শুক্রবার | ২২ নভেম্বর, ২০২৪

পাহাড় মেতেছে “বৈসাবি” উৎসবে

প্রকাশঃ ১০ এপ্রিল, ২০১৮ ১২:১৮:১২ | আপডেটঃ ১৭ নভেম্বর, ২০২৪ ০৭:৫৩:৪৮

সিএইচটি টুডে ডট কম, রাঙামাটি। পার্বত্য চট্টগ্রামের বসবাসরত ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র নৃ গোষ্ঠীসমূহ  তথা ১১টি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জাতি সত্বার প্রধান সামাজিক উৎসব বিজু, সাংগ্রাইং,বৈসুক, বিষু, বিহু উপলক্ষে আনন্দে মেতে উঠেছে পার্বত্য চট্টগ্রাম। মূলত: ১২,১৩ ও ১৪ এপ্রিল বিঝু বা বৈসাবি উৎসব হলেও এর আগ থেকে বিভিন্ন সংগঠন নানা অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করে থাকে।প্রতি বছরের মত এ বছরও রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান পার্বত্য জেলার বিভিন্ন উপজেলায় বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের উদ্যেগে চলছে বিজু, সাংগ্রাইং,বৈসুক, বিষু, বিহু উপলক্ষে আদিবাসী নাচ, গান ও সংস্কৃতি অনুষ্ঠান। এসব অনুষ্ঠানের মধ্যে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র নৃ- গোষ্ঠী তথা আদিবাসী সমাজ তাদের কৃষ্টি কালচার ঐতিহ্য তোলে ধরছেন। প্রতি বছর বিজু উৎসবে পার্বত্য অঞ্চল সাজে ভিন্নসাজে, নতুন আঙ্গিকে। মনে জাগায় শিহরন, নব প্রেরণা ও উৎসাহ। সৃষ্টি হয় নতুন আমেজ, রচিত হয় মানুষে মানুষে মিলন মেলা। দোলা দেয় আনন্দ।চৈত্র সংক্রান্তিতে বাংলা বর্ষ বিদায় ও বর্ষবরণ উপলক্ষে পার্বত্য জেলা সমূহে আয়োজিত এ মহৌৎসবকে চাকমা সম্প্রদায়ের লোকজন চৈত্রের শেষ দু’দিন আর পহেলা বৈশাখ এই দিনদিন বিজু উৎসব পালন করে থাকে। তাদের মতে প্রতিবছরই একটি পাখির বিঝু-বিঝু ডাক সবাইকে বিঝু উৎসবে আগাম আগমনী বার্তা জানিয়ে দেয়। এরপর তারা বিঝু উৎসবের প্রস্তুতি গ্রহণ করে। তারা প্রথম দিনকে ফুল বিঝু, দ্বিতীয় দিনকে মুল বিঝু এবং তৃতীয়দিনকে গোজ্যপোজ্যা দিন হিসেবে পালন করে থাকে। উৎসবের শেষদিন এবং বছরের প্রথমদিনটিতে অতীতে সবাই প্রচুর মদ খেত এবং বিশ্রাম করত তাদের বিশ্বাস বছরের প্রথমদিনটি ভালো খাওয়া-দাওয়া করে হাসি গল্প করে কাটাতে পারলে বাকি দিনগুলো ভালো যাবে। এই তিনদিন তারা যে কোন প্রাণী হত্যা থেকে বিরত থাকে।
