মঙ্গলবার | ১৯ মার্চ, ২০২৪

নানা সংকটে কর্ণফুলী পেপার মিল, গ্যাস সংযোগ বন্ধ করায় কাগজ উৎপাদন বন্ধ

প্রকাশঃ ২৪ অগাস্ট, ২০১৯ ১১:৫৩:২৫ | আপডেটঃ ১৮ মার্চ, ২০২৪ ০৯:১৩:৪১
সিএইচটি টুডে ডট কম, রাঙামাটি। এক সময় কাগজ উৎপাদনের জন্য বিখ্যাত ছিল দক্ষিন এশিয়ার বৃহত্তম কাগজ কল কর্ণফুলী পেপার মিল, দেশের কাগজের বেশীর ভাগ চাহিদা এখান থেকে মেটানো হতো, ৯০ দশকের পর থেকে মিলটি লোকসান গুনতে শুরু করে, এরপরও মিলটি নানা সংকটের মাঝে কাগজ উৎপাদন করত। কিন্তু গত ৪ আগষ্ট থেকে কর্ণফুলী গ্যাস ডিষ্ট্রিবিউশেন কোম্পানী  গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিলে কাগজ উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। এতে করে সরকারি যে সব প্রতিষ্ঠানে কাগজ সরবরাহ করার কথা কেপিএম থেকে সেটি বাধাগ্রস্ত হবে বলে অভিযোগ করছে কর্মকর্তা কর্মচারীরা।

১৯৫৩ সনে তৎকালীন পাকিস্তান সরকার কাঁচামাল (বাঁশ, গাছ) থেকে কাগজ উৎপাদনের জন্য কর্ণফুলী পেপার মিল চালু করে। শুরু থেকে পেপার মিল কয়েক হাজার  শ্রমিক কর্মচারীদের পদচারনায় মুখর ছিল, ছিল লাভজনক প্রতিষ্ঠানও। এই পেপার মিল থেকে দেশে অধিকাংশ নিউজপ্রিন্টের চাহিদা মেটানো হতো। কিন্তু ৯০ দশক এর পর থেকে নানা অব্যবস্থাপনায় মিলটি ক্রমাগত লোকসান দিতে থাকে। শিল্প মন্ত্রনালয় থেকে বিভিন্ন সময় প্রনোদনা ও ঋন সুবিধা মিলটি চালু রাখার চেষ্টা করা হয়। এক সময় মিলটিতে ৫/৬ হাজার কর্মচারি থাকলেও ক্রমাগত লোকসানে ছাটাইয়ের কারনে বর্তমানে মিলটিতে সব মিলিয়ে হাজার খানেক কর্মকর্তা রয়েছে। বছরে মিলটি ৮০ কোটি টাকা লোকসান দিলেও লোকসান কমিয়ে যখন লাভের মুখ দেখতে যাচ্ছে তখনই গ্যাস সংযোগ বন্ধ করে দেয় কর্ণফুলী গ্যাস ডিষ্ট্রিবিউশেন কোম্পানী, এতে গ্যাসের অভাবে কাগজ উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। এতে শ্রমিকরা অলস সময় পার করার পাশাপাশি  সরকারি যে সব প্রতিষ্ঠানে কাগজ সরবরাহ করার কথা কেপিএম থেকে সেটি বাধাগ্রস্ত হবে বলে অভিযোগ করছে কর্মকর্তা কর্মচারীরা। প্রাথমিক বই ছাপানোর কাগজ, নির্বাচন কমিশন, হাইকোর্টসহ বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে কেপিএমের কাগজ সরবরাহ করার কথা, কিন্তু গ্যাস সংযোগ না দিলে সরকারি এসব প্রতিষ্ঠান কাগজের ওয়ার্ডার বাতিল করবে বলে আশংকা কর্তপক্ষের।

এদিকে সরজমিনে ঘুরে দেখা গেছে মিলটি অনেক পুরানো হওয়ায় এর অধিকাংশ যন্ত্রপাতি  অকেজো, এবং ভবন পরিত্যক্ত, পুরানো আমলের ঝরা জীর্ণ মেশিনগুলো।
সরজমিনে ঘুরে দেখার সময় মিলটির কর্মচারীরা জানান, মিলটিকে তারা লোকসান থেকে লাভের পথে আনতে অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন, গত আড়াই বছরে মিলটির যখন লোকসান কাটিয়ে লাভের মুখ দেখতে যাবে তখন হঠাৎ বকেয়া পাওনা আদায়ে গ্যাস বন্ধ করে দেয় কর্ণফুলী গ্যাস ড্রিষ্ট্রিবিউশন কোম্পানী। এতে কাগজ উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। একই সাথে কেপিএম এলাকায় পানি, বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ হয়ে হাজার হাজার পরিবার মানবেতর জীবন যাপন করছে।

