প্রকাশঃ ১৭ অক্টোবর, ২০২০ ০৩:১২:২৯
| আপডেটঃ ০৩ ডিসেম্বর, ২০২৪ ০২:০৭:৪২
জিয়াউর রহমান জুয়েল, রাঙামাটি। বৈশ্বিক মহামারি করোনা বিপর্যয় থেকে ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে রাঙামাটির পর্যটন ব্যবসা। মৌসুমের শুরুতেই পর্যটকের আগমন ঘটছে উল্লেখযোগ্য হারে। তাই প্রাণ ফিরছে পর্যটনে। পর্যটকদের আগমন ঘিরে নিরাপদ ভ্রমণ ও নিরাপত্তা নিশ্চিতসহ প্রয়োজনীয় সকল প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছেন পর্যটন ব্যবসা সংশ্লিষ্টরাও।
বর্ষা শেষে আগমন ঘটেছে শরতের মিষ্টিমাখা আমেজ। উঁকি দিচ্ছে শীতও। ধীরে ধীরে কমছে উষ্ণতার তেজ। কখনো কখনো দোলা দিয়ে যাচ্ছে মৃদুমন্দ হিমেল হাওয়া। অরণ্য, পাহাড়, ঝর্ণা আর হ্রদের শহর রাঙামাটি এখন পুরোদমে প্রস্তুত পর্যটকদের বরণ করে নেয়ার।
এলোমেলো সারিতে সাজানো উঁচু-নিচু আর ছোট-বড় অসংখ্য পাহাড়ের সমাবেশ। যে দিকে চোখ যায় স্বচ্ছ জলরাশি আর বিস্তীর্ণ সবুজের হাতছানি। সবুজ পাহাড়ের পরতে পরতে রয়েছে অসংখ্য উচ্ছল ঝর্ণাধারা। নৈসর্গিক লীলাভূমি পাহাড়ি জনপদ রাঙামাটি যেন শিল্পীর হাতে আঁকা নিখাঁদ জীবন্ত ছবি!। প্রকৃতিপ্রেমিরা এর সান্নিধ্য পেতে ছুটেন পাহাড়ে। কিন্তু করোনা সংক্রমণ শুরু হলে সেই সম্পর্কে ‘ছেদ’ পড়ে।
‘মার্চ থেকে জুলাই পর্যন্ত গত পাঁচ মাসে পর্যটক শূণ্য থাকায় মারাতœক মন্দা দেখা দেয় পর্যটন ব্যবসায়। রাঙামাটি চেম্বারের হিসাবে, জেলায় পর্যটনের পাঁচটি খাতে দিনে গড়ে অন্তত সোয়া দুই কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে এসময়। খরচ কমাতে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে কর্মী ছাঁটাইয়ের মতো কঠিন সিদ্ধান্তও নিতে হয়েছে। কিন্তু সেই ক্ষত এখন শুকোতে শুরু করেছে। চাঙ্গা হতে শুরু করেছে পর্যটন ব্যবসা।
রাঙামাটিতে পর্যটকদের মূল আকর্ষণ ৩৩৫ ফুট দৈর্ঘের ঝুলন্ত সেতুকে ঘিরেই। তাই পর্যটকেরা প্রথমেই ছুটে যান পর্যটন কমপ্লেক্স এলাকায়। বছরে প্রায় দুই লাখ দেশি ও বিদেশি পর্যটক সেতুটি দেখতে আসেন। সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলোতে পর্যটকদের উপচে ভিড় থাকে। এছাড়া শহরের পুলিশের ‘পলওয়েল পার্ক’, ডিসির ‘রাঙামাটি পার্ক’ সেনাবাহিনীর ‘আরণ্যক’, সুভলং ঝর্ণা, সুখী নীলগঞ্জ ও রাজবন বিহার এলাকায় প্রতিনিয়ত ভিড় জমান বেড়াতে আসা পর্যটকরা। এছাড়া হালের আকর্ষণ ‘সাজেক ভ্যালি’ পর্যটকদের সবচেয়ে বেশি টানছে।