মারমা সম্প্রদায়ের লোকজন বৈসাবীকে সাংগ্রাই উৎসব হিসেবে পালন করে থাকে। পুরানো বছরের শেষদিন এবং নতুন বছরের প্রথমদিনই সাংগ্রাই উৎসবের দিন হিসেবে তাদের কাছে বেশ গুরুত্বপুর্ণ। পুরানো বছরের শেষ তিন দিনের প্রথমদিন নারী-পুরুষ সবাই মিলে বৌদ্ধ মুর্তিগুলোকে নদীর ঘাটে নিয়ে যায় এবং নধীর ঘাটে ভেলা তৈরি করে মুর্তিগুলোকে পানি বা দুধ পানিতে স্নান করায়। পরের দু’দিন মারমা জনপদে নেমে আসে আনন্দের বন্যা। ওই দুইদিন পাড়ায় পাড়ায় চলে পানি খেলা বা জল উৎসব। একে অপরের গায়ে পানি ছিটিয়ে পুরানো বছরের ব্যর্থতা, গ্লানি ও দুঃখকে ধুয়ে-মুছে দেয়। অন্যানাবারের মত এবারো পাড়ায় পাড়ায় ওই উৎসবের আয়োজন চলছে।
ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের লোকজন বৈসাবীকে বৈইসুক উৎসবের মধ্যে দিয়ে পুরাতন বছরকে বিদায় এবং নতুন বছরকে স্বাগত জানায়। এই উৎসবে হাসি, আনন্দ এবং নৃত্য সঙ্গীতের পাশাপাশি শিবের আর্শীবাদ কামনা করা হয়। ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের লোকজন তিন পর্বে বৈইসু পালন করে থাকে। এর মধ্যে রয়েছে “হারি বৈইসু’। এইদিন প্রতিটি ত্রিপুরা পরিবারই গবাদি পশুদের গোসলের আয়োজন এবং বিভিন্ন ফুলের মালা দিয়ে তাদের সাজিয়ে রেখেছিল। ‘বিসুমা’ চৈত্র সংক্রান্তির দিনকে তারা বিদায়ী দিবস হিসেবে পালন করে থাকে। ওইদিন মুখরোচক খাদ্য হিসেবে পাঁচন রান্না করা হয়। ওইদিন অতিথিদেরকে পাচন ও মদ দিয়ে আপ্যায়ন করা হয়। নববর্ষের দিনকে ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের লোকজন ‘বিসিকাতল’ হিসেবে পালন করে। ওইদিন ত্রিপুরা নবদম্পত্তিরা ও যুবক-যুবতীরা নদী থেকে কলসী ভরে পানি এনে গুরুজনদের স্নান করিয়ে আর্শীবাদ নেয়। ওই সময় ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের লোকজন পাড়ায় পাড়ায় গড়াইয়া নৃত্যের আয়োজন করে।
মূলত তিনদিন ধরে পাহাড়িদের প্রতিটি ঘরে ঘরে আয়োজন করা হয় বর্নাঢ্য অনুষ্ঠান ও রকমারি আপ্যায়ন। ধনী, গরিব, মেহনতি ও খেটে খাওয়া মানুষসহ সর্বশ্রেণীর লোকজন যার যে সাধ্যমত উৎসবের আয়োজন করে থাকে। উৎসবে জাতিগত, শ্রেণীগত, লিঙ্গগত কোন বৈষম্য বা ভেদাভেদ থাকে না। এতে একাকার হয় সর্ব শ্রেণীর, সব জাতি-গোষ্ঠির নারী-পুরুষ। চাকমা রীতি অনুযায়ী প্রথম দিনকে ফুল বিজু, দ্বিতীয় দিনকে মূল বিজু এবং তৃতীয় দিনকে (১লা বৈশাখ)গোজ্যাপোজ্যা দিন অর্থাৎ বর্ষবরণ বা নববর্ষ উৎসব। বৈসাবি উৎসবের মধ্য দিয়ে পাহাড়ীরা পুরানো বছরকে বিদায় জানায় আর নতুন বছরকে বরন করে নেয়। সবার কামনা থাকে পুরানো বছরের গ্লানি,র্ব্যথতা,হিংসা,বিদ্বেষ মুছে যাক নতুন বছর ভালোবাসা, সাফল্য আর সম্প্রীতির হোক।  



এইমাত্র পাওয়া
আর্কাইভ
সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত, ২০১৭-২০১৮।    Design & developed by: Ribeng IT Solutions