শ্রমিকদের দাবি মিলটি বন্ধের ষড়যন্ত্র করছে স্বার্থান্বেসী মহল, আর এই মিলটি বন্ধ হলে শ্রমিকরা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পাশাপাশি দেশও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এছাড়া তারা গত ৪ মাস ধরে বেতন পাচ্ছেন না।

কর্ণফুলী পেপার মিলের কর্মচারী ও মুক্তিযোদ্ধা মোস্তফা কামাল পাশা জানান, পাকিস্তান আমলে বসানো যন্ত্রপাতিগুলো বেশীর ভাগ নষ্ট, সময়ের সাথে আধুনিক যন্ত্রপাতি বসানোর পাশাপাশি মিলটি আধুনিকায়ন করলে শত শত মানুষের নতুন করে কর্মসংস্থান হবে। সরকার আয় করবে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব। তিনি কর্ণফুলী পেপার মিলকে বাঁচাতে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

কর্ণফুলী পেপার মিলের শ্রমিক সংগঠনের সিবিএ সভাপতিত আবদুর রাজ্জাক জানান, যখন পেপার মিল সংকট কাটিয়ে লাভের মুখ দেখবে তখন ষড়যন্ত্র করে গ্যাস বন্ধ করে দিয়েছে, এতে উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে, কর্মচারীরা বেতন পাচ্ছে না, তিনি অবিলম্বে গ্যাস সংযোগ দেয়ার দাবি জানান।
ক্রমাগত লোকসানে থাকা কেপিএম থেকে অবসরে যাওয়া কয়েকজন কর্মচারী জানান, তারা কেউ ৪০ বছর কেউবা ৩৫ বছর চাকুরি করে অবসরে গেলেও দীর্ঘদিনে পেনশন ভাতা পাননি, পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে।

এদিকে কর্ণফুলী পেপার মিলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক   ড: এম এম এ কাদের বলেছেন, আমি যখন দায়িত্ব নিয়েছি আড়াই বছর আগে কেপিএমের লোকসান ছিল বছরে ৮০ কোটি টাকা, গত ২ বছরে আমরা কর্মকর্তা কর্মচারীরা অক্লান্ত পরিশ্রম করে মিলটির লোকসান ২০ কোটি টাকায় নিয়ে এসেছি এবছর লাভ না হলেও আমরা যখন লোকসান কাটিয়ে উঠত যাব তখন-ই  গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন দু:খজনক।
তিনি আরো জানান, দ্রুত গ্যাস সংযোগ স্থাপন করতে বিসিআইসের মাধ্যমে চেষ্টা চালাচ্ছেন।



কেপিএমের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আরো জানান, দেশে প্রথমদিন শিক্ষার্থীদের মাঝে বই বিতরনের কাগজ, হাইকোট, নির্বাচন কমিশনসহ সরকারি বেশ কয়টি প্রতিষ্ঠানে কাগজ সরবরাহ করা হয় কেপিএম থেকে, যদি দ্রুত গ্যাস সংযোগ দেয়া না হয় তাহলে এসব প্রতিষ্ঠানে কাগজ সরবরাহ করা সম্ভব হবে না, একই সাথে বেসরকারি কাগজ মিলগুলো চড়া দামে মার্কেট দখলে নিবে। এতে সরকার রাজস্ব বঞ্চিত হওয়ার পাশাপাশি এবং কেপিএম বন্ধ হয়ে যাবে।

এদিকে দ্রুত গ্যাস সংযোগ পুন:স্থাপন ও বকেয়া বেতন ভাতার দাবিতে শ্রমিক কর্মচারিরা মানববন্ধন ও সাংবাদিক সম্মেলন করেছে।

অর্থনীতি |  আরও খবর
এইমাত্র পাওয়া
আর্কাইভ
সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত, ২০১৭-২০১৮।    Design & developed by: Ribeng IT Solutions