দুই দেওয়ানে বিভক্ত রাঙামাটি বিএনপি
প্রকাশঃ ০১ ডিসেম্বর, ২০১৮ ১২:০৮:৩২
| আপডেটঃ ১৭ নভেম্বর, ২০২৪ ০১:৫২:৫৭
হিমেল চাকমা, বিশেষ প্রতিনিধি, রাঙামাটি। কেন্দ্র বিএনপি রাঙামাটির আসনের আপাতত দুজনই প্রার্থী দিয়েছে। অপরজন অব.কর্নেল মনীষ দেওয়ানকে মনোনয়ন দিলেও দেরীতে দেওয়ায় জমা দিতে পারেননি। ফলে দুজন প্রাথী একজন এড. দীপেন দেওয়ান অন্যজন মনি স্বপন দেওয়ান। দীপেন দেওয়ান কেন্দ্রীয় বিএনপির সহ ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক ও সাবেক জেলা বিএনপির সভাপতি। অন্যজন রাঙামাটি আসনের সাবেক সাংসদ মনি স্বপন দেওয়ান। দুজনই মনোনয়ন পত্র জমা দিয়েছেন রিটার্নীং কর্মকর্তার কাছে।
কিন্তু জেলা বিএনপি সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক কাজ করছেন একজনের হয়ে। এড়িয়ে যাচ্ছেন অন্যজনকে। এতে নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
তৃণমূল পর্যায়ে বিএনপির সূত্রগুলো বলছে ব্যাক্তিগত সমস্যাকে দলের ভিতরে আনা হয়েছে। এতে আপাত দৃষ্টিতে দল ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এতে সুযোগ খুঁজছে প্রতিপক্ষ। জয় নিয়ে দেখা দিচ্ছে সন্দেহ। সূত্রগুলো বলছে জেলা বিএনপির উচিত ছিল এমন অবস্থায় নিরপেক্ষতা বজায় রাখা। কিন্তু হয়নি।
মনোনয়ন পত্র জমাদানের সময় মনি স্বপনের সাথে সভাপতি শাহ আলম ও সাধারণ সম্পাদক দীপন তালুকদাকে দেখা গেলেও দীপেন দেওয়ানের সাথে দেখা যায়নি।
এ ব্যাপারে দীপেন দেওয়ান বলেন, আমি শাহ আলমকে বাক্তিগতভাবে বলেছিলাম মনোনয়ন জমা দেওয়ার সময় যেন আমার সাথে থাকেন। কিন্তু তিনি থাকেননি, এড়িয়ে গেছেন।
দীপেনের সাথে দেখা যায় জেলা বিএনপির সহ সভাপতি রাঙামাটি পৌরসভার সাবেক মেয়র সাইফুল ইসলাম ভুট্টোকে। তিনি বলেন, আমি দীপেন দেওয়ানকে সমর্থন করি কারণ আছে। দীপেন দেওয়ানকে প্রার্থী দিলে আমরা শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী হব, ভোট বেশী পাব। আর বেশী পাওয়া মানে আমরা বিজয়ী হওয়া।
মনি স্বপনকে খারাপ বলব না। তার জনপ্রিয়তা দীপেনের চেয়ে কম এটা স্বীকার করতে হবে। দুঃসময়ে দল ত্যাগ করেছে। এরপর এলডিপিতে গেল। সেখানেও নিস্ক্রিয়। বর্তমান এলডিপির সভাপতিও দীপেনকে সমর্থন করে যাচ্ছেন। এমন অবস্থায় মনি স্বপন হঠাৎ বিএনপি প্রার্থী হবে। আর নেতা কর্মী মানুষ হুজুকে তাকে ভোট দেবে তা ভাবা হলে হবে বোকামী। পাহাড়ের মানুষ এখন অনেক সচেতন।
বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও সাবেক জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান রবীন্দ্র লাল চাকমা বলেন, আমাদের বিজয় প্রার্থীর উপর নির্ভর করছে। এ নির্বাচনে আমি দীপেনের বিকল্প দেখছি না। ৩৯ বছর ধরে বিএনপির রাজনীতির সাথে আছি। সুখে দুখে দলের সাথে ছিলাম। এখনও আছি। যেদিন মনি স্বপন দলত্যাগ করল তার আগের দিন আমরা ঢাকায় একসাথে ন্যাম ভবনে ছিলাম। তাকে