রাঙামাটির বরকলে বিএনপি উপজেলা কার্যালয় উদ্বোধন রাঙামাটিতে লোকনাথ ব্রহ্মচারী যোগাশ্রম’র পরিচালনা পরিষদের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন নতুনভাবে সাজানো হবে বান্দরবান জেলা পরিষদ : অধ্যাপক থানজামা লুসাই সাফ বিজয়ী কন্যাদের রাঙামাটিতে সংবর্ধনা দেয়া হবে শনিবার আদালতের এজলাসে ২ আইনজীবীর বাকবিতন্ডা, আইনজীবীর চেম্বারে হামলার অভিযোগ
কৌশিক দাশ, সিএইচটি টুডে ডট কম, বান্দরবান। পুরাতন বছরকে বিদায় আর নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে প্রতিবছরই পার্বত্য এলাকা বান্দরবানের মারমা সম্প্রদায় ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনার সাথে উদযাপন করে সাংগ্রাই উৎসব। পার্বত্য চট্টগ্রামের তিন জেলার ১১টি ক্ষুদ্র নৃ গোষ্টির পাহাড়ি জাতিসত্ত্বার মধ্যে মারমা জনগোষ্ঠী সাংগ্রাই নামে এ উৎসব পালন করে। পুরোনো বছরকে বিদায় জানিয়ে নতুন বছরের আগমনের পূর্বে তাই পার্বত্য জেলা বান্দরবানের মারমা সম্প্রদায় নতুন বর্ষকে বরণ করে নিতে নিচ্ছে ব্যাপক প্রস্তুতি।প্রতি বছর নানা আয়োজনে মারমা সম্প্রদায় এই বাংলা নর্ববষ পালন করে থাকে আর মারমা ভাষায় এই উৎসবকে বলা হয় সাংগ্রাই উৎসব। মুলত তিন পার্বত্য জেলার মধ্যে বান্দরবানেই মারমা সম্প্রদায়ের জনসংখ্য বেশি , তাই বান্দরবানে মুলত এই সাংগ্রাইকে ঘিরে কয়েকদিন চলে বর্ণিল আয়োজন ।কদিন বাদেই সাংগ্রাই উৎসব তাই নতুন পোষাক আর নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস কিনতে ভিড় পড়েছে স্থানীয় বাজারগুলোতে, জেলার বিভিন্ন উপজেলা এবং গ্রামের আদিবাসীরা ভিড় জমিয়েছে স্থানীয় মার্কেটগুলোতে। শেষ মহুর্তের বেচাকেনায় দারুণ খুশি ক্রেতা বিক্রেতারা।
বান্দরবান সদরের হ্লা হ্লা মার্কেট,বার্মিজ মাকেট,চৌধুরী মার্কেটসহ বিভিন্ন মার্কেটে এখন ক্রেতাদের পদচারনায় মুখরিত। বান্দরবান সদরের ঝর্না বার্মিজ মার্কেটের বার্মিজ স্টোরের প্রোপাইটার ক্যাচিং অং মারমা জানান, প্রতিবছরের মত এবারে ও আমাদের দোকানে বেচাকেনা বেশ ভালো হচ্ছে। সামনে নববর্ষ আর আদিবাসীদের উৎসব তাই প্রতিদিনই দোকানে নানা রকমের ক্রেতা আসছে আর আমরা মালামাল বিক্রি করে ভালো লাভবান হচ্ছি ।
বিক্রেতা অং চিং জানান,মারমা সম্প্রদায়ের সাংগাইকে ঘিরে আমাদের ব্যবসা জমজঁমাট হয়ে ওঠেছে। সারা বছরের চেয়ে এই সময়টা বিক্রি বেশি আর ক্রেতাদের পছন্দ অনুযায়ী আমরা মালামাল বিক্রি করতে পারছি ।
সাংগ্রাই উপলক্ষে বাজার করতে আসা মনুচিং মারমা জানান, পরিবারের সকলের জন্য বাজার করতে এসেছি ,মা বাবা ও সন্তানদের নতুন পোষাক কিনে দেব আর নিজের জন্য কিছু একটি ক্রয় করবো।
