বৃহস্পতিবার | ২১ নভেম্বর, ২০২৪

বান্দরবানের পাহাড়ে এলাচ চাষ, সম্প্রসারণে কাজ করছে কৃষি বিভাগ

প্রকাশঃ ০৬ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ০৪:১১:১৯ | আপডেটঃ ২১ নভেম্বর, ২০২৪ ০২:১৩:৩৫
সিএইচটি টুডে ডট কম, বান্দরবান। মসলা জাতীয় ফসল এলাচ ফলটি আগামীতে আর বিদেশ থেকে আমদানি করতে হবে না, দেশের মাটিতে উৎপাদিত এলাচ নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রফতানি করা সম্ভব হবে আর এতে অনেক বেকার মানুষের যেমন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে তেমনি দেশেও আসবে বৈদেশিক মুদ্রা। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশের নাম থাকবে এলাচ রফতানির তালিকায়, এমনটাই আশা করছে পার্বত্য জেলা বান্দরবানে প্রথমবারের মত এলাচ চাষ করা এক স্কুল শিক্ষক মেনয়াং ম্রো।

বান্দরবানের চিম্বুক পাহাড়ের ওয়াইজংশন এলাকার দেওয়াই হেডম্যান পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মেনয়াং ম্রো তার পতিত পাহাড়ের পাদদেশে প্রথমবারের মত শুরু করেছে এলাচ চাষ। তিন পার্বত্য জেলায় মধ্যে প্রথমবারের মত ২০১৮সালে যশোরের বেনাপোল এলাকার এক চাষীর কাছ থেকে ১২০টি এলাচ চারা সংগ্রহ করে বান্দরবানের পাহাড়ে শুরু করেন এলাচ চাষ। আমদানি নির্ভরতা কমানোর লক্ষ্য নিয়ে পাহাড়ের বুকে সবুজ রংয়ের এলাচ চাষ শুরু করেন তিনি। অনলাইন থেকে এলাচ চাষের পদ্ধতি সর্ম্পকে ধারনা নিয়ে ১একর জমিতে এলাচের আবাদে খুশি স্কুল শিক্ষক মেনয়াং ম্রো।

বান্দরবানের এলাচ চাষী মেনয়াং ম্রো বলেন, ভারত, চীন ও মিয়ানমারসহ বিশ্বের অন্যান্য দেশের ন্যায় বাংলাদেশের পার্বত্য অঞ্চলের উর্বর জমি এলাচ চাষে জন্য বেশ উপযোগী, কিন্তু এতদিন আমরা এই চাষে আগ্রহী না হওয়ায় পিছিয়ে ছিলাম। তিনি আরো বলেন, আমি অনেক দিন যাবৎ ইউটিউবে বিভিন্ন ভিডিও দেখার পর হঠাৎ সন্ধান পেলাম যশোরের শাহাজান নামের এক ব্যক্তি বাংলাদেশে এলাচ চাষ শুরু করেছে, তার সাথে যোগাযোগ করে ২০১৮সালে আমি তার কাছ থেকে ১২০টি এলাচের চারা সংগ্রহ করে বান্দরবানে এনে আমার চিম্বুক পাহাড়ের ওয়াইজংশন এলাকার পতিত জমিতে এলাচ চারা রোপন করি, পরে সেই চারা থেকে বর্তমানে আমার বাগানে প্রায় কয়েক হাজার চারা উৎপাদন হয়েছে।

 তিনি আরো বলেন, এলাচা চাষের জন্য আলাদা কোন জমির প্রয়োজন হয়না। এটি ছায়া যুক্ত স্থানে যেকোন গাছের ছায়ার নিচে সেতসেতে স্থানে জন্মাতে পারে। বর্তমানে আমি নিজে বেশ কিছু এলাচের চারা করছি যা বান্দরবানের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে দিবো। আমি যশোর থেকে প্রতি পিচ চারা ৩শত টাকা করে ক্রয় করেছিলাম এবং পরিবহণ খরচসহ মোট ৩৫০ টাকা করে গড়ে খরচ পড়েছিল। বর্তমানে আমিও আমার পাহাড়ে এলাচের চারা উৎপাদন করছি এবং আমি আমার উৎপাদিত চারা এলাকায় সম্প্রসারণের জন্য  ৩৫০ টাকা করে বিক্রয় করছি।

এলাচ চাষী মেনয়াং ম্রো বলেন, যেদিন আমার অনেক চারা উৎপাদিত হবে সেদিন বিনামূল্যে আমি এলাচের চারা তিন পার্বত্য জেলায় ছড়িয়ে দিব, আমি আশা করছি তিন পার্বত্য জেলায় এলাচ চাষ সম্প্রসারণ হলে একদিন বাংলাদেশ থেকে এলাচ বিদেশে রপ্তানী করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব হবে।