বার বার অনুরোধ করেছিলাম ভাই দল ত্যাগ করেন না। সুদিন আসবে। কিন্তু কথা শুনল না। আমাকে বলল, তারেক খালেদা নিয়ে আপনি থাকেন আমি গেলাম। আমি খুব কষ্ট পেয়েছি। সুদিনে থাকবে দুর্দিনে চলে যাবে এ কোন ধরণের নেতা? এরপর দীপেন ১২ বছর দলের জন্য কাজ করল। দলকে সুগঠিত করল। এগুলো বানানো কথা নয় সবই তো মানুষ দেখেছে। এ অবস্থায় এসে যদি কোকিলের মত মনি স্বপন প্রার্থী হয় আমি ব্যাক্তিগতভাবে মেনে নিতে পারব না।
মনি স্বপন দেওয়ানের সাথে দেখা যায় শাহ আলম, দীপন তালুকদার, বিএনপির জেলা যুগ্ম সম্পাদক এড. মামুনুর রশীদ মামুনসহ জেলা বিএনপি ও সহযোগী সিনিয়র নেতৃবৃন্দকে।
মামুুনুর রশীদ বলেন, কেন্দ্র থেকে বহিস্কার আদেশ প্রত্যাহারের পর মনি স্বপন দলে এসেছেন। তাকে আমরা সমর্থন দিচ্ছি ঠিক। কিন্তু আমা বর্ধিত সভার মাধ্যমে মনি স্বপনকে প্রার্থী ঘোষণা করিনি। শেষ পর্যায়ে কেন্দ্র থেকে যাকে চুড়ান্ত প্রার্থী করবে তাঁর পক্ষে কাজ করব।
শাহ আলম বলেন, মনোনয়ন পত্র জমাদানের সময় মনি স্বপনের সাথে ছিলাম আর দীপেনের সাথে ছিলাম না এটি ঠিক। আমাকে দীপেন দেওয়ান ফোন করেছিল এটিও ঠিক। তবে আমি দীপেন দেওয়ানকে বলেছি অফিসে আসেন এক সাথে যাব। কিন্তু আসেননি। মনি স্বপন এসেছে তাই তাকে নিয়ে গেছি। দীপেন দেওয়ান জেলা বিএনপির সভাপতি ছিলেন। এ সময় আমি সাধারণ সম্পাদক ছিলাম। তবে রাজনীতিকভাবে আমি দীপেনের সিনিয়র। বিগত বিএনপির কাউন্সিলে আমাদের বিরোধ সৃষ্টি হয়। তিনি আমার বিরুদ্ধে কেন্দ্রে অভিযোগ দেন আমি নাকি আওয়ামীলীগের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করি। যা ঠিক নয়। এসব কথা বলায় তাকে মানাও করা হয়েছে শুনেছি।
যা হোক, শেষ পর্যায়ে কেন্দ্র যাকে মনোনয়ন দেবে তাঁর পক্ষে আমরা এক সাথে কাজ করব। বর্তমানে যা হচ্ছে এগুলো তখন থাকবে না। দীপেন ও মনি স্বপন যে কারোর পক্ষে কাজ করতে আমাদের অসুবিধা হবে না।
সাধারণ সম্পাদক দীপন তালুকদার বলেন, শেষে সব ঠিক হয়ে যাবে আমরা একসাথে কাজ করতে পারব। বিরোধ যে পর্যায়ের কথা বলা হচ্ছে বা মনে করা হচ্ছে সে পর্যায়ে নয়। শেষ পর্যায়ে যাকে মনোনয়ন দেওয়া হবে তাঁর পক্ষে কাজ করার পরিবেশ এখনও নষ্ট হয়নি।
মনি স্বপন দেওয়ান বলেন, জেলা ও তৃণমুল বিএনপি আমাকে সমর্থন করছে। নির্বাচনে আমি জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী। তাই নির্বাচনে এসেছি। তবে শেষ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। আমার বিশ্বাস কেন্দ্র আমাকে ছাড়া কাউকে প্রার্থী দেবে না। প্রার্থী হলে আমি জয়ী হব।
এড.দীপেন দেওয়ান বলেন, আমার জনপ্রিয়তার কথা আমাকে বলবে মানাবে না। আমার বিশ্বাস নির্বাচনে আমি জয়ী হব। বাচ্চু দা (কর্নেল মনীষ দেওয়ান), মনি স্বপন দেওয়ান এবার সবাই বড় ভাই। আমি এদের বিরুদ্ধে কি বলব? আমি মনোনয়ন পাব এটি বিশ্বাস করি। নির্বাচনে জয়ী হতে হলে সবার সহযোগীতা দরকার।