প্রকাশঃ ০৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৮ ০৭:১৭:৪৭
| আপডেটঃ ২০ নভেম্বর, ২০২৪ ০১:৩৬:১৪
সিএইচটি টুডে ডট কম, রাঙামাটি। সমস্যার আবর্তে ঘুরপাক খাচ্ছে রাঙামাটির মানিকছড়ি বিসিক শিল্পনগরী। রয়েছে অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগও। বিনিয়োগকারীরা বলছেন, কর্তৃপক্ষের উদ্যোগ না থাকায় অনেক টাকা বিনিয়োগ করে প্লট নিয়েও কারখানা বসাতে পারছেন না তারা। রাস্তা না হওয়ায় মালামাল আনা নেয়া সম্ভব হচ্ছে না। পানির অভাবে কাজ করা যায় না। শ্রমিকও পাওয়া যায় না এসব সমস্যার কারণে। আর কর্তৃপক্ষ বলছে, উপরে অনেক লেখালেখি হয়েছে। এখনও প্রকল্প অনুমোদন পাওয়া যায়নি। শিগগির কাজ শুরু হতে পারে।
শিল্পনগরীর বিনিয়োগকারী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও তন্ময় অটোরাইচ মিলের মালিক তপন কান্তি পাল বলেন, অনেক টাকা বিনিয়োগ করেও রাস্তা, পানিসহ বিদ্যামান নানা সমস্যার কারণে কারখানা স্থাপন করা সম্ভব হচ্ছে না। প্লট বরাদ্দ নিতে সরকারি জামানত ছাড়াও অতিরিক্ত অনেক টাকা দিতে হয়েছে। ঘুষ ছাড়া প্লট পাওয়া যায় না। সরকারি যেগুলো স্থাপন করা হয়েছে সেগুলোও চালু রাখা কঠিন। রাস্তা না থাকায় মালামাল আনা-নেয়া করা কঠিন। পানি না থাকায় কারখানায় কাজ করা যায় না। শ্রমিকও পাওয়া যায় না। এছাড়া বর্ষার সময়ে জায়গাটি প্লাবিত হয়।
তিনি বলেন, নিচু ভূমির ভরাট, উন্নয় এবং প্রতিরক্ষা বাঁধ দিয়ে এ সমস্যার স্থায়ী সমাধান ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। মাটি ভরাটের জন্য টাকা নেয়া হলেও কিছুই করা হয়নি। এসব সমস্যার স্থায়ী সমাধানের ব্যবস্থা না নিলে কারখানা স্থাপন করা সম্ভব নয়। যেগুলো স্থাপন করা হয়েছে, সেগুলোও বন্ধ করে দিতে হবে। আমরা বারবার দাবি করে আসছি, সমস্যাগুলো সমাধানে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে। কিন্তু নির্বিকার কর্তৃপক্ষ। অথচ প্লট বরাদ্দের সময় আমাদের শর্ত দেয়া হয়েছিল, বিসিকি শিল্পনগরীটির বাস্তবায়নে সবক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে সরকার।
কর্মরত শ্রমিকরা বলেন, রাস্তা, পানি না থাকায় ওখানে কাজ করা কঠিন। বর্ষা এলে জায়গাটি তলিয়ে যায়। এতে আরও কঠিন পরিস্থির সম্মুখীন হতে হয়। এ অবস্থা থাকলে সেখানে কাজ করা সম্ভব নয়।
এসব ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে, রাঙামাটি মানিকছড়ির বিসিক শিল্পনগরীর দায়িত্বে থাকায় কর্মকর্তা আবদুল মতিন ভূঁইয়া বলেন, শিল্পনগরীটির স্থাপনার কাজ কার্যত ২০০১ সালে শুরু হয়ে তা শেষ হয়েছিল ২০০৮ সালের দিকে। কিন্তু পার্বত্য অঞ্চলের বিরাজমান পরিস্থিতির কারণে উল্লেখযোগ্য প্রতিষ্ঠানগুলো বিনিয়োগে আসতে চাইছে না। রাস্তা নির্মাণের ব্যাপারে পার্বত্য মন্ত্রণালয়ে লেখালেখি হয়েছে। খুব শিগগির প্রকল্প অনুমোদন হতে পারে। রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ তা বাস্তবায়ন করবে। খাল ভরাট হওয়ায় পানি সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেছে। এ জন্য পরবর্তীতে পুকুর খননের চিন্তা করা হচ্ছে। নিচু ভূমির উন্নয়নসহ পর্যায়ক্রমে সবগুলো সমস্যার সমাধানের উদ্যোগ রয়েছে। অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগ সঠিক নয় বলে দাবি করেন তিনি।
