প্রকাশঃ ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ ০৯:০৬:৩৮
| আপডেটঃ ২০ নভেম্বর, ২০২৪ ০৮:৩৭:৩৩
সিএইচটি টুডে ডট কম, রাঙামাটি। কাল বিশ্ব পর্যটন দিবস। দেশের অন্যান্য স্থানের মত রাঙামাটিতেও পালিত হবে বিশ্ব পর্যটন দিবস। পাহাড় লেক নদী বেস্টিত পর্যটন শহর রাঙামাটিপর্যটন শিল্পের ব্যাপক সম্ভবনা থাকলেও সঠিক পরিকল্পনার অভাবে এখনো পর্যটন শিল্প হিসেবে রাঙামাটি এগোতে পারছে না। সাম্প্রতিক সময়ে পার্বত্য চুক্তি অনুযায়ী পার্বত্য জেলা পরিষদে স্থানীয় পর্যটন কর্পোরেশন হস্তান্তর করা হলেও জেলা পরিষদ প্রত্যাশা অনুযায়ী কোন কাজ করতে পারছে না।
পাহাড় লেক নদী বেস্টিত পর্যটন শহর রাঙামাটি পর্যটন শিল্পের ব্যাপক সম্ভবনা থাকলেও সঠিক পরিকল্পনার অভাবে এখনো পর্যটন শিল্প হিসেবে রাঙামাটি গড়ে উঠতে পারছে না। তবুও প্রতিনিয়ত হাজার হাজার পর্যটক যান্ত্রিক শহরের একটু ক্লান্তি দুর করতে ছুটে আসেন রাঙামাটি। প্রতি সপ্তাহের সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলোতে পর্যটকদের উপচে ভিড় থাকে। সাপ্তাহিক ছুটি কাজে লাগিয়ে বিনোদনের খোঁজে পাহাড়ে আসা পর্যটকদের আনন্দ আর উচ্চলতা সাময়িক সময়ের জন্য হলেও ভূলিয়ে দিচ্ছে জীবনের নানা জটিলতা। শহরের পর্যটন স্পট সুভলং ঝর্ণা,পর্যটন হলিডে কমপ্ক্সে,সুখী নীলগঞ্জ এবং রাজবন বিহার এলাকায় প্রতিনিয়ত ভিড় জমায় বেড়াতে আসা পর্যটকরা। কিন্তু রাঙামাটিতে বেড়াতে আসা পর্যটকরা ২ রাতের বেশী থাকতে পারে না, এখানে পর্যটকদের জন্য কোন বিনোদনের ব্যবস্থা ও পর্যটন স্পট না থাকায পর্যটকরা সর্বোচ্চ ২ রাত থেকে অন্যত্র চলে যান। রাঙামাটিতে বেড়াতে আসা কয়েকজন পর্যটক পাহাড় লেক নদীর অপরুপ সৌন্দর্য্যর কথা বললেও তারা অনেকটা হতাশও হয়েছেন দেখার মত আরো কিছু না থাকায়। সাম্প্রতিক সময়ে পার্বত্য চুক্তি অনুযায়ী স্থানীয় পর্যটন শিল্প পার্বত্য জেলা পরিষদে হস্তান্তর করা হয়েছে, পরিষদ চেয়ারম্যান জানিয়েছেন পর্যটন শিল্প বিকশিত করতে তারা সাজেকে রিসোর্ট ও ১২ শ কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্প নিলেও সেগুলো মন্ত্রনালয়ে আটকে আছে।
ঢাকা থেকে রাঙামাটিতে বেড়াতে আসা পর্যটক আবু জাহের বলেন, বন্ধে আমি ছুটি পেলে দেশে এবং দেশের বাইরে ঘুরতে যাই, রাঙামাটিতে প্রথম আসলাম, পাহাড় লেক আমার খুব ভালো লেগেছে। তবে এখানে শিশু র্প্কা, বিভিন্ন রাইডার ও বসার জায়গা নাই। ঝুলন্ত ব্রীজটি অনেক পুরানো বলে মনে হচ্ছে, কোথাও বসার ব্যবস্থা নাই, এসব আধুনিকায়ন করলে পর্যটকরা বাইরে না গিয়ে রাঙামাটিতে বেড়াতে আসবে।
রাঙামাটির হোটেল মতি মহলের ব্যবস্থাপক শফিউল আযম জানান, রাঙামাটির পর্যটন শিল্প বিকশিত হতে পারছে না, একমাত্র পরিকল্পনার অভাবে, অথচ কি নাই এখানে পাহাড়, লেক, আকা বাকা রাস্তাসহ সবই আছে। পর্যটন কে নিয়ন্ত্রন করবে? জেলা প্রশাসন নাকি জেলা পরিষদ সেটিও নির্ধারন হওয়া দরকার। পাশাপাশি মানুষকে নিরাপদ চলাফেরা করার সুযোগ আর নেতিবাচক প্রচারনা বন্ধ করতে হবে।
তিনি আরো বলেন, পর্যটনকে বিকশিত করতে হলে প্রতিবন্ধকতা দুর করতে হবে এবং আইনী জটিলতা নিরসন করতে হবে। সরকারীভাবে নয় বেসরকারী খাতে ছেড়ে দিল এর উন্নয়ন ঘটবে।
রাঙামাটি পর্যটন কর্পোরেশনের ব্যবস্থাপক সৃজন বিকাশ বড়–যা বলেন, কেবল দালান কোঠা নির্মাণ করে পর্যটক আনা যায় না, দরকার মনোরম ও প্রাকৃতিক পরিবেশ। এই পরিবেশটি রাঙামাটিতে আছে কিন্তু সারা বছর পর্যটক ধরে রাখতে আমাদের কাজ করতে হবে। এখানে শিশু পার্ক, সুইমিং পুলসহ ছোট ছোট রাইড গুলো রাখলে পর্যটকরা আসবে। তিনি আরো বলেন, ৫ মাস ব্যবসা করে বাকি ৭ মাস ব্যবসা হয় না, বসে থাকতে হয়। ৫ মাসের ব্যবসা দিয়ে ৭ মাস পুষিয়ে নেয়া সম্ভব না, কারন আমরা পর্যটকদের কাছ থেকে অন্য জায়গার মত বাড়তি টাকা নেই না। র্ ,
