মঙ্গলবার | ০৩ ডিসেম্বর, ২০২৪

করোনা যুদ্ধে সংবাদ কর্মীদের নিরাপত্তা দিবে কে? : এম কামাল উদ্দিন

প্রকাশঃ ২৮ এপ্রিল, ২০২০ ০৫:২২:১৯ | আপডেটঃ ০৩ ডিসেম্বর, ২০২৪ ০১:০৮:০১
কোভিড-১৯ করোনা ভাইরাসের কারনে গোটা পৃথিবী এখন নিথর হয়ে পড়েছে। সারা পৃথিবী এখন তথাকথিত লকডাউন ও সাটডাউনের মধ্যে আছে। মরণঘাতি করোনা ভাইরাস মহামারি আকার ধারন করছে আমাদের বাংলাদেশেও। ভাইরাসটি দিন দিন সারা পৃথিবীতে ভয়াল রুপ ধারণ করছে। বাংলাদেশসহ সারা পৃথিবীতে হু-হু করে বেড়ে যাচ্ছে আক্রান্তের সংখ্যা। প্রতিদিন মৃত্যুর মিছিলে নতুন করে যোগ দিচ্ছে অনেকেই।

বর্তমানে সব পেশার মানুষই ঘরে থাকছেন। কিন্তু কিছু পেশার মানুষ আছে যারা কখনো ছুটি পায় না, আবার যাদের কখনোই কাজ শেষ হয়না।
বর্তমান প্রেক্ষাপটে দেশ-বিদেশে করোনা যুদ্ধে খুব কাছ থেকে প্রথমেই লড়াই করছে ডাক্তার, নার্স, আয়া,ওয়ার্ড বয় ও প্রশাসনের লোকেরা। এরা ছাড়াও সংবাদপত্র কর্মীরা কাজ করে যাচ্ছে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সে বিষয়ে কয়জনে কথা বলছেন? সংবাদ না হলে এ যুগে সারা পৃথিবী অন্ধকার,আমাদের পেটের ভাত হজম হয় না। সংবাদ না হলে আমাদের সকালটা শুরু হয় না। কিন্তু আমরা সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিয়ে কতটা ভাবছি? ইতি মধ্যেও দেশে বিদেশে অনেক ডাক্তারা আক্রান্ত হয়েছে।কয়েকজন মারাও গিয়েছেন। দেশে সংবাদকর্মীদের মধ্যে অনেকে আক্রান্ত হয়েছেন। সে গুলো নিয়ে কথা বলতে হবে। সংবাদকর্মীদের জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।

সরকার সকল খ্যাতেই প্রণোদনার ব্যবস্থা করেছে,  এই প্রণোদনা সংবাদ মাধ্যমেও যাতে করে আসে সেই বিষয়টি খতিয়ে দেখতে হবে খোদ সরকারকে। সংবাদকর্মীদের জীবনের ঝুকি নিয়ে সংবাদ সংগ্রহ করতে প্রাণপণ চেষ্টা করে যাচ্ছেন। তারা আসলে কতটা নিরাপদ থাকছে? তারা যাদের সাথে মিশছে. যে সব এলাকায় যাচ্ছে,সে সব জায়গায় সংক্রমণ থাকতে পারে। এর মাধ্যমে তাদেরও করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ভয় থাকে। যদি সম্ভব হয় সংবাদ সংগ্রহে যারা অন্তত মাঠ পর্যায়ে কাজ করছে তাদেরকে পিপিই প্রদান করা যায় কিনা এটা ভেবে দেখা উচিৎ? আমাদেরতো সংবাদ ছাড়া চলবে না। মানুষের জন্যই তো  নিয়ম! মানুষ না বাঁচলে নিয়ম দিয়ে কি হবে? তাহলে সংবাদকর্মীদের নিরাপত্তা নিয়ে গভীর ভাবে ভাবতে হবে।

সারা দেশে সব অফিস আদালত বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারনে এর প্রভাব পড়েছে সংবাদ মাধ্যমেও। সকল মিডিয়াই তাদের কলেবর সংক্ষিপ্ত করে ফেলেছে। অনেক পত্রিকা শুধু অনলাইনেই খবর প্রকাশ করছে,অনেকেই তাদের পাতা কমিয়ে এনেছে,কেউ কেউ বিভিন্ন ফিচার পাতাগুলো বাদ দিয়ে দিয়েছে। এ ক্ষেত্রে অনেকেই এখন কাজের বাহিরে চলে গেছে। যদি সংবাদকর্মীদের কাজ না থাকে আর এই অবস্থা যদি চলমান থাকে তাহলে এরা অনেকেই চাকরিহারা হতে পারে। সকল প্রতিষ্ঠান কিন্তু সংবাদকর্মীদের এভাবে বেতন দিতে পারবে না।পত্রিকাগুলোর বিজ্ঞাপন বন্ধ হয়ে গেছে,বিভিন্ন উপার্জনের রাস্তা বন্ধ হয়ে গেছে,টেলিভিশনের ক্ষেত্রেও একই অবস্থা। তারা সংবাদকর্মীদের ঠিকমত বেতন দিতে পারবে না অনেকেই।

