প্রকাশঃ ১৪ অগাস্ট, ২০২২ ০৯:০০:৩৪
| আপডেটঃ ২১ নভেম্বর, ২০২৪ ০২:১৩:৩৬
সিএইচটি টুডে ডট কম, কাপ্তাই (রাঙামাটি)। রাঙামাটি জেলার কাপ্তাই উপজেলার ৫ নং ওয়াগ্গা ইউনিয়নের ৫ নং ওয়ার্ড এর পাগলী উপর পাড়ায় ফুকির মুরং ঝর্নার সৌন্দর্য উপভোগ করতে ভ্রমন পিপাসুদের দিন দিন আগ্রহ বাড়ছে। এর আশেপাশে ৩ টি ছোট বড় কয়েকটি ঝর্না রয়েছে, ঝর্না হতে অবিরাম ধারায় পানি প্রবাহিত, পাখির কিচির মিচির শব্দ এবং পাহাড়, বন বেষ্টিত এই ফকির মুরং কুয়া যেন প্রকৃতি দেবীর এক অপূর্ব সৃষ্টি, তাই প্রতিদিন ভীড় লেগে আছে প্রকৃতি প্রেমীদের। স্থানীয়রা এটাকে ফইরা মুরং ঝর্ণাও বলে থাকেন।
এলাকার প্রবীন বাসিন্দা চিত্তসেন কার্বারী জানান, আমরা দাদুদের মুখ থেকে শুনেছি আজ হতে শত বছর আগে এই পাহাড়ে এক সাধক বা ফকির ধ্যান করতো, লোকজন পুজা দিতো, মানত করতো, ফকির ধ্যান করতো বলে স্হানীয়রা এর নাম দিয়েছে ফুকির মুরং বা ফকির কুয়া।
এদিকে গতকাল শনিবার (১৩ আগস্ট) এই ঝর্ণার সৌন্দর্য উপভোগ এবং স্থানীয়দের সাথে কমিউনিটি বেইজড ট্যুরিজম নিয়ে মতবিনিময় করতে সেই স্থানে যান কাপ্তাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুনতাসির জাহান। এইসময় তিনি জানান, নিরন্তের নির্সগের অপরুপ সৌন্দর্য্যের অধিকারী রুপসি কাপ্তাইয়ের ৫ টি ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থানে রয়েছে অপার সৌন্দর্য এবং অপার সম্ভাবনা। আজকে আমি প্রথমবারের মতো এই ঝর্ণা দেখতে আসলাম এবং এর সৌন্দর্য দেখে মুগ্ধ হলাম। তাই প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যকে ঠিক করে পর্যটকরা যাতে নির্বিঘ্নে এই ঝর্ণা দেখতে আসতে পারেন সেইজন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণ করে স্থানীয় জনগণকে সম্পৃক্ত করে কিভাবে এই এলাকার আত্মসামাজিক উন্নয়ন ঘটানো যায় সেই বিষয়ে কাপ্তাই উপজেলা প্রশাসন প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহন করবেন।
১০০ নং ওয়াগ্গা মৌজার হেডম্যান অরুণ তালুকদার জানান, ওয়াগ্গা মৌজায় অবস্থিত ফকিরা মুরং ঝর্ণা একটি পুরাতন ঝর্ণা। এখন অনেক পর্যটন আসে এই ঝর্ণা দেখতে। যদি এই এলাকার অবকাঠামোগত উন্নয়ন করা যায়, তাহলে প্রচুর পর্যটক আসবে এইখানে।
স্থানীয় কার্বারী রনজিত কার্বারী ও ৫ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য তপন তনচংগ্যা জানান, আমাদের দাদুর মুখ থেকে এই ঝর্ণার কথা শুনেছি। এটা বহু পুরানো একটি ঝর্ণা। তাই এই ঝর্ণা আসার পথটুকু তৈরি করে দেবার জন্য আমরা প্রশাসনের নিকট অনুরোধ জানাই।
শনিবার (১৩ আগস্ট) ঝর্ণা দেখতে আসা চন্দ্রঘোনা খ্রীস্টিয়ান মিশন হাসপাতালের পরিচালক ডাঃ প্রবীর খিয়াং, কাপ্তাই উপজেলা খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নিপু চন্দ্র দাশ, কাপ্তাই উপজেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক বির্দশন বড়ুয়া ও কাপ্তাই উপজেলা স্কাউটস এর সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব হাসান বাবু জানান, আজকে আমরা এই ঝর্ণা দেখতে আসলাম। আসার পথে অনেক গুলো পাথরের সমারোহ আমাদেরকে মুগ্ধ করেছে। সত্যিই এটি একটি অপরুপ সৌন্দর্যমন্ডিত ঝর্ণা।
ঝর্ণা দেখতে আসা রাঙামাটির ঘাগড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক চন্দ্রা দেওয়ান, রাঙামাটি হতে আসা বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার কর্মী নুকু চাকমা, ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক দিশারী চাকমা এবং ঢাকা হতে আসা আমেরিকা প্রবাসী সাদিয়া স্বান্তনা জানান, অনিন্দ্য সুন্দর একটি ঝর্ণা এটি। এইখানে না আসলে বুজা যাই না ভিতরে একটি সুন্দর ঝর্ণা আছে , আপনারা সবাই আসবেন। এটি খুবই সুন্দর ঝর্ণা।
ঘাঘড়া - বড়ইছড়ি সড়কের বটতলি এলাকার পূর্ব পাশ ধরে ভাইজ্জাতলি এলাকা পাড় হয়ে ৩ কিমি পাহাড়ী পথ আর ছড়া পাড় হয়ে এই স্থানে পৌঁছানো যায়। আশেপাশে শত শত তনচংগ্যা পরিবারের বসবাস। পথেমধ্যে পাগলি মুখ পাড়া, পাগলি মধ্যম পাড়া গ্রাম পার হয়ে পাগলি উপর পাড়ায় এই ঝর্নার দেখা মিলবে। এই স্থানে যেতে যেতে পর্যটকরা আরোও উপভোগ করতে পারবেন পাহাড় হতে বয়ে চলা ছড়ার পানির বহমান ধারা, আশেপাশে অনেকগুলো পাহাড়ী গাছ গাছালি, ছোট বড় অনেকগুলো পাথর এবং ছোট ছোট ঘর।