প্রকাশঃ ২৬ ডিসেম্বর, ২০২২ ১০:৩২:১৫
| আপডেটঃ ২৫ নভেম্বর, ২০২৪ ১০:২৭:১৯
সিএইচটি টুডে ডট কম ডেস্ক। খাগড়াছড়িতে ইউপিডিএফের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন করা হয়েছে। “স্বায়ত্বশাসনই মুক্তির পথ! শাসকচক্রের পাতানো ফাঁদ থেকে সাবধান, মনোহারী আশ্বাস-প্রতিশ্রুতিতে বিভ্রান্ত হবেন না! জাতীয় অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ইউপিডিএফ-এর পতাকাতলে সমবেত হোন, লড়াই জোরদার করুন’ শ্লোগান সম্বলিত ব্যানারে সোমবার সকালে এক সংক্ষিপ্ত সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
এ সময় ছোট ছোট পতাকা হাতে দু’শতাধিক উৎফুল্ল শিশু-কিশোর ‘লঙ লঙ, লঙ লিভ ইউপিডিএফ’ ধ্বনি দিয়ে স্বাগত জানায়, এতে অনুষ্ঠানে সমবেতরা সংগ্রামী প্রেরণায় আন্দোলিত হয়। অনুষ্ঠানস্থল উৎসবমুখর হয়ে ওঠে।
পতাকা অভিবাদন জানানো শেষে মঞ্চের মাঝখানে বিশেষভাবে নির্মিত অস্থায়ী স্মৃতিস্তম্ভে ইউপিডিএফ-এর খাগড়াছড়ি জেলা ইউনিটের পক্ষে চৌকস টিমের সদস্য সংঘ মিত্র চাকমা ও কর্নিয়া চাকমার পুষ্পস্তবক অর্পণের পরে অংশগ্রহণকারী সকলে একে একে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে পার্বত্য চট্টগ্রামসহ বিশ্বের নিপীড়িত জাতি ও জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে আত্মোৎসর্গকারী সকল শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা ও সম্মান জানাতে সাইরেন বাজিয়ে দুই মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। নিরবতা পালন শেষে অংগ্য মারমার পরিচালনায় পার্টি, গণফ্রন্ট ও স্থানীয়রা লড়াই সংগ্রাম এগিয়ে নেয়ার লক্ষ্যে মুষ্টিবদ্ধ হাতে প্রতিজ্ঞা করেন।
সংক্ষিপ্ত সমাবেশের শুরুতে ইউপিডিএফ কেন্দ্রীয় সভাপতি প্রসিত বিকাশ খীসার লিখিত বার্তা পড়ে শোনানো হয়। কর্মীবাহিনী ও জনগণের উদ্দেশ্যে দেয়া বার্তায় প্রসিত খীসা বলেন,“১৯৯৮ সালের ২৬ ডিসেম্বরের আগের পার্বত্য চট্টগ্রাম এবং পরের পার্বত্য চট্টগ্রাম ভিন্ন।” বার্তায় তিনি দুই যুগ পূর্তি উপলক্ষে গৃহীত কর্মসূচি ভেস্তে দিতে সেনা-গোয়েন্দা সংস্থার অপতৎপরতাকে সমালোচনা করে বলেন, ২৬ ডিসেম্বরকে কেন্দ্র করে স্ব স্ব অঞ্চলে বিপুল উৎসাহ উদ্দীপনার সাথে ছাত্র-যুবসমাজ কর্তৃক সেতু-পুল নির্মাণ, পাড়া-গ্রাম, হাটবাজার ও রাস্তাঘাট পরিষ্কার অভিযান, পরিবেশ রক্ষার্থে পলিথিন-প্লাস্টিক কুড়িয়ে পোড়ানো, গণশৌচাগার নির্মাণ, যা ইতিপূর্বে ছিল অকল্পনীয় ব্যাপার তা স্বতঃস্ফূর্ত ও সফলভাবে বাস্তবায়িত হচ্ছে।
পোস্টার ছিঁড়ে দেয়া, ওঁৎ পেতে থেকে পোস্টারিং-এর টিমের ওপর হামলা, দেয়াল লিখন মুছে দেয়া, সেতু উদ্বোধনে বাধা প্রদান, সদ্য নির্মিত টয়লেট ধ্বংস করে দেয়ার মতো অসভ্য ঘৃণ্য কাজও হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়ার কথাও তিনি তার বার্তায় উল্লেখ করেন।
প্রদত্ত বার্তায় প্রসিত খীসা আরও বলেন, ‘পাহাড়ের যুব-জনতা পোড় খেয়ে আরও অভিজ্ঞ ও সমৃদ্ধ হয়ে নিজেদের পাড়া-গ্রামকে আদর্শ গ্রামে পরিণত করবে। বিজয় অর্জনের ভিত্তি গড়ে তুলবে। বাধা দিয়ে হামলা করে ছাত্র-যুব-জনতাকে তাদের ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করা যাবে না। পার্বত্য চট্টগ্রামের শিশু-কিশোরদের মনে যে চেতনার আগুন জ্বলছে, তা কখনও নিভিয়ে দেয়া যাবে না।’
সভায় খাগড়াছড়ি ইউনিটের সংগঠক অংগ্য মারমা বলেন, পূর্ণস্বায়ত্তশাসনই পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ি জনগণের একমাত্র মুক্তির পথ।
পার্বত্যবাসীকে এই অধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে যুক্ত হয়ে দাবি আদায়ের সংগ্রামকে বেগবান করে সু-সংগঠিতভাবে এগিয়ে নিতে হবে।
অংগ্য মারমার বক্তব্যের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের প্রথম পর্বের সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়।
ইউপিডিএফ-এর দুই যুগপূর্তি অনুষ্ঠান পালিত হয়েছে। স্বনির্ভর এলাকা থেকে বেলুন উড়ানো হয়। নিরাপত্তা ও অন্যান্য দিক বিবেচনায় নিয়ে মূল অনুষ্ঠানস্থলে নির্ধারিত কর্মসূচি সংক্ষিপ্ত করা হয়। সেনা টহল ও মারমুখী অবস্থানের কারণে নির্দিষ্ট সময়ের পরে বেলুন উড়ানো হয়। সংগীতানুষ্ঠানও খুবই সংক্ষিপ্ত করা হয়।
পুরো অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করেন পিসিপি’র সাবেক সভাপতি বিপুল চাকমা। তিনি বাংলা ও চাকমা ভাষায় ধারা বর্ণনা দেন। তাকে মারমা ভাষায় ধারা বর্ণনায় সহায়তা করে ঈশিতা বসু ও ত্রিপুরা ভাষায় ধারা বর্ণনায় সহায়তা দেয় শিউলী ত্রিপুরা।
সমাবেশে অন্যান্যের মধ্যে আরো উপস্থিত ছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী সংঘের কেন্দ্রীয় সভাপতি কণিকা দেওয়ান, হিল উইমেন্স ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সভাপতি নীতি চাকমা, বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অমল ত্রিপুরা ও গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের খাগড়াছড়ি জেলা শাখার সভাপতি ক্যামরন দেওয়ান প্রমুখ।
খাগড়াছড়ি জেলা সদর ছাড়াও জেলার পানছড়ি, দীঘিনালা, মাটিরাঙ্গা, গুইমারা, রামগড়, মহালছড়ি, ল²ীছড়ি এবং রাঙামাটি জেলার কাউখালী, নান্যাচর, কুদুকছড়ি, বাঘাইছড়ি ও সাজেকে ইউপিডিএফ’র দুই যুগপূর্তি উপলক্ষে বিভিন্ন কর্মসূচি পালিত হয়েছে।