রাঙামাটিতে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা: অনিক চাকমা হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার ৩ লংগদুর শিশু ধর্ষণ মামলার আসামি চট্টগ্রামে গ্রেপ্তার বান্দরবানে দূর্গা পূজা উদযাপন কমিটির সাথে সেনাবাহিনীর মতবিনিময় ১৬ বছর পর লংগদুতে জামায়াতের কর্মী সম্মেলন অনুষ্ঠিত পরিকল্পিত সংঘাত সৃষ্টিকারী পাহাড়ি সন্ত্রাসীদের আইনের আওতায় আনার দাবি পিসিসিপি'র
খাগড়াছড়িতে পেশাদার সাংবাদিকদের অতীত-বর্তমান এবং এমনকি ভবিষ্যত রাজনৈতিক পরিচয় বিবেচনায় নিয়ে কোন প্রকার সম্পৃক্ততা ছাড়াই রাজনৈতিক মামলায় জড়িয়ে দেয়ার একটা অসুস্থ প্রবণতা শুরু হয়েছে। এটার ইতিহাসটা বেশ পুরনো। কিন্তু অতীতের নোংরামিকে পেছনে ফেলে আমাদেরকে সামনেই হাঁটতে হবে। রাজনীতি করা সংবিধান স্বীকৃত গণতান্ত্রিক অধিকার। একজন সাংবাদিক হিশেবে তিনি বা তাঁরা যে মাধ্যমে/ প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন; সেখানে আপনি/ আপনাদের দলের তৎপরতার খবর যাচ্ছে না কী না, তিনি নিরপেক্ষতার সাথে (যদিও দেশে একটি প্রবাদ প্রচলিত আছে ‘এইদেশে পাগল ছাড়া আর কেউ-ই নিরপেক্ষ নন’) পেশাগত দায়িত্ব পালন করছে কী না। সবচেয়ে ভয় এবং আশঙ্কার কথা হলো; যে পুলিশ প্রশাসনকে আমরা সবচেয়ে বেশি উদারতার চোখে দেখি; এখন দেখি তাঁরাও আমাদের প্রতি বিরুপ আচরণ শুরু করেছে। গত মঙ্গলবারের ঘটনায় তো পুলিশের গাফিলতি এবং দায়িত্বহীনতা, গোয়েন্দা নজরদারির ঘাটতি, সাধারণ মানুষের জান-মালের নিরাপত্তাহীনতা দিবালোকের মতো স্পষ্ট হয়ে উঠেছিলো। আমরা কেউ-ই ওসব নিয়ে বিন্দুমাত্র মাথা ঘামাইনি। অথচ সরকারি কর্তব্যকাজে বাধা দিয়েছেন, এমন অজুহাতে পুলিশ বাদী মামলায় সাংবাদিক প্রফুল্ল ভাইকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। এ বিষয়ে গতকাল আমরা বেশ কয়েকজন সদর থানার ওসি সাহেবের সাথে স্ব-শরীরে দেখা করেছি। বিস্তারিত কথা বলেছি। তাঁকে জোর অনুরোধ করেছি। বলেছি, মেহেরবানি করে এ ধরনের অপ-তৎপরতা থেকে বিরত থাকুন। ওনার নাম দ্রুততম সময়ের মধ্যে প্রত্যাহার করুন। এটার মধ্য দিয়ে বাহিনীর মর্যাদা-সুনাম-ঐতিহ্য প্রশ্নবিদ্ধ হবে।
পাহাড়ের সাংবাদিকতায় স্থানীয় উন্নয়ন এবং জনপ্রতিনিধিত্বশীল প্রতিষ্ঠানগুলোর বাইরে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী অসামান্য ভূমিকা রেখে চলেছে। সাংবাদিক প্রতিষ্ঠানগুলো অনেক সময় কিছু না চাইতেই অনেক কিছু পেয়ে যান। অথচ, খাগড়াছড়িতে পুলিশ বিভাগ থেকে আমরা কিছু পেয়েছি বলে বা সাংবাদিক সংগঠন-প্রতিষ্ঠানগুলো কিছু পেয়েছে বলে; দূর অতীতেও মনে পড়ে না।
