামাটির রাজনীতিতে বলা হয় ‘বরপুত্র’। ১৯৯১ সাল থেকে টানা আওয়ামী লীগের একক প্রার্থী হিসেবে রাঙামাটি সংসদীয় আসনে নির্বাচন করে আসছেন। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনসহ টানা সাতবারই পেয়েছেন দলের মনোনয়ন। ছয়বার প্রতিদ্ব›িদ্বতা করে হেরেছেন দুইবার, জিতেছেন চারবার। হারার চেয়ে জয়ের পাল্লা তার দ্বিগুণ ভারী।
সবশেষ ২০১৪ সালের দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনেই প্রথমবারের মতো পাহাড়ের আঞ্চলিক রাজনৈতিক দল পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির (জেএসএস) সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থী ঊষাতন তালুকদারের হাতি প্রতীকের মুখোমুখি হতে হয়েছে তাকে। এর আগে, একবার হেরেছিল বিএনপি মনোনীত প্রার্থী মনিস্বপন দেওয়ানের কাছে। দ্বিতীয় দফায় হারের আগে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এমপি নির্বাচিত হওয়ার পর হয়েছেন প্রতিমন্ত্রীও। কিন্তু আঞ্চলিক দলের ‘হাতির শুঁড়ে’র থাবায় ডুবল তাঁর ‘নৌকা’ ।
২০১৪ সালের দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের হলফনামায় নিজের পেশা হিসেবে উল্লেখ করেছিলেন সাধারণ ঠিকাদার ও কাঠের ব্যবসা। ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পেশার পরিবর্তন করেননি তিনি; তবে দ্বাদশে এসে তিনি একটি পেশা ছেড়ে দিয়েছেন। সাধারণ ঠিকাদার হিসেবে না থাকলেও এবার ব্যবসা হিসেবে রেখেছেন প্রথম শ্রেণীর কাঠ ব্যবসায়ী ও সরবরাহকারী। কিন্তু দশম জাতীয় নির্বাচনে উল্লেখিত ব্যবসা হতে ৪৪ লাখ ৭৯ হাজার ৯৭৫ টাকা এবং একাদশের নির্বাচনে ৮৪ লাখ ১৩ হাজার ১৪৫ টাকা বাৎসরিক আয় দেখালেও এবার তার ব্যবসা খাতে আয় শূন্য!
তবে বাড়ি-এপার্টমেন্ট এবং দোকান বা অন্যান্য খাতে ভাড়া বাবদ উল্লেখ করেছেন এবার ৫ লাখ ২৩ হাজার ৪০০ টাকা। দশম নির্বাচনে যা ছিল ৪ লাখ ২১ হাজার ৫৭৫ এবং একাদশে এসে দাঁড়িয়েছিল ৫ লাখ ২ হাজার ৪০০ টাকা। দশ বছরের মাথায় এসে তার এই খাতে আয় বেড়েছে ২১ হাজার টাকা।
শেয়ার, সঞ্চয়পত্র, ব্যাংক আমানত খাতে দশম জাতীয় নির্বাচনে বাৎসরিক আয় ৬৮ হাজার ৪৩৭ টাকা ও একাদশে ৮ লাখ ৮৪ হাজার ৭৩২ টাকা দেখালেও দ্বাদশে এসে দাঁড়িয়েছে মাত্র ১ লাখ ৯০ হাজার টাকা। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিমন্ত্রী হিসেবে বাৎসরিক আয় ৫ লাখ ৭৩ হাজার ৬০০ টাকা দেখালেও ওই নির্বাচনে এমপি নির্বাচিত না হওয়ায় একাদশে চাকুরি খাতে কোনো আয় ছিল না। তবে দ্বাদশের হলফনামায় তিনি এমপি সম্মানি ও ব্যাংক লভ্যাংশ হিসেবে আয় দেখিয়েছেন ১২ লাখ ১৯ হাজার ৮৯৭ টাকা। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দীপংকরের বাৎসরিক আয় ৫৫ লাখ ৪৩ হাজার ৫৮৭ টাকা এবং একাদশে ৯৮ লাখ ১০ হাজার ২৭৭ টাকা হলেও বর্তমানে বাৎসরিক আয় ১৯ লাখ ৩৩ হাজার ২৯৭ টাকা। এমপিও হয়েও ৫ বছরে তার আয় কমেছে এক পঞ্চমাংশেরও বেশি।