এক্ষেত্রে সংবাদকর্মীরা যাতে বৈষম্যের শিকার না হয় সেটা যথাযথ কর্তৃপক্ষের নজরে আসতে হবে। সাংবাদিকদের যে সকল সংগঠন রয়েছে তারা এসব নিয়ে কথা বলতে হবে। সরকারের কাছে সাহায্য সহযোগিতা চাইতে হবে।অবশ্যই শুধু সংবাদকর্মীরাই যে বিপদে আছে তা কিন্তু নয়।সংবাদ মাধ্যমের মালিকেরাও ঝামেলায় পড়েছে। এই মহামারিতে অনেকেই বাসায় হকার আসা বন্ধ করায় পত্রিকা বিক্রি করা বন্ধ হয়ে গেছে। করোনা মহামারি শুরু হওয়ার পর হতে এ পর্যন্ত ব্যবসা বাণিজ্যের অবস্থা ভাল না হওয়ায় বিঞ্জাপন দিচ্ছে না কেউ। এই যদি হয় অবস্থা তাহলে সাহায্যের প্রয়োজন পুরো সংবাদ মাধ্যমেরই।

এই মহামারিতে কাজ করায় শুধু যে করোনার ঝুঁকি তা অবশ্য নয়। সাংবাদিকেরা এখন নানাবিধ ঝুঁকির মাধ্যমে রয়েছে। জেলা উপজেলা ও ঢাকা চট্টগ্রাম পর্যায়ে ত্রাণ নিয়ে সংবদ প্রকাশ করার জন্য সাংবাদিকদের হুমকি-ধমকি ও হামলার ঘটনা ঘটেছে। দেশে মানুষের আসল চিত্রটা তুলে ধরাই সাংবাদিকের প্রকৃত কাজ। কিন্তু সত্য সংবাদ প্রকাশ করতে গিয়ে যদি নিজেকেই ক্ষতির সম্মূখিন হতে হয় তাহলে তো অনেক বড় সমস্যা। অবশ্য এই সমস্যা সংবাদকর্মীদের সব সময়ই থাকে।

কিছু দিন আগে ত্রাণের নিউজ করতে গিয়ে এক সংবাদকর্মীকে রক্তপাত ঘটায় চাল চোরেরা। আবার কুড়িগ্রামের ডিসির ঘটনাই দেখা যাক। একজন সংবাদকর্মী সংবাদ প্রকাশ করার কারনে তাকে কী নির্যাতনটা করা হলো! এগুলো নিয়ে কথা বলার কেউ নেই। সংবাদকর্মীদের পাশে কেউ দাঁড়ায় না! আর সংবাদকর্মীদের দমন করতে ৫৭ ধারা নামের এক ঝামেলা তো রয়েই গেছে। সংবাদকর্মীদের কাজ করে কোথায় শান্তিতে থাকতে পারে না। যেদিকে যায় সেদিকেই তাদের বিপদ। সংবাদকর্মীদের অবস্থা হচ্ছে ভাসুরের নাম কেউ ধরে না।

সাংবাদিকতা একটি মহান পেশা। তবে সব জায়গায়ই কিছু খারাপ থাকবেই। ভাল খারাপ মিলেই আমাদের এই সৃষ্টির পৃথিবী। সবাই একদম ভাল হয়ে যাবে না। তাহলে পৃথিবীতে কোন সমস্যাই থাকতো না। তাই সাংবাদিকদের মধ্যেও খারাপ মানুষ রয়েছে। কিন্তু  আমাদেরকে খুশি করার জন্য,আমাদেরকে সংবাদ পৌছে দেওয়ার জন্য সর্বদা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে,রোদ,ঝড়-বৃষ্টি মাথায় নিয়ে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। এই মহামারি কোভিড-১৯করোনা যুদ্ধে আমাদের সাংবাদিকরাও অগ্রগামী যোদ্ধা। তাদের নিরাপত্তা,আর্থিক নিশ্চয়তাসহ সকল বিষয় নিয়ে অবশ্যই রাষ্ট্রকে ভাবতে হবে। আমরা বরাবর দেখে আসছি রাষ্ট্রের পক্ষ হতে আর্থিক সুযোগ সুবিধা আসলে ওই সব অর্থ মফস্বলের সংবাদকর্মীদের কপালে জুটেনি। এসব বিষয়েও রাষ্ট্রকে ভেবে দেখতে হবে।

এম কামাল উদ্দিন, সংবাদকর্মী রাঙামাটি।

মুক্তমত |  আরও খবর
এইমাত্র পাওয়া
আর্কাইভ
সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত, ২০১৭-২০১৮।    Design & developed by: Ribeng IT Solutions