রবিবার | ২২ ডিসেম্বর, ২০২৪

বন্যায় খাগড়াছড়ি-রাঙামাটির কৃষিতে ১১১ কোটি টাকার অধিক ক্ষতি

প্রকাশঃ ০৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১০:১১:১৮ | আপডেটঃ ২১ ডিসেম্বর, ২০২৪ ০৪:৩৪:৪২
সিএইচটি টুডে ডট কম, রাঙামাটি। দেশে স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যার প্রভাব পড়েছে পাহাড়েও। বন্যার পরিস্থিতির কারণে পার্বত্য চট্টগ্রামের রাঙামাটি ও খাগড়াছড়ি জেলায় কৃষিতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। দুই জেলার কয়েকটি উপজেলা বন্যা কবলিত হয়ে ৫ হাজার ২০৪ হেক্টর কৃষি জমি তলিয়ে ২৪ হাজার ৭৩৫ মেট্রিক টন ফসল নষ্ট হয়েছে। টাকায় ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ কোটি ১১ লাখ ৬৮ হাজার টাকা। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের সংখ্যা সাড়ে ২৩ হাজারের অধিক। কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, তিন পার্বত্য জেলার মধ্যে বান্দরবানে বন্যা পরিস্থিতি দেখা না হওয়ায় এ জেলায় কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। তবে রাঙামাটি ও খাগড়াছড়ির জেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি কৃষির ক্ষতি হয়েছে খাগড়াছড়িতে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের জন্য বরাদ্দকৃত প্রণোদনার পরিমাণ আরও বাড়ানো প্রয়োজন বলে মনে করছেন কৃষিবিদরা।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর (ডিএই) রাঙামাটি (পার্বত্য চট্টগ্রাম) অঞ্চলের তথ্য মতে, রাঙামাটি ও খাগড়াছড়ি জেলার ৯০ হাজার ৮০১ হেক্টর কৃষি জমির মধ্যে ১৪ হাজার ৮৪৫ হেক্টর বন্যা ও অতিবৃষ্টিপাতে আক্রান্ত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত জমির মধ্যে ৩ হাজার ৮৪৮ হেক্টর সম্পূর্ণ এবং ৫ হাজার ৪৮৩ হেক্টর কৃষি জমির আংশিক হয়েছে। আংশিক ক্ষতি সম্পূর্ণ ক্ষতিতে রূপান্তরের ফলে মোট ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ২০৪ হেক্টর। এর বিপরীতে দুই জেলায় ২৪ হাজার ৭৩৫ মেট্রিক টন ফসল নষ্ট হয়েছে। টাকায় ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ কোটি ১১ লাখ ৬৮ হাজার টাকা। আর ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের সংখ্যা ২৩ হাজার ৫৬৫ জন। 

জেলা ভিত্তিক হিসাব বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, রাঙামাটি জেলায় ২ হাজার ১০৩ হেক্টর কৃষি জমির ফসল পানিতে তলিয়ে মোট ৭ হাজার ৮১৯ মেট্রিক টন ফসল নষ্ট হয়েছে। ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৪৫ কোটি টাকা। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের সংখ্যা ১০ হাজার ২৩৫ জন। অন্যদিকে খাগড়াছড়ি জেলায় ৩ হাজার ১০১ হেক্টর কৃষি জমি পানি তলিয়ে গিয়ে ১৬ হাজার ৯১৬ মেট্রিক টন ফসল নষ্ট হয়েছে। ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৬৬ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের সংখ্যা ১৩ হাজার ৩৩০ জন। রাঙামাটি ও খাগড়াছড়ি জেলায় ক্ষতিগ্রস্ত ফসলের মধ্যে রয়েছে আউশ, আমন, গ্রীষ্মকালীন শাক-সবজি, আদা, হলুদ, আখ, কচুমুখী ও ফলবাগান প্রভৃতি। সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে আমন ও আউশ আবাদের। দুই উপজেলায় ৩ হাজার ৪৩৪ হেক্টর আমন ও ৮৪১ হেক্টর আউশ ধানক্ষেত, ৭৬০ হেক্টর গ্রীষ্মকালীন শাক-সবজি, ৫২ হেক্টর আদা ও ৩২ হেক্টর হলুদ বন্যা ও অতিবৃষ্টির পানিতে তলিয়েছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর (ডিএই) খাগড়াছড়ি জেলা কার্যালয়ের উপপরিচালক বাসিরুল আলম বলেন, ‘জেলায় ১৩ হাজারের অধিক কৃষকর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন বন্যার কারণে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে দীঘিনালা এবং এরপর মাটিরাঙ্গা উপজেলায়। ইতোমধ্যে ২ মেট্রিক টন বীজধান প্রনোদনার আওতায় বরাদ্দ হয়েছে। আমরা চাইছি এটা আরও বাড়াতে। মন্ত্রণালয়ে চাহিদা দেয়া হয়েছে।’ ডিএই রাঙামাটির উপপরিচালক মো. মনিরুজ্জামান বলেন, ‘রাঙামাটি জেলায় সবচেয়ে বেশি ক্ষয়ক্ষতির হয়েছে বাঘাইছড়িতে। লংগদুতে বাঘাইছড়ির অর্ধেক পরিমাণ ফসলের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। অন্যান্য উপজেলায় ক্ষতিসহ মোট আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৪৫ কোটি টাকার মতোন। আমরা চূড়ান্ত প্রতিবেদন হিসেবে মন্ত্রণালয়ে পাঠালেও ক্ষতির পরিমাণ এর চেয়ে কম বেশি হতে পারে।’

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর (ডিএই) রাঙামাটি অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক কৃষিবিদ তপন কুমার পাল বলেন, ‘রাঙামাটি ও খাগড়াছড়ি জেলায় কয়েকটি উপজেলা বন্যা কবলিত হয়ে ১১১ কোটি টাকার পরিমাণ আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের জন্য কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে প্রণোদনা দেওয়ার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। কৃষকদের ধানবীজসহ অন্যান্য বীজ দেয়া হবে। ইতোমধ্যে খাগড়াছড়ি জেলায় বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের ২ মেট্রিক টন বীজধান বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এছাড়া আসন্ন রবি মৌসুমে রাঙামাটি ও খাগড়াছড়ি জেলার কৃষকদের শীতকালীন শাক-সবজি ও বোরোর বীজধান দেয়া হবে। বর্তমানে রাঙামাটিতে আমনের বীজ রোপনের সুযোগ না থাকায় কেবল খাগড়াছড়ি ২ মেট্রিক টন বীজধান বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।’

রাঙামাটি |  আরও খবর
এইমাত্র পাওয়া
আর্কাইভ
সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত, ২০১৭-২০১৮।    Design & developed by: Ribeng IT Solutions