মঙ্গলবার | ১৯ মার্চ, ২০২৪
বান্দরবানে

পাহাড়ের অর্থনীতিতে ভুমিকা রাখছে ফুলের ঝাড়ু

প্রকাশঃ ০৭ মার্চ, ২০২০ ১১:৫৪:৪০ | আপডেটঃ ১৮ মার্চ, ২০২৪ ০৯:১৭:০৫
কৌশিক দাশ, সিএইচটি টুডে ডট কম, বান্দরবান। বান্দরবানের পাহাড়ে উৎপাদিত ফুল ঝাড়ু বিক্রি করে ভাগ্য বদলের চেষ্টা করছে বান্দরবানের  দরিদ্র ও শ্রমজীবি পরিবার। এই ফুল ঝাড়ু দরিদ্র মানুষের আর্থিক সংকট মোকাবেলায় সহায়ক হয়ে উঠেছে, সাময়িকের জন্য হলেও ফুল ঝাড়ু শ্রমজীবি মানুষকে এনে দিয়েছে কর্মসংস্থান ,আর এই ফুল ঝাড়ু এখন স্থানীয় বাজারের চাহিদা মিটিয়ে যাচ্ছে দেশের নানান প্রান্তে।

ঘর, অফিসসহ আবাসিক ভবন, এলাকা পরিস্কার পরিচ্ছন্ন করার কাজে জুড়ি নেই পাহাড়ি ফুল ঝাড়ুর। গ্রাম গঞ্জ থেকে শুরু করে শহর বন্দরের প্রায় সর্বত্রই রয়েছে এর কদর। জানুয়ারী-এপিল বান্দরবানের বিভিন্ন পাহাড় থেকে পাহাড়ী নারী ও পুরুষরা এই ফুল ঝাড়ু সংগ্রহ করে বাজারে নিয়ে আসে বিক্রির উদ্দেশ্যে। জুমে উৎপাদিত বিভিন্ন প্রকার কৃষি পণ্যের সাথে এই ফুল ঝাড়ু হয়ে ওঠেছে তাদের বাড়তি উপার্জনের অন্যতম মাধ্যম। এদিকে প্রাকৃতিকভাবে জন্মানো এই ফুলঝাড়ুর ব্যবসা করে লাভবান হচ্ছে শ্রমজীবি মানুষরা।

ফুলঝাড়ুর কাজে নিয়োজিত শ্রমিক মো:নকিব বলেন, প্রতিবছরই আমরা এই দুই তিন মাস ফুল ঝাড়ুর কাজে জড়িত হই এবং দৈনিক ৫০০ টাকা বেতনে কাজ করি। শ্রমিক মো:নকিব আরো বলেন, এই মৌসুমটা আমাদের জন্য অত্যন্ত ভালো কেননা এই দুই তিন মাস (জানু-এপিল) আমাদের প্রতিদিনই কাজ করতে হয় আর প্রতিদিনই বেতন বেশ ভালো পায়।

ফুলঝাড়ু শ্রমিক মো:সেলেমান বলেন,এই ফুল ঝাড়ুর কাজে আমাদের তেমন কষ্ট হয় না। আমরা ফুল ঝাড়–গুলো নেড়ে নেড়ে রোদে শুকাই আর পরে আটি বেঁধে ট্রাকে বোঝাই করি।

জেলা সদর ছাড়াও লামা, আলীকদম, রোয়াংছড়ি উপজেলার বিভিন্ন এলাকার খুচরা বিক্রেতাদের কাছ থেকেও পাইকাররা ভিন্ন ভিন্ন দামে সংগ্রহ করে থাকেন গৃহস্থালি কাজের অন্যতম প্রয়োজনীয় এই ফুলঝাড়ু, আর সংগ্রহের পর খোলা আকাশের নীচে রাখা হয় শুকানোর জন্য। তারপর ৪ থেকে ৫ ফুট লম্বা করে কাটা ১০ থেকে ১২টি ফুল দিয়ে তৈরি করা হয় প্রতিটি ঝাড়ু। এরপর জিপ কিংবা ট্রাকযোগে পাঠানো হয় ঢাকা চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন পাইকারদের কাছে।