নানা আয়োজনে ১৩ এপ্রিল সকালে বান্দরবান রাজার মাঠ থেকে বর্ণাঢ্য মঙ্গল শোভাযাত্রার মাধ্যমে শুরু হবে সাংগ্রাই উৎসবের ,আর শোভাযাত্রা শেষে অনুষ্টিত হবে বয়জ্যেষ্ঠ পূজা। ১৪ এপিল বিকেলে পবিত্র বুদ্ধ মূর্তি স্মান,রাতব্যাপী পিঠা তৈরি উৎসব,১৫ এপিল বিকেলে মৈত্রি পানি বর্ষন,ঐতিহ্যবাহী খেলাধূলা, সাংস্কৃতিক অনুষ্টান ও সবশেষে ১৬ এপিল সন্ধ্যায় বিহারে বিহারে সমবেত প্রার্থনার মধ্য দিয়ে সমাপ্তি ঘটবে মারমা সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যবাহী এই সাংগ্রাই উৎসবের।
এদিকে প্রতিছরের ন্যায় এবারো ও নতুন বছরকে বরণ আর পুরনোকে বিদায় জানিয়ে সাংগ্রাই উৎসবকে আরো প্রাণবন্ত করে তুলতে বিভিন্ন কর্মসুচী হাতে নিয়েছে সাংগ্রাই উদযাপন কমিটি, আর এই সাংগ্রাই উৎসবের মধ্য দিয়ে আদিবাসী সম্প্রদায়ের পাশাপাশি বাঙ্গালীদের অংশগ্রহনে জাঁকজমকপূর্ণ আয়োজনের পূণ্যতা ঘটবে এমটাই আশা আয়োজকদের।
বান্দরবান সাংগ্রাই উদযাপন কমিটির সাধারণ সম্পাদক কো কো চিং মারমা জানান, প্রতিবছরের চেয়ে এবারে আমরা জাকঁজমকভাবে আমাদের সাংগ্রাই উৎসব উদযাপন করবো।আমাদের এবারের অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং এমপি। অনুষ্টানে জেলা প্রশাসক মো:আসলাম হোসেন,পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জাকির হোসেন মজুমদারসহ প্রশাসনের উর্ধতন কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে ।
এদিকে পার্বত্য এলাকায় এই ধরণের বর্ণাঢ্য আয়োজনে সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে নেয়া হয়েছে ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা। বান্দরবান সদর থানার অফিসার ইনচার্জ(ওসি) মো:গোলাম ছরোয়ার জানান, এবারের অনুষ্ঠানকে ঘিরে আমাদের পুলিশের পক্ষ থেকে ব্যাপক নিরাপত্তা নেয়া হয়েছে। শহরের গুরত্বপূর্ণ এলাকায় পোষাকে,সাদা পোষাকে পুলিশের অতিরিক্ত সদস্য মোতায়েন থাকবে। তিনি আরো জানান, কেউ যাতে অনুষ্ঠান চলাকালীন কোন সমস্যা সৃষ্টি করতে না পারে তার জন্য পুলিশের প্রতিটি সদস্য কাজ করবে।
বান্দরবান জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের নেজারত ডেপুটি কালেক্টর(এনডিসি) মো:আলী নুর খান জানান,বাঙ্গালীদের নববর্ষ পালন আর মারমা সম্প্রদায়ের সাংগ্রাই উৎসবকে ঘিরে পার্বত্য জেলা সেজেছে নতুন সাজে। পাহাড়ের এই এতিহ্যবাহী অনুষ্ঠানগুলোতে সকল সম্প্রদায়ের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার জন্য বান্দরবান জেলা প্রশাসন কয়েকদিনব্যাপী বিভিন্ন অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করেছে। তিনি আরো জানান,নববর্ষ পালন আর সাংগ্রাই উৎসবে নিরাপত্তা প্রদানের জন্য পুলিশের পক্ষ থেকে পর্র্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে এবং ওই সময়ে জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেটরা সার্বিক নিরাপত্তায় কাজ করবে।
উৎসবমূখর পরিবেশে এবারের আয়োজন আরো জমজমাট হবে আর নতুন বছর অতীতের সকল দু:খ কষ্টকে মুছে দিয়ে সবার জীবনে বয়ে আনবে অনাবিল সুখ শান্তি এমনটাই প্রত্যাশা সকলের।