কাপ্তাই লেকে পানির স্তর হ্রাস পাওয়ায় নৌ চলাচলে বিঘ্ন
প্রকাশঃ ০৩ জুনe, ২০১৮ ০৮:২৯:৩৬
| আপডেটঃ ০৩ ডিসেম্বর, ২০২৪ ০১:১১:০৮
সিএইচটি টুডে ডট কম, রাঙামাটি। চলতি শুস্ক মৌসুমে কাপ্তাই লেকে পানি স্তর কমে যাওয়ায় রাঙামাটিতে নৌযান চলাচলে মারাত্মক ব্যাহত হচ্ছে। নৌযান যাচ্ছে গন্তব্যের অনেক দূর নিচে।
সরেজমিন ঘুরে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, হ্রদের রাঙামাটি সদর উপজেলার চেঙ্গী এবং লংগদু উপজেলার কাট্টলী বিল ছাড়া প্রায় অংশে তলানিতে গেছে পানি। অনেক স্থানে পায়ে হেঁটে পাড়ি দিতে হচ্ছে হ্রদের অংশ। অতিরিক্ত পানি কমায় কাপ্তাই পানিবিদ্যুৎ কেন্দ্রে উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। ব্যাহত হচ্ছে হ্রদ থেকে পানি উত্তোলণ ও সরবরাহ নিয়ে।
কাপ্তাই পানিবিদ্যুৎ কেন্দ্রের দায়িত্বশীল কর্তৃপক্ষ জানায়, বর্তমানে লেকে পানি রয়েছে ৭৪ এমএসএল (মীন সী লেভেল) বা ফুট। পানি কমায় বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। পর্যাপ্ত বৃষ্টি না হওয়া পর্যন্ত অবস্থার উন্নতি হবে না।
উল্লেখ্য, কাপ্তাই পানিবিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র স্থাপনে ১৯৬০ সালে খরস্্েরাতা কর্ণফুলি নদীর উপর দিয়ে নির্মিত হয় কাপ্তাই বাঁধ। এতে সৃষ্টি হয় দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সর্ববৃহৎ এ কৃত্রিম জলরাশির। যার আয়তন প্রায় সাড়ে ৭শ’ বর্গকিলোমিটার। হ্রদ সৃিষ্টর ফলে রাঙামাটি জেলায় বিদ্যুৎ উৎপাদনের পাশাপাশি মৎস্য উৎপাদন, নৌ যোগাযোগ, জলেভাসা জমিতে কৃষি চাষাবাদ, সেচ, ব্যবহার্য্য পানি সরবরাহ, পর্যটনসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে তৈরি হয় ব্যাপক সুবিধা। কাপ্তাই হ্রদ ঘিরে গড়ে ওঠে নানামুখী সম্ভবনা।
হ্রদ এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, হ্রদের উজানে নানিয়ারচর, বাঘাইছড়ি, লংগদু, বরকল, জুরাছড়ি, বিলাইড়ির বিস্তীর্ণ জলাভূমি শুকিয়ে এখন পরিণত হয়েছে মাঠ প্রান্তরে। হ্রদজুড়ে জেগে উঠেছে বিস্তীর্ণ ডুবোচর। বিভিন্ন অংশে জেগেছে চরাঞ্চল। হ্রদের পানি অস্বাভাবিক হারে নিম্নস্তরে যাওয়ায় জেলা সদরের সঙ্গে বিভিন্ন উপজেলায় নৌ যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার উপক্রম। ডুবোচরে আটকে যাচ্ছে নৌযান। বেড়েছে নৌপরিবহন সংকট। যাতায়াতে দুর্ভোগে এলাকার মানুষ।
জানা যায়, কাপ্তাই হ্রদে পানি কমায় বর্তমানে লঞ্চসহ যানবাহন চলাচল করতে পারছে বিলাইছড়ি রুটে উপজেলা সদর থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার নিচে নতুন বাজারঘাট, জুরাছড়ি রুটে উপজেলা সদর থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার নিচে সুবলং মিতিঙ্গ্যাছড়ি, বাঘাইছড়ি রুটে উপজেলার সদর থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার নিচে লংগদু উপজেলার ফোরেরমুখ, নানিয়ারচর রুটে ১৫ কিলোমিটার নিচে বুড়িঘাট এবং হরিণা রুটে লঞ্চ যাচ্ছে বরকল উপজেলা সদর পর্যন্ত। রাঙামাটি নৌ পরিবহণ মালিক সমিতির সভাপতি মঈন উদ্দিন সেলিম এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, বছরের পর বছর ধরে নামা পাহাড়ি ঢলের পলি জমছে হ্রদে। এছাড়া হ্রদ এলাকায় বসবাসকারী লোকজন প্রতিনিয়ত নিক্ষেপ করছে বর্জ্য। এসব পলি ও বর্জ্যে হ্রদের তলদেশ ভরাট হয়ে নাব্যতা হারিয়েছে কাপ্তাই হ্রদের। এতে অস্তিত্ব সঙ্কটে পড়েছে কাপ্তাই হ্রদ। হ্রদের গতিপ্রবাহ সচল ও নাব্যতা আনতে জরুরি ক্যাপিটাল ড্রেজিং।
জেলা প্রশাসক একেএম মামুনুর রশিদ বলেন, কাপ্তাই হ্রদের ড্রেজিং না হওয়ায় সঙ্কট বেড়েই চলেছে। হ্রদের ক্যাপিটাল ড্রেজিং নিয়ে আগেও পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেয়া হয়েছে। আবারও প্রস্তাবনা পাঠানো হবে।