বান্দরবানে ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে ফুলের চাষ, বাড়ছে ব্যবসায়িক সফলতা
প্রকাশঃ ২৯ জানুয়ারী, ২০২১ ০৬:১১:২৬
| আপডেটঃ ১৫ নভেম্বর, ২০২৪ ০৫:৫৩:৩৭
সিএইচটি টুডে ডট কম, বান্দরবান। বান্দরবানে দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে ফুল চাষ আর এতে স্থানীয় ফুলপ্রেমীদের চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি বিভিন্নস্থানে যাচ্ছে নানা রকমারী ফুল। কম খরচে লাভ বেশি হওয়ায় দিন দিন এই চাষে আগ্রহী হচ্ছে অনেকে আর বাণিজ্যিকভাবে ফুল চাষে কৃষকদের নানা ধরণের পরামর্শ দিচ্ছে কৃষি বিভাগ ।
ফুল সৌন্দর্য্য আর শুভতার এক অন্যন্য প্রতীক। যেকোন শুভকাজে জন্মদিন,গায়ে হলুদ,বিয়ে আর যেকোন অনুষ্টানে প্রয়োজন পড়ে ফুলের,কিন্তু বান্দরবানে একসময়ে ছিলনা পর্যাপ্ত ফুলের চাষ ও সরববরাহ। বিগত বছরগুলোতে বান্দরবানের ফুলের চাহিদা মেটাতে হতো পার্শ্ববতী সাতকানিয়া,পটিয়া ও চট্টগ্রামসহ দেশের নানা প্রান্ত থেকে সংগ্রহ করে। কিন্তু সময়ের পরিবর্তনে এখন বান্দরবানের বিভিন্ন ছাদবাগান, নার্সারী আর বাড়ীর আঙ্গিনায় হচ্ছে ফুলের চাষ ও বিক্রি।
জেলা সদরের বিভিন্নস্থানে এখন গোলাপ,গাঁদা,রজনীগন্ধা,সুর্যমুখী,গ্লাডিওলাসসহ বিভিন্ন দেশী বিদেশী ফুলের চাষ শুরু হয়েছে আর বিক্রি করে লাভবান হচ্ছে চাষীরা,খরচের তুলনায় লাভবেশী আর বিক্রি বাড়ায় খুশি ফুল চাষীরা।
বান্দরবানের ডিসি বাংলো সংলগ্ন ফুলচাষী অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মচারী মো.আইয়ুব বলেন, বিগত ৪বছর ধরে আমি বাড়ীর ছাদে ফুল বাগান করছি এবং আমার বাগানে জবা,গাদা,গোলাপসহ দেশী বিদেশি অসংখ্য ফুলের চারা সংগ্রহে রয়েছে। ফুলচাষী মো.আইয়ুব আরো বলেন,আমার ফুলবাগানে আমি এ পর্র্যন্ত ২লক্ষ টাকা বিনিয়োগ করেছি এবং ফুল বাগানের ফুল ফোটা দেখে আমার মন আনন্দে ভরে ওঠেছে।
ফুলপ্রেমী ও চাষি পারভেজ আক্তার শখের বশে ফুলের বাগান করেছে ছাদে আর এখন সেই শখ থেকে ব্যবসায়ীক কার্যক্রম শুরু। পারভেজ আক্তার জানান,প্রথমে শখ করে বাগান করলে ও এখন ব্যবসায়ীকভাবে ফুল বিক্রি করছি, প্রতিদিনই কমবেশী বিক্রি করতে পারছি,পাশাপাশি আত্মীয় ও বন্ধুদের বিনামুল্যে ফুল বিতরণ করে ফুলবাগান সম্প্রসারণ করে যাচ্ছি।
বান্দরবান সদরের রোয়াংছড়ি বাসস্টেশান সংলগ্ন ফুলচাষী নুরুল ইসলাম (মিন্টু) জানান, ১২ বছর ধরে আমি বান্দরবানে নার্সারী করে যাচ্ছি। বান্দরবানে যে ফুলের ছাহিদা রয়েছে সেটা মেটানোর পরিকল্পনা থেকে আমার ফুলের নার্সারীর যাত্রা শুরু। ফুলচাষী নুরুল ইসলাম (মিন্টু) আরো জানান,আমার নার্সারীতে আমি ১০লক্ষ টাকা বিনিয়োগ করেছি এবং ১০জন শ্রমিক প্রতিদিনই আমার বাগানে কাজ করে যাদের মাসিক আমি