সরকারি বা বেসরকারিভাবে পর্যটন স্পট সৃষ্টি না হলেও গত দেড় বছরে শহরের ডিসি বাংলো এলাকায় বর্তমান এসপির প্রচেষ্টায় পলওয়েপার্ক নামে একটি পর্যটন স্পট তৈরী করা হয়, যেখানে স্থানীয় পর্যটক ও বিনোদন প্রেমীরা বিকালে ভিড় জমায়।
রাঙামাটির পুলিশ সুপার আলমগীর কবির জানালেন, মুলত পরিকল্পনার অভাবে রাঙামাটিতে পর্যটন শিল্প গড়ে উঠছে না, এখানে পর্যটন স্পটের সব ধরনের সুযোগ সুবিধা আছে। কেবল কেবল বড় বড় প্রকল্পের কথা চিন্তা না করে আমরা ছোট ছোট প্রকল্প দিয়েও শুরু করতে পারি। এজন্য রাজনৈতিক সদিচ্ছা ও সমন্বয়ের প্রয়োজন।
পুলিশ সুপার আরো বলেন, রাঙামাটির পর্যটন ও ঝর্না নিয়ে তেমন প্রচার প্রচারনা নেই, প্রচারনা থাকলে পর্যটকরা সারা বছর রাঙামাটিতে আসত।
একই কথা বললেন জেলা প্রশাসক একেএম মামুনুর রশীদ, তিনি বলেন, রাঙামাটিতে উন্নয়ন বোর্ড, জেলা পরিষদ, পৌরসভাসহ বিভিন্ন সংস্থা রয়েছে, একটু প্রশাসনিক এবং রাজনৈতিকভাবে সমন্বিত উদ্যেগ নিলে রাঙামাটিকে পরিপুর্ণ পর্যটন শহরে রুপ দেয়া সম্ভব।
এদিকে ২০১৫ সনে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি অনুযায়ী স্থানীয় পর্যটন জেলা পরিষদে হস্তান্তর করা হয়েছে। ২০১৭ সনে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রনালয় থেকে তিন পার্বত্য জেলা পরিষদে পর্যটন নীতিমালা তৈরি ও পর্যটনের জন্য প্রকল্প তৈরি করতে বলা হয়, সেই অনুযায়ী করলে মন্ত্রনালয় থেকে পর্যটনের জন্য আলাদা কোন বরাদ্দ দেয়া হয়নি।
রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বৃষ কেতু চাকমা জানান,
পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রনালয়ে প্রথমে আমরা ৭শ কোটি টাকার প্রকল্প পাঠাই, সে সময় পার্বত্য সচিব প্রকল্প আরো বড় করতে বললে আমরা পরে ১২শ কোটি টাকার ডিপিপি মন্ত্রনালয়ে পাঠাই, কিন্তু এরপরে মন্ত্রনালয় থেকে বলা হয়, এত টাকা নাই। আমি মন্ত্রী মহোদয়কে বলেছি, আপনি সুপারিশ করে একনেকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠান, উনি বলছেন এটা সম্ভব না, এত টাকা দিবে না। আর পর্যটন উন্নয়নে আমাদের ১২শ কোটি টাকার ডিপিপি এভাবে পার্বত্য মন্ত্রনালয় পড়ে আছে।
চেয়ারম্যান বৃষ কেতু চাকমা আরো বলেন, এরপরও জেলা পরিষদের উন্নয়ন খাত থেকে রাঙামাটির সাজেকে সাড়ে চার কোটি টাকা ব্যয়ে একটি রিসোর্ট করেছি।
চেয়ারম্যান আরো বলেন, পর্যটন জেলা পরিষদে হস্তান্তরিত জেলা পরিষদ প্রতি বছর বিশ্ব পর্যটন দিবস পালন করে, অথচ এই বছর মন্ত্রনালয় থেকে জেলা প্রশাসকের কাছে পর্যটন দিবস পালনের জন্য চিঠি পাঠানো হয়েছে এবং তারা দিবসটি পালন করছে। এভাবে টানা হেঁচড়ার মধ্যে পর্যটন চলছে।
সারা বছর রাঙামাটির পর্যটনকে দেশী-বিদেশী পর্যটকদের কাছে আরো বেশী আকর্ষনীয় করতে হলে পর্যটন খাতে সরকারী-বেসরকারীভাবে উদ্যক্তাদের এগিয়ে আসতে হবে। আর সেই সাথে পর্যটন স্পটগুলোর সুযোগ-সুবিধা ও নিরাপত্তাসহ আকর্ষণীয় করা গেলে একদিকে প্রচুর পর্যটকদের আগমন ঘটবে তেমনি করে অর্থনীতিতে রাঙামাটির পর্যটন শিল্প বিরাট ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে বলে পর্যটন সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।