এদিকে বান্দরবানের বিভিন্ন এলাকার পাহাড়ের ঢালে প্রাকৃতিক ভাবে জন্মানো এই ফুল ঝাড়ু এখন স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। এখন এই ফুল ঝাড়ু দেশের বিভিন্ন স্থানের পাশাপাশি বিদেশে ও হচ্ছে রপ্তানি ,তাছাড়া ফুল ঝাড়ু সংগ্রহ ও বিক্রি করে বাড়তি উপার্জন করতে পেরে খুশি ব্যবসায়ীরা।

বান্দরবানের ফুল ঝাড়ু ব্যবসায়ী মো:সাহাবউদ্দিন সিকদার বলেন, আমরা প্রতি বছরই এ ফুলঝাড়ুর ব্যবসা করে থাকি। এই ব্যবসা করে আমাদের সংসার বেশ ভালো চলে। আমরা প্রথমে পাহাড় থেকে বিভিন্নজনের কাছ থেকে এই ফুলঝাড়ু সংগ্রহ করি ,তারপর সব এক জায়গায় সংগ্রহ করে শুকিয়ে আটি বেঁধে ট্রাকে করে চট্টগ্রাম ও ঢাকায় বিভিন্ন ব্যবসায়ীর কাছে বিক্রি করি। এক ট্রাক ফুল ঝাড়ু বিক্রি করে আমাদের ১৫-২০ হাজার টাকা লাভ হয়।




পাহাড়ের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ন অবদান রেখে চলা এই ফুল ঝাড়ু সম্পর্কে সংশ্লিষ্টদের নেই কোন পরিসংখ্যান, তবে সঠিকভাবে সংরক্ষন আর পরিচর্যা করা গেলে পাহাড়ের অর্থনৈতিক উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখতে পারে এই প্রাকৃতিক সম্পদটি, জানালেন কৃষি ও বন কর্মকর্তারা।

বান্দরবান সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো.ওমর ফারুক বলেন, এই ফুল ঝাড়ুর কোন সঠিক তথ্য কোন বিভাগের কাছে নেই। প্রতিবছর এ সময়ের দুই তিন মাস বান্দরবানের কয়েকজন ব্যবসায়ী বান্দরবান থেকে এই ফুল ঝাড়ু দেশের নানান প্রান্তে সরবরাহ করে লাভবান হয় ।

তিনি আরো বলেন, এই ফুল ঝাড়ু বান্দরবানের পাহাড়ে কোন যত্ন ছাড়াই বেড়ে ওঠে আরকিছু পাহাড়ের জনসাধারণ তা সংগ্রহ করে বাজারে বিক্রি করে বেশ লাভবান হচ্ছে।



বান্দরবানের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. ফরিদ মিঞা বলেন,এই শুকনো মৌসুমে বান্দরবানে ফুল ঝাড়ুর দেখা মেলে। প্রাকৃতিভাবে এই ফুল ঝাড়ু উৎপাদিত হয় বান্দরবানে। বন কর্মকর্তা মো. ফরিদ মিঞা আরো বলেন,বান্দরবান থেকে এই ফুল ঝাড়ু পরিবহন করে ঢাকা ও চট্টগ্রামে নেয়া হয় আর এই পরিবহণের অনুমতি জন্য  সরকারীভাবে আমরা রাজস্ব গ্রহণ করে থাকি।

তিনি আরো বলেন, প্রতি ফুল ঝাড়ুর ব্রোম ৩৫ পয়সা করে রাজস্ব সরকারের ফান্ডে জমা হয়,যার হিসেবে প্রতিটি ট্রাকে আমরা ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা পর্যন্ত রাজস্ব সরকারের তহবিলে জমা দিই।










অর্থনীতি |  আরও খবর
এইমাত্র পাওয়া
আর্কাইভ
সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত, ২০১৭-২০১৮।    Design & developed by: Ribeng IT Solutions