বিএ অনার্স (ইংরেজি) শিক্ষাগত যোগ্যতা সম্পন্ন দীপংকর তালুকদারের বিরুদ্ধে কোনো মামলা নেই। তবে তাঁর সম্পদের পরিমাণ বেড়েছে। এবারের হলফনামায় অস্থাবর সম্পদের মধ্যে নিজের নগদ টাকা ১ কোটি ৭৭ লাখ ৬৯ হাজার ২৪৪ টাকা, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমাকৃত ৩৪ লাখ ৫২ হাজার ৪৩০ টাকা, স্থায়ী আমানতে এফডিআরে ৫৪ লাখ টাকা সঞ্চয়পত্রে ১ কোটি টাকা। মটরগাড়িখাতে ৬৩ লাখ ৪৮ হাজার ১৪৮ টাকা। তবে নিজের ২৫ ভরির স্বর্ণের দাম দেখিয়েছেন কেবল মাত্র ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা। যদিও বর্তমান বাজারে প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম ১ লাখ ছুঁয়েছে। এছাড়া ইলেকট্রনিক্স সামগ্রী খাতে ৭ লাখ ৭৩ হাজার ৭০০ টাকা, আসবাবপত্রে ৭ লাখ ৪৬ হাজার টাকা এবং অন্যান্য বলতে একটি পিস্তল ও একটি রাইফেল খাতে উল্লেখ করেছেন ১ লাখ ২০ হাজার টাকা। তার স্ত্রীর নামে নগদ ১২ হাজার ৫০০ টাকা, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে ৭৪ লাখ ৪৪ হাজার ১৭৬ টাকা, সঞ্চয়পত্রে ৫০ লাখ টাকা এবং ২৫ ভরি স্বর্ণ আনুমানিক মূল্য দেখিয়েছেন কেবল ৩ লাখ টাকা।
স্থাবর সম্পত্তির মধ্যে নিজ নামে চট্টগ্রামের হাটহাজারীর অন্যান্য রেসিডেন্সিয়াল এলাকায় ৫ কাঠা জমিবাবদ আনুমানিক ৩৩ লাখ টাকা। দীপংকর তালুকদারের রাঙামাটি শহরের চম্পকনগরের ৫ তলা বিশিষ্ট দীপালয়ের আনুমানিক মূল্য লিখেছেন ৮৮ লাখ ৩২ হাজার ২৩৩ টাকা। এছাড়া জেলার রাজস্থলী উপজেলার ৩৩১ নম্বর গাইন্দ্যা মৌজায় ২১ দশমিক ৩০ একর এবং রাঙামাটি সদরের ১০৪ নম্বর ঝগড়াবিল মৌজায় ২ দশমিক ২৩ একর জায়গা দানসূত্রে প্রাপ্ত উল্লেখ করলেও সেটির মূল্য উল্লেখ করেননি।
অন্যদিকে, স্ত্রী নামে স্ত্রীর প্লট বাবদ ১০ লাখ ৭৫ হাজার টাকা এবং একটি এপার্টমেন্ট বাবদ ৮০ লাখ ১২ হাজার টাকা উল্লেখ করেন। দায়-দেনার মধ্যে বর্তমানে (শেয়ারের হার অনুপাতে) ৫৩ লাখ ৯৬ হাজার ৫৫০ টাকা ৪০ পয়সা দেনা রয়েছেন।
দীপংকর তালুকদারের বর্তমানে স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪ কোটি ৪৮ লাখ ৫৯ হাজার ৫২২ টাকা। স্ত্রীর আছে ১ কোটি ২৭ লাখ ৫৬ হাজার ৬৭৬ টাকা। ২০১৮ সালের হলফনামায় নিজের নামে ছিল ৪ কোটি ২৩ লাখ ৯৮ হাজার ৭৫২ টাকা। স্ত্রীর নামে ছিল ১ কোটি ২৮ লাখ ২০ হাজার ৫৭৬ টাকা। ২০১৩ সালের হলফনামায় দীপংকরের নামে ছিল ৩ কোটি ২৯ লাখ ৪২ হাজার ২৭৩ টাকা। স্ত্রীর নামে ছিল ৬০ লাখ ৬৫ হাজার ৩২৫ টাকা। ১০ বছরের মাথায় দীপংকর তালুকদার ও তার স্ত্রী উভয়ের সম্পদ বেড়েছে।
দ্বাদশের নির্বাচনি প্রতিশ্রুতিসমূহে দীপংকর তালুকদার পার্বত্য অঞ্চলের অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার, শান্তি চুক্তি পূর্ণ বাস্তবায়ন ও নির্বাচনি এলাকার ব্রিজ, কালভার্ট, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও রাস্তাঘাট নির্মাণসহ অবকাঠামোগত উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। অর্জনসমূহে দীপংকর বলেছেন, কিছু অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার রয়েছে, অবশিষ্ট অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার কার্যক্রম চলমান রয়েছে। সম্পাদিক শান্তি চুক্তির ৭২টি ধারার মধ্যে ৬৫টি পূর্ণ ও ৪টি ধারা আংশিক বাস্তবায়িত হয়েছে; অর্জনের হার ৯০ শতাংশ। আর অবকাঠামোগত উন্নয়নে প্রায় ৮০ শতাংশ বাস্তবায়ন হয়েছে।