সোমবার | ২৭ জানুয়ারী, ২০২৫

কলমপতি কাঠ ব্যবসায়ী সমিতি অফিস তালা, ১৬ বছরের হিসাব চান সদস্যরা

প্রকাশঃ ২৬ জানুয়ারী, ২০২৫ ০৯:৪৬:৫৯ | আপডেটঃ ২৭ জানুয়ারী, ২০২৫ ০৯:২৫:৫৭

মেহেদী হাসান সোহাগ. সিএইচটি টুডে ডট কম, কাউখালী (রাঙামাটি)। ৫ আগষ্ট আওয়ামীলীগ সরকার পতন হওয়ার পর থেকে কাউখালী উপজেলা আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীরা গা-ঢাকা দিলে কাউখালী কাঠব্যবসায়ী সমিতির কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়ে। সমিতির সিংহভাগ পরিচালক আওয়ামীলীগ নেতার্কমী হওয়াতে বর্তমানে সমিতির বিগত ১৬ বছরের হিসাব নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন সদস্যরা। এদিকে সরকার পতন হওয়ার পর থেকে সমিতির অফিসটি তালামারা দেখা গেছে।

 

তবে কলমপতি কাঠ ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মোঃ ইমাম উদ্দিনের দাবি- আগষ্টের পরে শুধুমাত্র সমিতিটি দখলে নিতেই বিএনপি নেতাকর্মীরা তাদের মিথ্যা মামলা দিয়ে এলাকা ছাড়া করে সমিতি দখলে নিয়েছে। সমিতিটিতে বর্তমানে ১কোটি টাকার উপর স্থায়ী সম্পত্তি রয়েছে। তারমধ্যে বনভূমি (গাছের বাগান) রয়েছে ১৭ একর, ধানি জমি রয়েছে ২০ শতক, ব্যাংকে জমা আছে লক্ষ ৮০ হাজার টাকার মত।


তিনি আরো বলেন এই সমিতিটিতে প্রায় ৭৫০ জন সদস্য রয়েছে। এরমধ্যে সকল দলের সমর্থক রয়েছে। আগষ্টের দিন দুপুরে সমিতির বিএনপি সমর্থিত / জন সদস্য এসে সমিতির অফিস বন্ধ করতে হুমকি দেন। এরপরই তারা অফিস বন্ধ করে বাড়িতে চলে যান। আগষ্টের পর থেকে কাউখালী উপজেলা বিএনপির নেতাদের সাথে কয়েক দফা কথা বলেন, যাতে সমিতির কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারে। কিন্তু বিষয়টি উল্টো বর্তমান কমিটিকে পদত্যাগ করতে জোর জবরদস্তি করা হয়। এরিমধ্যে তাদেরকে মিথ্যা মামলা দিয়ে এলাকা ছাড়লে বর্তমানে সমিতিটি বিএনপি সমর্থিত সদস্যের দখলে চলে যায়। এবং নিয়মিত হিসাব ছাড়াই সমিতির টাকা উত্তোলন করছে   বলে দাবী বর্তমান সভাপতি ইমাম উদ্দীনের। অন্য দিকে কলমপতি কাঠব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোঃ জসীম উদ্দীন অভিযোগ করেন, উপজেলা বিএনপির সভাপতি জাহাঙ্গীর হোসেন, সাধারন সম্পাদক মোঃ আব্দুল মোতালেব মেম্বার সাংগঠনিক সম্পাদক তারামিয়ার নির্দেশে কাঠব্যবসায়ী সমিতির বিএনপি সমর্থিত সদস্যারা দখলে নিয়ে প্রতিদিন সমিতির নামে বিভিন্ন খাতে টাকা উঠাচ্ছে। কিন্তু সেই টাকা কোন সমিতির ব্যাংক হিসাবে জমা না দিয়ে নিজেরা ভাগবাটোয়ারা করেছেন বলে অভিযোগ করেছেন।

 

 

তবে এসব অভিযোগকে ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছেন  কাউখালী উপজেলা বিএনপির সাধারন সম্পাদক মোঃ আব্দুল মোতালেব মেম্বার। তিনি বলেন, কলমপতি কাঠব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মোঃ ইমাম উদ্দীন সাধারন সম্পাদক মোঃ জসীম উদ্দীন ফ্যাসিস্ট সরকারের দোসর' হিসেবে দীর্ঘ ১৬ বছর রাজত্ব করেছে। আগস্টের আগে ছাত্র আন্দলনে সরাসরি কাউখালী উপজেলার বিভিন্ন স্থানে তারা বিএনপি, যুবদল, ছাত্রদল নেতাকর্মীদের সহ ছাত্রদের বাঁধা বিভিন্ন হুমকি দিয়েছে। শুধু তাই নয়, বিগত ১৬ বছরে যত নির্বাচন হয়েছে সব কটিতে তারা কেন্দ্র দখলসহ সাধারণ মানুষকে মারধর করেছেন বলে তারা আজ এলাকা ছাড়া হয়েছেন। তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন আওয়ামীলীগের তো সহ-সভাপতি থেকে শুরু করে অনেকে এলাকাতে আছেন। তাহলে আমরা যদি এলাকা ছাড়তে বাধ্য করে থাকি তাহলে কী করে অন্যরা এলাকাতে আছেন। সত্যিটা হলো ফ্যাসিস্ট সরকারের দোসর' হিসেবে তারা দীর্ঘদিন সমিতিটাকে লুটেপুটে খেয়েছেন। এখন হিসাব দিতে হবে। সদস্যরা হিসাব চাইছে। তাই তারা বিএনপির নেতাদের নামে মিথ্যা বানোয়াট গুজব রটাচ্ছে।

