বান্দরবানের রুমা উপজেলায় সেনাবাহিনীর অভিযানে যা পাওয়া গেল খাগড়াছড়িতে আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদকসহ ৩ জন কারাগারে রুমা উপজেলার দুর্গম পাহাড়ে কেএনএফের আস্তানায় অভিযান, বিপুল অস্ত্র উদ্ধার রাঙামাটির অর্ন্তবর্তীকালীন জেলা পরিষদকে প্রত্যাখান করেছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ আদালত থেকে পিপি ও জেলা পরিষদ থেকে আওয়ামীলীগের দোসরদের প্রত্যাহারের দাবি
কৌশিক দাশ, সীমান্ত থেকে ফিরে, বান্দরবান। মিয়ানমারের জান্তা বাহিনীর সঙ্গে বিদ্রোহীদের লড়াইয়ে গোলাগুলি, মর্টারশেল ও বোমা বিস্ফোরণের শব্দে কাঁপছে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম ইউনিয়নের পুরো সীমান্ত এলাকা।
বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম ইউনিয়নের সীমান্ত এলাকায় এখন প্রতিনিয়ত গোলাগুলি ও মর্টারশেলের বিকট শব্দে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ছে চারদিকে। বিশেষ করে তুমব্রু এলাকার জলপাইতলীতে দুজনের মৃত্যুমে ঘুমধুম-তুমব্রু সীমান্তে এখন থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। অনেকে নিজ ঘর ও গ্রাম ছেড়ে আশ্রয়কেন্দ্র ও আত্মীয়ের বাড়ি চলে যাচ্ছে।
ঘুমধুম ইউনিয়নের তুমব্রু এলাকার বাসিন্দা মো.আবদুল্লাহর সাথে কথা হলে তিনি জানান, মিয়ানমারের তুমব্রু রাইট ক্যাম্প সীমান্ত চৌকিটি বাংলাদেশের বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার লোকালয়ের একদম কাছাকাছি। ঢেঁকিবনিয়া সীমান্ত চৌকি থেকে বাংলাদেশের লোকালয় প্রায় ৫০০ মিটার দূরে। এ কারণে তুমব্রু রাইট ক্যাম্পে গোলাগুলির সময় বাংলাদেশের বসতঘরে গুলি ও মর্টার শেল এসে পড়েছে। তিনি আরো বলেন,গত কয়েকদিন ধরে সীমান্তের ওপারে প্রচুর গোলাগুলি হচ্ছে , আর গোলাগুলির ভয়ে আমাদের পরিবারের সবাই বাড়ী ছেড়ে অন্যত্র চলে গেছে।
তুমব্রু এলাকার সীমান্তের পাশে দীর্ঘ ২০বছর ধরে বসবাস করে আসছে মো.আকতার, তিনি জানান পরিবারের সবাইকে আশ্রয়কেন্দ্রে রেখে এসেছি। দিনের বেলায় বাড়ীতে গরু ছাগল চুরি হবে তাই পাহারা দিই,আর সন্ধ্যা হলে আমি দূরের আত্মীয়র বাড়ী চলে যায়।
ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো.জাহাঙ্গীর আজীজ বলেন, সীমান্তের পরিস্থিতি দিন দিন অবনতি হচ্ছে। মিয়ানমারের অভ্যন্তরে কখনো একনাগাড়ে কখনো থেমে থেমে গুলি হচ্ছে , আর ওপারের গুলি আর মর্টার শেল এসে আমার ইউনিয়নের কয়েকজনের মৃত্যুর পাশাপাশি কয়েকজন আহত হয়েছে। মো.জাহাঙ্গীর আজীজ আরো বলেন,সাধারণ জনগণের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে আমার ইউনিয়নের ১নং উত্তর ঘুমধুম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়কে আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ঘোষনা করা হয়েছে এবং সাধারণ জনগণকে সেখানে গিয়ে আশ্রয় গ্রহণের অনুরোধ জানানো হচ্ছে। তিনি আরো জানান, ৬ ফেব্রুয়ারি (মঙ্গলবার) বিকেল থেকে ঘুমধুম,তুমব্রু ও কোনাপাড়ার প্রায় শতাধিক জনসাধারণ আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছে।
সীমান্তের এই সংঘাত ঘিরে ঘুমধুম-তুমব্রু সীমান্তের পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে, তাই বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তের ২৪০পরিবারকে আশ্রয়কেন্দ্রে সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে বান্দরবানের জেলা প্রশাসক শাহ মোজাহিদ উদ্দিন।
মঙ্গলবার (৬ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে তিনি বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম সীমান্ত এলাকা পরিদর্শনে গিয়ে ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদের সামনে স্থানীয় প্রশাসনকে এই নির্দেশনা প্রদান করেন। পরে জেলা প্রশাসক সাংবাদিকদের সাথে কথা বলেন এবং জানান, বান্দরবান-মিয়ানমার সীমান্তে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে চলমান পরিস্থিতির কারণে শিক্ষার্থী ও সীমান্তে অতি ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় বসবাসকারী ২৪০ পরিবারকে নিরাপদ আশ্রয়ে নিতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত সীমান্তবর্তী স্কুলগুলো বন্ধ রাখা হবে। তিনি আরো বলেন, আসন্ন এসএসসি পরীক্ষার কেন্দ্র প্রয়োজনে ঘুমধুম থেকে পরিবর্তন করে নাইক্ষ্যংছড়ি সদরে নেয়া হবে। এসময় তিনি সাংবাদিকদের এই সময়টা আরো সর্তক হয়ে সংবাদ পরিবেশন করার পাশাপাশি সীমান্তের যেকোন স্থানে বিস্ফোরিত ও অবিস্ফোরিত যেকোন আগ্নোয়াস্ত্র থেকে দুরত্ব থেকে অবস্থান করে সংবাদ সংগ্রহের অনুরোধও জানান।
এই সময় জেলা প্রশাসকের সাথে ছিলেন বান্দরবানের পুলিশ সুপার সৈকত শাহীন। সীমান্তের বিষয় নিয়ে সাংবাদিকরা তার কাছে জানতে চাইলে পুলিশ সুপার সৈকত শাহীন বলেন, জেলা প্রশাসনসহ সকল আইনশৃঙ্খলা বাহিনী একসঙ্গে কাজ করছে। সীমান্তে অনুপ্রবেশ ঠেকাতে ইতোমধ্যে জনবল এবং গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে, এছাড়া স্থানীয় জনসাধারণকে নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়ে যেতে সর্বাত্মক সহযোগিতা করা হচ্ছে।
প্রসঙ্গত: গত কয়েকদিন ধরে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে সশস্ত্র বিভিন্ন গ্রুপের সঙ্গে মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) সদস্যদের সংঘর্ষ বেড়ে গেছে আর তাদের সংঘর্ষের মধ্যে নিক্ষিপ্ত মর্টারশেলে গেল ৫ফেব্রুয়ারী বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির তুমব্রুর জলপাইতলীতে ২জনের মৃত্যু হয়।