খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদে ন্যস্ত প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগের
নিয়োগ পরীক্ষার উত্তরপত্রে শনাক্তকরণ সংকেতে পরীক্ষার্থীরা শঙ্কিত
প্রকাশঃ ০৮ এপ্রিল, ২০২২ ১১:১৪:২৩
| আপডেটঃ ২৫ নভেম্বর, ২০২৪ ০৮:৫৩:১১
সিএইচটি টুডে ডট কম, খাগড়াছড়ি। খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদে ন্যস্ত প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগের সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার উত্তরপত্রে পরীক্ষার্থী শনাক্তকরণে সংকেত ব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে। নিয়োগ কর্তৃপক্ষের প্রণীত উত্তরপত্রে এমন ভুলে পরীক্ষার্থীরা বিভ্রান্তিতে পড়লে তার আড়ালে সাংবাদিকসহ পর্যবেক্ষকদের কেন্দ্রে প্রবেশে নিষিদ্ধ করা হয়। শুক্রবার দুপুর ২ টা ৩০ মিনিট থেকে শুরু হওয়া শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় এসব ভুল ত্রুটির অভিযোগ উঠে। তবে এসব ভুলে উত্তরপত্র মূল্যয়নে কোন সমস্যা হবে না বলছেন পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি ও স্থানীয় শিক্ষা বিভাগ।
তবে সাংবাদিক সহ অন্যান্য পর্যাবেক্ষকদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা কেন তার কোন সদুত্তর দিতে পারেনি কেউ। তবে এত অভিযোগ উঠলেও এ সব বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও নিয়োগ কমিটির আহ্বায়ক মংসুইপ্রু চৌধুরী।
খাগড়াছড়ি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে নুকুল চাকমা নামে এক পরীক্ষার্থী অভিযোগ করেন, পরীক্ষা শুরুর কয়েক মিনিটের মধ্যে পরীক্ষার্থীদের কাছে সরবরাহ করা ৬০ নম্বরের নৈব্যক্তিক উত্তর পত্রের উপরে পরীক্ষার্থীর নাম, রোল নং ও উপজেলার নাম লেখা ছিল। নির্দেশিত অংশে আমরা তা পূরণ করি। কিছুক্ষণ পরে শিক্ষকরা এসে বিষয়টি দেখতে পেয়ে উত্তর পত্র জব্দ করেন। পরে অন্যান্যরা তাদের উত্তরপত্রে একই রকম নির্দেশনা রয়েছে দাবি করলে শিক্ষকরা তা মুছে দিতে বলেন এবং আমার উত্তরপত্র ফেরত দেন।
একই কেন্দ্রের আরেক পরীক্ষার্থী আব্দুর রহমান বলেন, বিগত সময়ে শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা নিয়ে নানা অনিয়মের অভিযোগ ছিল। আজকের পরীক্ষায় উত্তরপত্রে এমন কাটাছিঁড়া দেখে শঙ্কিত সঠিক মূল্যয়ন হয় কিনা।
খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় এমন ভুলত্রুটির বিষয় জানাজানি হওয়ার পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনা চলছে। নেটিজেনরা বলছেন, এমন ভুল জেলা পরিষদের কোন কৌশল। নিজেদের নির্ধারণ করা প্রার্থীদের চিহ্নিত করার কৌশল হিসেবে এটি হয়েছে দাবি করে পরীক্ষা বাতিলের দাবিও করেছেন অনেকে।
এ বিষয়ে খাগড়াছড়ি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী কেন্দ্র সচিব পাশে^শর পাল বলেন, পার্বত্য জেলা পরিষদ কর্তৃপক্ষ প্রশ্নপত্র ও উত্তরপত্র পাঠিয়েছেন। তাদের প্রতিনিধি ছিলেন। উত্তরপত্রে নাম, রোল ও উপজেলার নাম লেখার অংশ দেখে সাথে সাথে তা মুছে দেয়া হয়।