 

 

তাহলে কারা সমিতির টাকা তুলছে প্রতিবেদকের এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, বিএনপির কেউ সমিতির টাকা তুলছে না। এটি কোন রাজনৈতিক সমিতি না। ব্যবসায়ীদের টাকা ব্যবসায়ীরা জানে টাকা কাকে দিচ্ছে। আর এই টাকার জিম্মাদারতো বর্তমান কমিটি।আমি একজন সমিতির সদস্য। এই টাকার ভাগ আমারও তো আছে। তাই আমিও চাই ফ্যাসিস্ট সরকারের দোসরদের থেকে সমিতি উদ্ধার করে একটি আহ্বায়ক কমিটি করার অনুরোধ জানাই প্রশাসনের কাছে।

 

কাউখালী উপজেলা বিএনপির সভাপতি মোঃ জাহাঙ্গীর হোসের বলেন, ফ্যাসিস্ট সরকারের দোসর হিসেবে দীর্ঘ ১৬ বছরে তারা শুধু সমিতিটা না শুধু পুরো কাউখালীটাকে লুটেপুটে খাইছে। আর এখন যখন সব পাপের হিসাব সদস্যরা খুঁজতেছে তখনি এলাকা ছেড়ে পালিয়েছে। এখন বিএনপি নেতাকর্মীদের নিয়ে মিথ্যাচার করছে। এসবের সাথে কোন বিএনপি নেতাকর্মী জড়িত না।যদি কেউ জড়িত থাকে আমি সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিবো।

 

সমিতির সদস্য মোঃ ইব্রাহিম বলেন, আগষ্টের আগে স্বৈরাচারি সরকারের আমলে পেশী শক্তির ব্যবহার করে নির্বাচনে ব্যালট ছিনিয়ে নিয়ে বর্তমান কমিটি সমিতির দায়িত্ব গ্রহন করেন। সারা বাংলাদেশে ছাত্রজনতার বিপ্লবের মাধ্যমে দেশে নতুন স্বাধীনতা অর্জিত হয়। এর ধারাবাহিকতায় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় অত্র সমিতির সম্পদ সদস্যদের অধিকার রক্ষার জন্য পুনরায় নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন কমিটি গঠনের অপেক্ষায় রয়েছি। এছাড়াও বিগত সময়ের দায়িত্ব পালনকালে সমিতিতে কী কী উন্নয়ন হয়েছে সম্পদ অর্জন হয়েছে এর হিসাব দিতে হবে। পাশাপাশি আগষ্টের পর সমিতির নামে যে টাকা তোলা হচ্ছে তার হিসাব দিতে হবে।

 

৫আগষ্টের পর সমিতির হিসাব রাখা দায়িত্বে থাকা মোঃ আব্দুল্ল্যাহ তুহীন বলেন, আমাকে বর্তমান কমিটির সংখ্যাগনিষ্ট সদস্য গন এবং সাধারন সম্পাদক মোঃ জসীম উদ্দীন সমিতির খাতের গাড়ির হিসাব রাখার দায়িত্ব দিয়েছে। গত তিন/চাঁর মাসে যতটাকা সমিতির আয় হয়েছে সব হিসাব আমাদের কাছে আছে। ৭৫০জন সদস্যর টাকার কোন নয় ছয় হবেনা। 

 

কাউখালী উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা রমারানী দাস জানান, কলমপতি কাঠ ব্যবসায়ী সমিতির বর্তমান কমিটিকে যদি ৭৫০ জন যারা সদস্য আছেন। তারা যদি তাদের পদত্যাগ চান এবং যদি ছয় সদস্যের কমিটি থাকে, তাদের মধ্যে চাঁর জনও যদি পদত্যাগ করে অবশ্যই নতুন করে আহ্বায়ক কমিটি বা নির্বাচন দিতে আমাদের কোন সমস্যা নাই। আমরা দ্রুত বিষয়টা নিয়ে আলোচনা করবো। 

 

 

 

এদিকে সাধারন সদস্যরা বলছেন, দ্রুত সময়ের মধ্যে এই কমিটিকে বাতিল করে নতুন একটি কমিটি দিতে হবে। পাশাপাশি বিগত আমলের সম্পদের হিসাব দিতে হবে। পাশাপাশি কাঠব্যবসায়ী অফিস বন্ধ থাকলেও ব্যবসাতো বন্ধ নাই। তাই সেই টাকা কোথায় যায় সেই হিসাব সদস্যদের দিতে হবে।

রাঙামাটি |  আরও খবর
এইমাত্র পাওয়া
আর্কাইভ
সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত, ২০১৭-২০১৮।    Design & developed by: Ribeng IT Solutions