কাপ্তাইয়ে বন্ধের পথে দুটি ঐতিহ্যবাহী স্কুল, এমপিও ভুক্তি করার দাবি
প্রকাশঃ ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ ১০:৩২:৩৫
| আপডেটঃ ২১ ডিসেম্বর, ২০২৪ ০৯:৪৭:৫৩
সিএইচটি টুডে ডট কম, রাঙামাটি : রাঙামাটি পার্বত্য জেলার আওতাধীন কাপ্তাই উপজেলার শিল্প এলাকা হিসেবে পরিচিত কর্ণফুলি পেপার মিল ও কর্ণফুলি রেয়ন মিলে কর্মরত কর্মকর্তা, শ্রমিক-কর্মচারীদের সন্তানদের শিক্ষা নিশ্চিতকরনের লক্ষ্যে গড়ে উঠে ঐতিহ্যবাহী কেপিএম স্কুল এবং কেআরসি স্কুল।
এ দুটি স্কুলের মধ্যে ১৯৫৩ সালে কর্নফুলি পেপার মিলস লিমিটেড (কেপিএম) এবং পরবর্তীতে ১৯৬৭ সালে কর্নফুলি রেয়ন মিলস (কেআরসি) স্কুল প্রতিষ্ঠিত হয়।
বাংলাদেশ কেমিক্যালস ইন্ড্রাষ্ট্রিজ কর্পোরেশন (বিসিআইসির) নিয়ন্ত্রনে এই ২ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক নিয়োগ, বেতন ভাতাসহ যাবতীয় শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালিত হতো।
এর মধ্যে ২০০২ সালের ১৫ ডিসেম্বর কেআরসি স্কুলের ভাগ্যে আসে এক চরম দু:সময়। সেইদিন বিসিআইসির নিয়ন্ত্রাধীন কেআরসি মিল সম্পূর্ণ ভাবে বন্ধ হওয়ায় ফলে বিসিআইসি কতৃর্ক প্রতি মাসে মাসে দেওয়া স্কুলের শিক্ষক কর্মচারীদের বেতন ভাতা বন্ধ হয়ে যায়।
এই সংকটের কারনে ২০০২ সালের পর থেকে একে একে চাকরি ছেড়ে অন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতা নিয়েছেন এই স্কুলের নামকরা অনেক শিক্ষক।
অন্যদিকে কেপিএম স্কুলের কার্যক্রম ও চলছে অনেকটাই খুঁিড়য়ে খুড়িয়ে, এ স্কুলের বর্তমান যে অবস্থা তা চলতে থাকলে যে কোন সময় বন্ধ হয়ে যেতে পারে কেপিএম স্কুলটি।
প্রতিষ্ঠার পর থেকে কেআরসি স্কুল ২০০২ সালের আগে রাঙামাটি জেলার মধ্যে ফলাফলের দিক দিয়ে ৩ বার শ্রেষ্ঠ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হওয়ার গৌরব অর্জন করে।
কেআরসি স্কুলের প্রধান শিক্ষক নুরুল আলম জানান, বর্তমানে ৬ জন মহিলা শিক্ষক এবং ৪ জন পুরষ শিক্ষক ৬ষ্ট শ্রেনী হতে ১০ম শ্রেনী পর্যন্ত ৩৫৪ জন শিক্ষার্থীদেরকে পাঠদান করানো হচ্ছে।
শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে নেয়া সামান্য টিউশন ফি দিয়ে শিক্ষকদের বেতন দেওয়া হয়। তিনি জানান, শিক্ষকদের বেতনের হার এতো কম যে, যা দিয়ে ঐ শিক্ষকের পরিবারতো দূরের কথা নিজের আনুযাঙ্গিক খরচও মিটে না। তিনি অতি দ্রুত কেআরসি স্কুলকে এমপিও ভূক্ত করার জন্য সরকারের নিকট আকুল আবেদন জানান।
এ বিষয়ে কাপ্তাই উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও স্কুল পরিচালনা কমিটির সভাপতি মফিজুল হক জানান, এই মূহুর্তে কেআরসি উচ্চ বিদ্যালয় এমপিও ভূক্ত হওয়া খুবই জরুরী, না হলে অচিরেই বন্ধ হয়ে যাবে ঐতিহ্যবাহী এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।
তিনি আরোও জানান, রাঙামাটি থেকে নির্বাচিত সাংসদ ও প্রাক্তন প্রতিমন্ত্রী দীপংকর তালুকদার এমপি এই স্কুলের অবকাঠামোগত উন্নয়নে বছর বছর অনুদান দিয়েছেন, এছাড়া তিনি তাঁর তহবিল হতে নগদ অনুদান দিয়েছেন সাময়িক ভাবে স্কুল যাতে পাঠদান ব্যাহত না হয়। কিন্তু এটা সাময়িক সমাধান, তাই এই স্কুলটি বাঁচানোর জন্য তিনি দ্রুত এমপিও ভুক্ত হবার জন্য তিনি সরকারের নিকট দাবি জানান।
কাপ্তাই উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নাদির আহমেদ জানান, অনেকটা স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে শিক্ষার্থীদের টিউশন ফি হতে যৎ সামান্য বেতন নিয়ে শিক্ষকরা শিক্ষকতা করছেন।
কিন্তু এই বেতন দিয়ে একজন শিক্ষকের পরিবার চালানো বর্তমান সময়ে অনেকটাই অসম্ভব, তাই তিনি এই স্কুলটি দ্রুত এমপিও ভূক্ত হওয়া জরুরী বলে মনে করেন, এই বিষয়ে তাঁর দপ্তরের যা করণীয় তিনি তা করবেন বলে আশ্বাস প্রদান করেন।
কাপ্তাই উপজেলার ঐতিহ্যবাহী চন্দ্রঘোনা কেআরসি উচ্চ বিদ্যালয়ের তিন শতাধীক শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ শিক্ষা কার্যক্রম যাতে বন্ধ না হয় সেইজন্য এই এলাকার শিক্ষানুরাগী সচেতন মহল সরকারের সু-দৃষ্টি কামনা করেছেন। পাশাপাশি কেপিএম স্কুলের সমস্যা সমাধানে ও সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন সংশ্লিষ্টরা।