উত্তরপত্রে এই বিভ্রান্তির খবর ছড়িয়ে পড়ায় কেন্দ্রে সাংবাদিক সহ সকল পর্যবেক্ষকদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করেন নিয়োগ পরীক্ষা কর্তৃপক্ষ। খাগড়াছড়ি সদরের টিউফা আইডিয়াল স্কুল কেন্দ্রে বিকেল ৩ টার সময় প্রবেশ করতে গেলে কেন্দ্রের প্রবেশ গেইট বন্ধ পাওয়া যায়। নিরাপত্তা রক্ষীকে প্রবেশের বিষয়টি জানানোর পর তিনি অনুমতি নাই জানিয়ে গেইট খুলতে পারবেনা জানান।
এ বিষয়ে টিউফা আইডিয়াল স্কুলের দায়িত্বে থাকা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট জেসমিন আক্তার বলেন, পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে কেন্দ্রে কাউকে প্রবেশ করতে না দিতে পার্বত্য মন্ত্রণালয়, জেলা প্রশাসন ও পার্বত্য জেলা পরিষদ থেকে নিষেধ করা হয়েছে। আপনারা চাইলে পার্বত্য জেলা পরিষদের কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলতে পারেন।
পরীক্ষা শেষে খাগড়াছড়ি সরকারি কলেজ কেন্দ্রের বাইরে ঊর্মি নামের এক পরীক্ষার্থী অভিযোগ করেন, কেন্দ্রে মোবাইল ফোন বহন নিষিদ্ধ হলেও সরকারি কলেজ কেন্দ্রে অনেকে মুঠোফোন সাথে রেখেছেন। কক্ষের বাইরে ফোন রেখে কানে ব্লু টুথ হেডফোন ব্যবহার করে উত্তরপত্র পূরণ করেছেন। নাম মাত্র পরীক্ষা এটি।
খাগড়াছড়ি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রের বাইরে কয়েকজন পরীক্ষার্থী জানান, উত্তর পত্রে নাম, রোল লেখার বিষয়টি মুছে দিতে বলা হলেও অনেকে ভালো করে মুছেনি। কেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা অনেক শিক্ষক পরীক্ষার্থীদের উত্তর বলে দিয়েছেন।
অভিযোগের বিষয়ে খাগড়াছড়ি প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ফাতেমা মেহের ইয়াছমিন জানান, উত্তরপত্রে ভুল ছিল তা সংশোধন করা হয়েছে। এটি বড় কিছু না।
খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মংসুইপ্রু চৌধুরীর কাছে অভিযোগ গুলোর বিষয়ে জানতে মুঠোফোনে কল করা হলে তিনি ব্যস্ত আছে জানিয়ে কথা বলতে অনাগ্রহ দেখিয়ে ফোন রেখে দেন।
পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়রে উপ-সচিব আবু রাফা মোহাম্মদ আরিফ বলেন, উত্তরপত্রে ভুল হয়েছে সেটি দেখেছি। যারা নাম, রোল ও অন্যান্য তথ্য লিখেছেন তা মুছে উত্তর মূল্যায়নসহ বাকী কার্যক্রম হবে। সাংবাদিকদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করা ও অনিয়মের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি আরও বলেন, পরীক্ষা সুষ্ঠু হয়েছে। কেউ যদি অসুদপায়ের প্রমাণ দিতে পারেন তাহলে অবশ্যই তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেয়া হবে। সাংবাদিকদের প্রবেশ করতে মন্ত্রণালয় থেকে কেউ নিষেধ করেনি। কেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা ম্যাজিস্ট্রেট নিজের সিদ্ধান্তে তা করেছেন।
প্রসঙ্গত, খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের ন্যস্ত শিক্ষা বিভাগে ২৫৮ পদে শিক্ষক নিয়োগের বিপরীতে আবেদন করেছেন ৪ হাজার ১ শ ৬০ জন প্রার্থী।