জানা যায়, বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কর্পোরেশনের ব্যবস্থাপনায় ১৯৯৮ সালে রাঙামাটি জেলা সদরের মানিকছড়িতে বিসিক শিল্পনগরী স্থাপন করে সরকার। অথচ গত দুই দশকে স্থাপনার কাজ শেষ হতে পারেনি। পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের উন্নয়ন ও বিকাশে শিল্পনগরীটির স্থাপনার কাজ শুরু করে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার। পরে রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদে তা হস্তান্তর করে সরকার।
কিন্তু দায়িত্বশীল কর্তৃপক্ষের বাস্তব উদ্যোগ না থাকায় শিল্পনগরীটি রয়ে গেছে নামে। আজও শেষ হতে পারেনি এর নির্মাণকাজ। নেই সংস্কার-উন্নয়ন কাজ। বর্ষা এলে তলিয়ে যায় পানিতে। সংস্কার, ভরাট ও ভূমির উন্নয়ন করা না হলে এ সমস্যার স্থায়ী সমাধান সম্ভব নয়। এ ছাড়া নেই পানি সরবরাহ। নির্মাণ করা হয়নি রাস্তা। এসব সমস্যার কারণে কারখানা স্থাপন করতে পারছেন না বলে অভিযোগ করেছেন, বিনিয়োগকারীরা।
তারা বলেন, সম্ভাবনাময় রাঙামাটির ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পনগরীর বাস্তবায়নে সরকারের কোনো উদ্যোগ নেই। কার্যকর পদক্ষেপ নেই বাস্তবায়নকারী কর্তৃপক্ষ রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের। এমনকি পৃষ্ঠপোষকতাও নেই তাদের। ফলে বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান স্থাপনে বাধাগ্রস্ত হচ্ছেন বিনিয়োগকারীরা। আর বিকশিত হতে পারছে না রাঙ্গামাটির সম্ভাবনাময় ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প। রূপ দিতে পারছে না বিসিক শিল্পনগরীর।
সরেজমিন দেখা গেছে, রাঙামাটি মানিকছড়ি বিসিক শিল্পনগরীতে এ পর্যন্ত গড়ে উঠেছে মাত্র পাঁচটি ক্ষুদ্র শিল্প কারখানা। এগুলোর মধ্যেও চালু আছে কেবল তিনটি। একটি ভাঙািরর, একটি অটো রাইচ মিল এবং একটি ময়দার কারখানা। অথচ শিল্পনগরীর ৮০ প্লটের মধ্যে ৭৫টি বরাদ্দ হয়ে গেছে। প্রধান সড়ক থেকে নগরীতে যাওয়ার রাস্তাসহ অভ্যন্তরীণ সব রাস্তা এখনও কাাঁচা। কাঁচা রাস্তায় পানি গড়ার নালা না থাকায় ধসে যাচ্ছে রাস্তাসহ আশেপাশের ভূমি। এ ছাড়া কাপ্তাই হ্রদের সংলগ্ন নিচু এলাকার জমি হওয়ায় প্রতি বর্ষাতে পানিতে তলিয়ে যায় নগরীর বেশিরভাগ জায়গা। পানি সরবরাহের পাম্প মেশিন অচল থাকায় পানির সংকট তীব্র। এসব সুবিধা না থাকার ফলে বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান করতে পারছেন না বিনিয়োগকারীরা।
এ সময় কর্তব্যরত পাম্প মেশিন চালক মো. ইসমাইল জানান, পানির পাম্প মেশিনটি দুই বছর আগে অকেজো হয়ে গেছে। পানির রিজার্ভারটি মাটির চাপায় পড়ে গেছে। ফলে পানি তোলা ও সরবরাহ বন্ধ রয়েছে দীর্ঘদিন। আগের প্লানটা ভুল ছিল। পানির জন্য নতুন প্লান করে ব্যবস্থা নিতে হবে। তিনি জানান, নগরীর ৮৮ প্লটের মধ্যে বর্তমানে ১৩টি খালি আছে। বাকিগুলো বরাদ্দ হয়ে গেছে।