হোটেল-মোটেল, রেস্টুরেন্ট (খাবারের দোকান), টেক্সটাইল (পাহাড়িদের তৈরি কাপড়), নৌযান এবং বিনোদন কেন্দ্রকে (ঝুলন্ত সেতুসহ বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান) ঘিরেই মূলত রাঙামাটির পর্যটন খাত। রাঙামাটি শহরে বেসরকারি ৫০টি হোটেল-মোটেল রয়েছে। প্রতিদিন তিন হাজার অতিথি হোটেল-মোটেলে থাকতে পারে। পর্যটকদের সেবা দিতে এসব প্রতিষ্ঠানে কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছে পাঁচ শতাধিক। এছাড়া রাঙামাটির সাজেকে ১০৬টি কটেজ-রিসোর্ট রয়েছে। সেখানে ১২ শতাধিক শ্রমিক-কর্মচারীও আছে।
জেলা প্রশাসক একেএম মামুনুর রশিদ বলেন, ‘সরকারের সিদ্ধান্ত মোতাবেক স্বাস্থ্যবিধি মেনেই জেলার পর্যটন স্পটগুলো খুলে দেয়া হয়েছে। পর্যটকরা অবশ্যই স্বাস্থ্যবিধি মেনে ঘুরতে যাবেন। এটা নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট পর্যটন কেন্দ্রের কর্তৃপক্ষকে বলা হয়েছে। এছাড়া স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করতে প্রতিদিনই ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করা হচ্ছে’।
শুক্রবার (১৬ অক্টোবর) দুপুরে ঝুলন্ত সেতু ও পলওয়েল পার্কে গিয়ে দেখা গেছে, ‘মাস্ক ছাড়া প্রবেশ নিষেধ’ সাইনবোর্ড টানিয়ে দেওয়া হয়েছে প্রবেশ মুখে। পর্যটকেরাও স্বাস্থ্যবিধি মেনেই সেখানে প্রবেশ করছেন। ঝুলন্ত সেতুর টিকেট বিক্রেতা হাসান আহমেদ সোহেল জানান, শুক্র-শনিবারসহ সরকারি ছুটির দিনে গড়ে প্রায় দেড় হাজারের বেশি পর্যটক আসছেন।
নরসিংদি সদর থেকে বেড়াতে আসা নাজমুল হাসান ভুইয়া(৩৫) জানান, রাঙামাটিতে এই প্রথম এসেছেন। সঙ্গী আট জনের বহর। চমৎকার প্রকৃতি। আরেক পর্যটক নরসিংদির ব্রাহ্মণদি কেকেএম সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক আল আমীন(৩৪) বললেন, ‘আমার মতো ডিজঅ্যাবল(শারীরিক প্রতিবন্ধী) ব্যক্তিদের জন্য গাইড কিংবা কেয়ারগিভার দরকার। আবাসিক হোটেলগুলোতে লিফট, র্যাম্প দরকার। এছাড়া পর্যটন স্পটগুলো কেন বিখ্যাত তার ইতিহাস এতিহ্য নিয়ে ‘তথ্যফলক’ থাকলে সুবিধা হতো’।
মৌসুমের শুরুতেই চোখে পড়ার মতো পর্যটকদের আগমন ঘটায় খুশি সংশ্লিষ্টরাও। রাঙামাটি আবাসিক হোটেল-মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোঃ মঈনুদ্দীন সেলিম বলেন, ‘মৌসুমের শুরুতেই পর্যটকদের আগমন ঘটছে চোখে পড়ার মতো। তবে গত বছরের এই সময়ের চেয়ে এখনো কম। আশা করছি গত পাঁচ মাসের লোকসান কমিয়ে আনতে পারবো’।
ট্যুরিস্ট পুলিশের এএসআই কামাল উদ্দিন বলেন, ‘পর্যটকদের সার্বিক নিরাপত্তায় ট্যুরিস্ট পুলিশ সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করছে’।
রাঙামাটি পর্যটন হলিডে কমপ্লেক্সের ব্যবস্থাপক সৃজন বিকাশ বড়–য়া বলেন, ‘গত কয়দিন ধরে পর্যটকের আগমন শুরু হয়েছে। তবে গত বছরের এই সময়ের চেয়ে এখনো কম। বর্তমানে পর্যটন মোটেলের কক্ষগুলো প্রায় ৭০ শতাংশ বুকিং আছে’।