মেনয়াং ম্রো বলেন, ভারত, চীন ও মিয়ানমারসহ বিশ্বের অন্যান্য দেশের ন্যায় বাংলাদেশের বান্দরবানের পাহাড়ের ভূমিগুলো এলাচ চাষের জন্য বেশ উপযোগী , আর একটি এলাচ গাছ কমপক্ষে ৩০বছর পর্যন্ত ফল দেয়। এলাচ চাষের সুবিধা হচ্ছে এ চাষের জন্য আলাদা কোন জমি দরকার হয়না, যে কোনো ফলের বাগানে গাছের ছায়ায় এই এলাচ চাষ সম্ভব।

এদিকে  মেনয়াং ম্রো এর এলাচ চাষ দেখে আশেপাশের চাষীরাও আগ্রহী হচ্ছে এই এলাচ চাষে।

স্থানীয় বাসিন্দা ক্রতাং ম্রো জানায়, আমরা বিশেষ করে পাহাড়ে পেঁপে,কলা,আদা,হলুদ,আম, মিষ্টি কুমড়া চাষ করে থাকি । কিন্তু আমাদের পাড়ার স্কুল শিক্ষক মেনয়াং ম্রো তার বাগারে বিভিন্ন চাষের পাশাপাশি দামী মসলা এলাচের চাষ করেছে। বর্তমানে তার এলাচ গাছে বেশ ফলনও এসেছে, আমরা ও তার  দেখাদেখি আগামীতে এলাচ চাষ শুরু করবো।

স্থানীয় চাষী ফ্লোগান ম্রো জানান, মেনয়াং ম্রোর এলাচ চাষ দেখে আমি বেশ আগ্রহী হয়েছি, আমি তার কাছ থেকে চারাও সংগ্রহ করতে এসেছি। এবছর থেকে আমিও বেশ কিছু এলাচের চারা রোপন করবো। তিনি আরো বলেন,পাহাড়ে এলাচ চাষ হওয়ায় কিছু বেকার যুবকের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে, পাশাপাশি প্রতিদিন জেলার  বিভিন্ন জায়গা থেকে চাষীরা আসছে  এই এলাচ চাষ শিখতে।

বান্দরবান সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো.ওমর ফারুক বলেন,পার্বত্য এলাকায় এলাচ চাষে সফলতা পেয়েছে স্কুল শিক্ষক মেনয়াং ম্রো, প্রাথমিকভাবে ১শ ২০টি চারা নিয়ে যাত্রা শুরু করলেও তার বাগানে এখন হাজারের মত এলাচের চারা রয়েছে।

কৃষি কর্মকর্তা মো.ওমর ফারুক বলেন, রোপনের দু বছর পর থেকে ফলন আসে তবে তা অল্প, তবে এলাচ গাছে রোপনের ৫বছর পর থেকে ভালো ফলন পাওয়া যায়। প্রতিগাছে গাছের গোড়ায় মাটি সংলগ্ন হয়ে গুচ্ছ আকারে ফুল গজায় লতার মত, সেই ফুলগুলো থেকে ফল হয় গুচ্ছ আকারে। প্রতিটি গাছের গোড়া থেকেই ফলন হয়। প্রতি গুচ্ছে ৯০০-১০০০ গ্রাম পর্যন্ত ফলন হয়। সাধারণত ফুল আসা শুরু হয় মে মাস হতে এবং ফল পরিপক্ক হয় সেপ্টেম্বর অক্টোবর মাসে আর তখন বাগান থেকে কাঁচা এলাচ সংগ্রহ করে রোদে শুকাতে হয়। বেশি উৎপাদন হলে ড্রায়ার মেশিনে শুকাতে হয়, না শুকিয়ে ঘরে রাখলে পচন ধরবে। ফল পরিপক্ক হলে দেখতে কিছুটা সবুজের উপর লালচে হবে।

কৃষি কর্মকর্তা আরো জানান, একটি গাছ ২৫ থেকে ৩০বছর পর্যন্ত ফলন দেয়। সবচেয়ে লক্ষণীয় বিষয় হলো অতিরিক্ত জমির প্রয়োজন হয় না, ফলজ বাগানে ছায়াযুক্ত স্থানে এলাচ ভালো জন্মে।

কৃষি কর্মকর্তা মো.ওমর ফারুক আরো বলেন, কৃষির উন্নয়নে এই ধরণের চাষীদের সার্বিক সহযোগিতার পাশাপাশি প্রশিক্ষণের ব্যবস্থার জন্য আমরা সচেষ্ট রয়েছি। তিনি আরো বলেন, সরকারিভাবে পার্বত্য এলাকার কৃষকদের আরো বিভিন্ন সহায়তা প্রদান করা গেলে বাণিজ্যিকভাবে এলাচ চাষ আরো সম্প্রসারণ করে পাহাড়ের এলাচের ঘাটতি মিটিয়ে দেশের নানান প্রান্তে এই এলাচ রপ্তানি করা সম্ভব হবে।


অর্থনীতি |  আরও খবর
এইমাত্র পাওয়া
আর্কাইভ
সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত, ২০১৭-২০১৮।    Design & developed by: Ribeng IT Solutions