বিভিন্ন পরিমান অর্থ বেতন দিয়ে থাকি। ফুলচাষী নুরুল ইসলাম (মিন্টু) আরো জানান,আমার বাগানে স্টার,মেডিগ্লোড,ইনকা,ডাইনটাস,চেরীসহ দেশীবিদেশী নানা প্রজাতির উন্নতমানের ফুলের চারা রয়েছে এবং বান্দরবানে এখন দিনদিন ফুলপ্রেমীদের সংখ্যা ও বৃদ্ধি পাচ্ছে যারা বহু ফুল চারা আমার কাছ থেকে সংগ্রহ করে নিজবাড়ী ও ছাদে লাগিয়ে তাদের নিত্যদিনের চাহিদা মেটাতে সক্ষম হচ্ছে।
বাড়িঘর সাজাতে আর যেকোন অনুষ্টানকে আর সুশোভিত করে তুলতে এখন বেড়েছে ক্রেতার সংখ্যাও হাতের নাগালে ফুলের টব আর নানান প্রজাতির দেশী বিদেশি ফুলের চারা ও ফুল পাওয়ায় খুশি ফুলপ্রেমীরা। বান্দরবানে বিভিন্নস্থানে গড়ে ওঠেছে ছোটবড় নার্সারী আর এতে মিটছে পরিবারের ফুলের যোগান।
নার্সারী থেকে ফুলচারা কিনতে আসা এ্যানি মারমা জানান,একসময়ে বান্দরবানে ফুলের বড়ই অকাল ছিল,আমাদের ধর্মীয় পূজা অর্চনা করতে বেশ কষ্ট হতো ,ফুল ছাড়াই বিভিন্ন মঙ্গলঅনুষ্ঠান সম্পাদন করতে হতো ,তবে এখন ফুল বান্দরবানে বিভিন্ন দোকান আর নার্সারীতে পাচ্ছি এতে আমরা ভীষণ খুশি।
ফুল কিনতে আসা সুমাইয়া নুরফাত প্রত্যাশা জানান,বান্দরবানে পর্যটন ব্যবসার সাথে সাথে দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে ওঠেছে ফুল চাষ আর বিক্রি, এখন আমরা হাতের নাগালে কমবেশি ফুল পাচ্ছি। সুমাইয়া নুরফাত প্রত্যাশা আরো বলেন,সরকারিভাবে ফুলচাষীদের আরো প্রশিক্ষণ ও সহায়তা প্রদান করা হলে বান্দরবানের উৎপাদিত ফুল এলাকার চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে সরবরাহ করা সম্ভব হবে।
এদিকে ফুল চাষে আরো আগ্রহী করতে চাষীদের নিয়মিত পরামর্শ ও বিভিন্ন সহায়তা দেয়া হচ্ছে বলে জানান কৃষি কর্মকর্তারা। বান্দরবান হটিকালচার সেন্টার এর উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মো.মিজানুর রহমান বলেন,বান্দরবানে ফুল চাষে চাষীদের আরো আগ্রহী করতে চাষীদের নিয়মিত পরামর্শ ও বিভিন্ন সহায়তা দেয়া হচ্ছে আর এতে ফুল চাষীরা আগের চেয়ে এখন বেশি করে ফুল উৎপাদন ও বিক্রির সাথে জড়িত হচ্ছে। কৃষিবিদ মো.মিজানুর রহমান আরো বলেন, বান্দরবানের মাটি ,আবহাওয়া ও জলবায়ু ফুল চাষের জন্য বেশ উপযোগি আর ফুলচাষীরা যদি নিয়মিত পরিচর্যা ও সঠিক নিয়মে ফুল চাষ করে তবে বান্দরবানের উৎপাদিত ফুল সুন্দর ও শোভনীয় হবে এবং স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে সরবরাহ করা সম্ভব হবে।
বান্দরবান হটিকালচার সেন্টার এর তথ্যমতে, বান্দরবানে হটিকালচার সেন্টার এর তত্বাবধানে ২০-২১ অর্থবছরে ৩৪ হাজার বিভিন্ন ধরণের ফুলের চারা উৎপাদন করা হয়েছে আর এ থেকে বিক্রি হয়েছে ২১হাজার ৯০০টি চারা আর এই ফুল চাষে জড়িত হয়েছে জেলার প্রায় অর্ধশতাধিক ফুলচাষী।