সাবেক ছাত্রলীগ নেতাকে ‘রাজনীতিমুক্ত’ প্রত্যয়ন দিয়ে আলোচনায় জামায়াত আমীর
প্রকাশঃ ০৫ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১০:৫৪:৫৫
| আপডেটঃ ২৬ ডিসেম্বর, ২০২৪ ০৩:৫৩:০০
সিএইচটি টুডে ডট কম, রাঙামাটি। রাঙামাটি মেডিকেল কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সংগঠক কুশ বড়–য়া অর্ণবকে ‘রাজনীতিমুক্ত’ প্রত্যয়ন দিয়ে আলোচনা-সমালোচনার মুখোমুখি হয়েছেন রাঙামাটি জেলা জামায়াতের আমীর মুহাম্মদ আব্দুল আলীম। সমালোচনার মুখে পরে সেই ‘প্রত্যয়নপত্র’টি প্রত্যাহার করে নেওয়ার কথা জানিয়েছেন রাঙামাটি জেলা জামায়াতের আমীর মুহাম্মদ আব্দুল আলীম নিজেই।
সংবাদমাধ্যম ও সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গত জুলাই-আগস্টে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে পুলিশ ও সরকারদলীয় সমর্থকদের সঙ্গে ছাত্র-জনতার সংষর্ষে আহতদের চিকিৎসা না দিয়ে পুলিশের কাছে সোপর্দ করার অভিযোগে গত ১ ডিসেম্বর (রোববার) রাতে কুশ বড়–য়াকে মিরপুর মডেল থানা পুলিশের হাতে সোপর্দ করে ছাত্র-জনতা। ডা. কুশ বড়–য়ার সবশেষ কর্মস্থল ছিল রাজধানীর ইসলামী ব্যাংক কার্ডিয়াক হসপিটাল জরুরি বিভাগ।
গত ৩ ডিসেম্বর জেলা জামায়াতের আমীর আব্দুল আলীমের সিল ও সই করা প্রত্যয়নপত্রে বলা লেখা হয়েছে, ‘শ্রী কুশ বড়ুয়া পিতা সৌরভ বড়–য়া, মাতা বেবী বড়–য়া, সাং- কে. কে. রায় সড়ক, ওয়ার্ড-৮, ডাকঘর, রাঙামাটি-৪৫০০, থানা কোতোয়ালি, উপজেলা রাঙামাটি সদর, জেলা- রাঙামাটি পার্বত্য জেলা। তিনি অত্র পৌর এলাকার একজন স্থায়ী বাসিন্দা, তিনি জন্মগতভাবে বাংলাদেশের নাগরিক এবং আমার জানামতে তিনি কোনো রাজনৈতিক দল ও কোনোরকম সন্ত্রাসী কর্মকা-ের সঙ্গে জড়িত নহে। তাহার স্বভাব ও নৈতিক চরিত্র ভাল। আমি তাহার জীবনের সর্বাঙ্গীন সাফল্য কামনা করি।’
জামায়াত নেতার সই করা প্রত্যয়নপত্রটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ার পর গত দুদিন ধরে অনলাইন-অফলাইনে চলে আলোচনা-সমালোচনা। এরই মধ্যে ঘটনার পরদিন অর্থাৎ ৪ ডিসেম্বর (বুধবার) জেলা জামায়াত ইসলামীর দলীয় প্যাডে সই করা বিবৃতিতে জেলা জামায়াতের আমীর ‘প্রত্যয়নপত্র প্রত্যাহার ও দুঃখ প্রকাশ’ করেছেন। এতে লেখা হয়েছে, ‘গত মঙ্গলবার সকাল ১০টায় কিছু পরিচিত লোকের অনুরোধে এসে আমার ভীষণ ব্যস্ততার মাঝে প্যাডবিহীন একটি প্রত্যয়নপত্রে সাক্ষর নেয়। আমি সরল মনে কিছু পরিচিত ব্যক্তিকে বিশ^াস করে মানবিক বিবেচনা করে স্বাক্ষর করি। এটি আমার অনাকাক্সিক্ষত ভুল ও আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করছি। আমি সচেতনভাবে তাকে দেওয়া প্রত্যয়নপত্র প্রত্যাহার করলাম।’
তিনি আরও লিখেছেন, “বাস্তবিক পক্ষে জানলাম, সে একজন অপরাধী, সন্ত্রাসী, হত্যা মামলার আসামি। বিগত ফ্যাসিস্ট সরকার দলের অন্যতম কর্মী। সে নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের রাঙ্গামাটি মেডিকেল কলেজের সহসভাপতি। তার দৃষ্টান্তমূলক বিচার ও শাস্তি দাবি করছি। আর যারা আমাকে বিভ্রান্ত করে ও ব্যস্ততার মাঝে স্বাক্ষর নিয়ে দেশ ও জাতির বিরুদ্ধে কাজ করেছে তাদেরও সাবধান করছি।”
জানা গেছে, কুশ বড়–য়া অর্ণব রাঙামাটি মেডিকেল কলেজের এমবিবিএস কোর্সের দ্বিতীয় ব্যাচ ২০১৫-১৬ সেশনের শিক্ষার্থী ছিলেন। কুশা বড়ুয়া রাঙামাটি মেডিকেল কলেজে অধ্যয়নকালীন সময়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটিতে সদ্য ‘নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের’ কমিটি না থাকলেও শাখা ঘোষণা করেছিল কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ।
কুশ বড়–য়া অর্ণবের ঘনিষ্ঠজনরা জানিয়েছেন, সরকারি চাকরিতে কোটাপ্রথা বৈষম্য বাতিলের দাবিতে জুলাইয়ের ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের পক্ষে ভূমিকা নেন সাবেক ছাত্রলীগ নেতা কুশ বড়–য়া অর্ণব। এনিয়ে সে সময় দলীয় নেতাকর্মীদের কাছেও তোপের মুখে পড়েছেন কুশ। ছাত্র জীবনে ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকলেও জুলাই আন্দোলনে দলের রাজনৈতিক অবস্থানের বিপক্ষে দাঁড়ায় সে।
প্রত্যয়নপত্র প্রসঙ্গে জানতে চাইলে রাঙামাটি জেলা জামায়াতের আমীর মুহাম্মদ আব্দুল আলীম বলেন, ‘৩ তারিখে দেওয়া প্রত্যয়নপত্রটিও সত্য, ৪ তারিখে দেওয়া পত্রটিও সত্য। আমাদের পরিচিত কয়েকজন লোক এসে আমার ব্যস্ততার ফাঁকে তারা রিকুয়েস্ট করল একটা প্রত্যয়নপত্র দেওয়ার জন্য। পরিচিত এই ভদ্রলোকের রিকুয়েস্টে আমি দিয়েছি (প্রত্যয়নপত্র), পরে জানলাম যে সে ছাত্রলীগের নেতা, সন্ত্রাস। আমি এর পরদিন আবার এটা বিরুদ্ধে লিখে দিছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘এটা আমাদের সরলতার সুযোগে বিভিন্ন স্বার্থানেষীমহল সুযোগ নিয়েছে। আমরাও মানুষকে বিশ্বাস করিতো এটাই সমস্যা। এখন আমরাও একটু সতর্ক হইলাম আরকি। মানুষের উপকার করতে হলে ভবিষ্যতে আমাদের আরও বেশি যাচাই-বাছাই করতে হবে।’