ফিরে আসা যাক, সাংবাদিকতার রাজনৈতিকীকরণ প্রসংগে। আমরা দেখেছি, অতীতে অনেকে পদে না থেকেও সক্রিয় নেতার চেয়ে বেশিমাত্রায় রাজনৈতিক পন্ডিত হয়ে উঠেছিলেন। এই যে, ওয়াদুদ সাহেব যখন পদে-দায়িত্বে এবং প্রভাব-প্রতিপত্তি নিয়ে ক্ষমতায় ছিলেন; তখন তাঁর চারপাশে যে কয়জন সাংবাদিক ছিলো; তাঁরা বেশিরভাগই বেনিফিশারি। প্রফুল্ল ভাই কলাবাগানের বাসিন্দা। তিনি এবং তাঁর পরিবারের সাথে ভূঁইয়া সাহেবের দীর্ঘদিনের পারিবারিক-সামাজিক এবং কিছুটা রাজনৈতিক সম্পর্ক থাকাটাই স্বাভাবিক। অথচ যাঁদের সাথে কিছুই ছিলো না; তাঁরা ভূঁইয়া সাহেবের ক্ষমতাকালের পুরোটা সময় সুযোগ-হাতিয়ে; ইলেভেন আওয়ারে ভালো মানুষ হয়ে উঠলেন। প্রতিবাদী-সাহসী-সৎ- জেদী- মেধাবী হয়ে উঠলেন। আবার এমন ঘটনাও ঘটেছে, আমি আর আবু দাউদ; পরিবেশ আন্দোলনের ইস্যুতে পাহাড়কাটার বিরুদ্ধে স্বোচ্ছার ছিলাম বলেই একটি চাঁদাবাজি মামলার শিকার হয়েছিলাম।
অথচ বাকীরা কখনো তাঁদের এই লেজুড়বৃত্তি- অপসাংবাদিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেনি। আমি এগুলো বলতে চাইনি। চাই না। যখন দেখি ঘৃণাহীনভাবে এইসব চিহ্নিত অপর-রা অহেতুক অন্যের দুর্বলতা খুঁজে বেড়ায়। আর সমোলোচনা করে নিজেরটা না দেখেই। আমি নে করেছিলাম, প্রফুল্ল ভাইয়ের মামলা ইস্যুতে আমাদের অনেক-ই স্বোচ্ছার হবেন। কিন্তু তেমন কাউকে দেখলাম না। ভূঁইয়া সাহেবের সংবাদ সম্মলেনেও আমি আহত সাংবাদিক নুরুল আজম ভাইয়ের প্রশ্নে কথা বলেছি। প্রশ্ন তিুলেছি। অথচ এটার জন্যও আমাকে সমালোচনা শুনতে হয়, সইতে হয়। কিন্তু এটাও সত্য যে, অতীতের মতো এখনও অনেক সহ-সাংবাদিককে রাজনৈতিক দলের প্রোগ্রামে লাঠি হাতে দেখা যায়। পদ-পদবীতে থেকেও ঢাকা চট্টগ্রামে অনেক সিনিয়র সাংবাদিক নেতাকে নিরপেক্ষতার সাথে দায়িত্ব পালন করতে দেখা যায়। এখানেও এটা সম্ভব।
আচ্ছা, আমাদের কেউ অসুস্থ হলেন, আমরা কী দেখতে যাবো না! আমার মনে হয় আমাদের অনেক সহকর্মীই গুরুতর আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন নুরুল আজম ভাইকে দেখতে যাননি। হয়তো অনেকে গিয়েছেন। আমাদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে যাবে। সাংবাদিকতা একটি মৌলিক এবং স্বতন্ত্র মর্যাদাপূর্ণ পেশা। এটি কোন স্পাইগিরি বা দ্বি-চারিতার পেশা নয়। আমাদের অতীত থেকে শিক্ষা নিতে হবে। এক শহরে সাংবাদিকদের পাঁচ-সাতটি সাংগঠনের জন্ম হয়েছে। জোর করে অবদমন করে; এগুলো বন্ধ করা যাবে না। এবং জোর করে কাউকে থামিয়ে দেয়াও সম্ভব নয়। কোন একটা ঘটনা ঘটলে আমরা লোক দেখানো সম্মিলিত প্রোগ্রাম করি। এরপর যার পাছায় যে যেভাবে পারি গুতা মারি। একজন সাংবাদিক ব্যবসা করবেন, এটি তাঁর নিজস্ব এখতিয়ার। একজন সাংবাদিক পেশা এবং কমিউনিটির সম্মান নষ্ট করছে কী না, সেটিই বিবেচ্য হওয়া উচিত। অনেক অনুচিত কথা বলে ফেলেছি। কেউ ব্যক্তিগতভাবে নেবেন না, প্লিজ। আমিও একটি ছোট সংগঠনের ছোট পদে আছি। হয়তো কাল থাকবো না। কিন্তু দায়িত্বের খাতিরে এগুলো ভাবতে হচ্ছে। বলতে হচ্ছে। ভুল-ত্রুটি মার্জনীয়।
প্রদীপ চৌধুরী: সভাপতি- খাগড়াছড়ি সাংবাদিক ইউনিয়ন (কেইউজে/ রেজি: নং চট্ট- ২৮০৮)।