প্রকাশঃ ০৮ জানুয়ারী, ২০১৯ ০৬:৫১:২১
| আপডেটঃ ২১ নভেম্বর, ২০২৪ ০২:৫০:২১
সিএইচটি টুডে ডট কম, বান্দরবান। বান্দরবানে এবার শীমের ভালো ফলন হয়েছে। এখন জেলার বিভিন্ন পাহাড়ের ঢালু আর বিস্তীর্ণ জমিতে কৃষকেরা চাষ করেছে শীম। কিন্তুু কৃষি পণ্যের দাম বৃদ্ধি আর মধ্যসত্বভোগীদের দৌরাত্ম্যে ন্যায্য দাম থেকে বঞ্চিত হচ্ছে অনেক কৃষক।
জেলা সদরের রেইচা,ক্যামলং,লাঙ্গিপাড়া,মাঝের পাড়া,সুয়ালকসহ বিভিন্ন স্থানে এখন কৃষকেরা ব্যস্ত সময় পার করছে জমি থেকে শীম উত্তোলনে। এবছর বান্দরবানে দেশী ও সীতাকুন্ডের শীম বেশি আবাদ হয়েছে ।
কৃষকেরা জানায়, বাংলা ভাদ্র মাস থেকে শীম চাষের জন্য জমি প্রস্তুত করেন চাষীরা। জমিতে বীজ বপন করা হয় কার্তিকে। এর ২১ থেকে ২৫দিনের মধ্যেই গাছ লতায় লতায় ছেয়ে যায় চারদিক। এসময় শীম গাছের বেগুনী রঙের ফুলে ফুলে অপরূপ সৌন্দয্য দৃষ্টি কেড়ে নেয় সকলের। আর শীমের উৎপাদন দেখে কৃষকেরা খুশি হয় অনেকটা। প্রতিবারের মত এবারে ও শীমের উৎপাদন ভালো হওয়ায় খুশি শীম চাষিরা।
বান্দরবানের রেইচা এলাকার কৃষক মো:আবুল বশর জানান, প্রতি বছরের মত এবারে ও আমার জমিতে ভালো শীম উৎপাদন হয়েছে । শীম দেখে আমার মন জুড়ে যায়। গত বছর ভালো উৎপাদন হয়েছিল ভালো দাম পেলাম কিন্তুু এবার ভালো উৎপাদন হলে ও দাম কম। প্রতি মন বিক্রি করতে হচ্ছে মাত্র ৬০০ টাকায় ।
এদিকে শীমের ভালো উৎপাদন হলে ও দিন দিন কৃষিপণ্যের দাম বৃদ্ধি আর মধ্যসত্বভোগীদের দৌরাত্ম্যে ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছে অনেক কৃষক। কৃষকেরা জানায়, লাভের আশায় ব্যাংক ও মহাজন থেকে ঋন নিয়ে শীম রোপন করলে ও শীমের বাজারদর ঠিকমত না পাওয়া আর দিন দিন কৃষিপণ্যের মুল্য বৃদ্ধি হওয়ায় ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে কৃষকেরা।
বান্দরবানের রেইচা এলাকার কৃষক আবু মং মার্মা জানান, গত বছর শীমে মন প্রতি দাম ছিল ১২০০ টাকা ,আর এ বছর মাত্র ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা। আমরা শীম চাষ করতে যে টাকা খরচ করেছি তা উঠে আসবে না। কৃষক আবু মং মার্মা আরো জানান, প্রতি বছর দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আমাদের এলাকায় পাইকারী ব্যবসায়ীরা ছুটে আসতো ,আর ন্যায্যদামে শীম ক্রয় করতো । কিন্তুু এবার পাইকারী শীম ক্রেতারা একটি সিন্ডিকেট তৈরি করেছে। এই সিন্ডিকেটে ৩০-৩৫ জন পাইকারী ব্যাবসায়ী একত্রিত হয়েছে এবং কৌশলে কম দামে শীম ক্রয় করে বেশি দামে তারা দেশের নানান প্রান্তে সরবরাহ করছে ।
বান্দরবানের সুয়ালক এলাকার শীম চাষী মো:সেলোমান জানান, আমরা মহাজন ও ব্যাংক থেকে লোন নিয়ে শীম চাষ করেছি,কিšু‘ শীম চাষ করে শীম ভালো উৎপাদন হলে ও দাম পাচ্ছি। দাম না পাওয়ায় আমরা শীম ও জমি থেকে উঠাতে পারছি না।
কৃষি বিভাগ জানায় ,গত বছরের চেয়ে এবছর সীম উৎপাদন বেড়েছে অনেকটা। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ৫৫৫ হেক্টর জমিতে শীমের আবাদের বিপরীতে উৎপাদন হয়েছিল ৭ হাজার ৯শত ৫৪ মেট্টিকটন। এবার ৬০০ হেক্টর জমিতে শীমের আবাদ হয়েছে আর এর বিপরীতে প্রায় ৯ হাজার মেট্টিকটন শীম উৎপাদন হবে বলে আশা করছে কৃষি বিভাগ। কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা জানান,বান্দরবানের মাটি আবহাওয়া ও জলবায়ু শীম চাষের জন্য উপযোগী। আর দিন দিন কৃষকেরা শীম চাষ করে লাভবান হচ্ছে আর এতে নানান সহায়তা দিচ্ছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ।
বান্দরবান কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো:আলতাফ হোসেন বলেন, বান্দরবানে প্রচুর শীম উৎপাদন হয় আর বিক্রি করে দাম ও ভালো পায় কৃষক। প্রতি বছরই জেলার লামা,আলীকদম ও নাইক্ষংছড়িসহ বিভিন্ন স্থানে শীম উৎপাদন করে কৃষক। উপ-পরিচালক মো:আলতাফ হোসেন আরো বলেন, অল্প পূজিঁতে অধিক লাভ বলে বান্দরবানের কৃষক দিন দিন এই শীম চাষে ঝুঁকছে। তবে এবছর পরিস্থিতি কিছুটা ভিন্ন। কিছু পাইকারী অসাধু ব্যাবসায়ী একত্রিত হয়েছে এবং কৌশলে কম দামে কৃষকের কাছ থেকে শীম ক্রয় করে বেশি দামে তারা দেশের নানান প্রান্তে সরবরাহ করছে ,তবে আমরা কৃষি বিভাগ ও বসে নেই। আমরা কৃষকদের কল্যাণে সর্বাত্মক কাজ করে যাচ্ছি । বিভিন্ন এলাকায় আমরা কৃষি বিভাগের আওতায় সমিতি করে দিয়েছি ,এবং সরকারি বিভিন্ন সুযোগ সুবিধার আওতায় এনে কৃষকদের জীবনমানের উন্নয়নের জন্য কাজ করে যাচ্ছি ।
কৃষকেরা জানান শীম চাষে সহজ শর্তে ব্যাংক থেকে ঋন প্রদান, কৃষি পন্যের দাম স্থিতিশীল রাখা ও মধ্যসত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য কমানো হলে অনেক চাষীই এই শীম উৎপাদনে নেমে পড়বে, ফলে একদিকে খাদ্যাভাব লাঘব হবে, অন্যদিকে খাদ্যে স¦য়ংসম্পূর্ণ হয়ে ওঠবে দেশ ।