প্রকাশঃ ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১০:৫৫:৪৯
| আপডেটঃ ২২ ডিসেম্বর, ২০২৪ ০৮:৫৪:২৪
সিএইচটি টুডে ডট কম, রাঙামাটি। রাঙামাটি শহরে 'পাহাড়ি-বাঙালি'দের দুই পক্ষের সংঘর্ষ ও ধাওয়া পাল্টা ধাওয়াকে কেন্দ্র করে রণক্ষেত্র হয়েছে শহরের প্রধান প্রাণকেন্দ্র বনরূপা বাজারসহ হ্যাপির মোড়, বিজন সরণী এলাকা। শুক্রবারের এই হামলা ও সহিংসতায় পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ ভবনে আগুন, হ্যাপির মোড়ের এসকে মার্কেট ও পার্শ্ববর্তী মার্কেটে আগুন, ভাঙচুর, হামলা চালানো হয়েছে।
হামলা ও ভাঙচুর চালানো হয়েছে বনরূপা, হ্যাপির মোড়, বিজন সরণী এলাকার বিভিন্ন দোকানপাটে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসহিংসতার শিকার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও বসতঘরের বেশিরভাগই মালিক পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর মানুষের। তবে বাঙালিদের মালিকানাধীন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ভাঙচুরও চালানো হয়েছে। এছাড়া সড়কের আশপাশে থাকা মোটরসাইকেল, আঞ্চলিক পরিষদ কার্যালয়ের সামনে থাকা নয়টি গাড়িসহ মোটরসাইকেল অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। জেলা শহরের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টের দোকানপাট বন্ধ রয়েছে। শহরজুড়ে ১৪৪ ধারা জারি থাকায় পুলিশ, বিজিবি, র্যাব ও সেনাবাহিনীর টহল অব্যাহত আছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, খাগড়াছড়ির দীঘিনালা উপজেলার বোয়ালখালী বাজারে বৃহস্পতিবার বিকালে দোকানপাটে আগুন-সংঘর্ষ ও রাতভর সংঘর্ষের প্রতিবাদে রাঙামাটি শহরে শুক্রবার সকালে মিছিল বের করে পাহাড়ি শিক্ষার্থীরা। ওই সময় মিছিল থেকে বনরূপা বাজারের মসজিদে 'ইটপাটকেল ছোঁড়া' হয়েছে এমন অভিযোগে পাহাড়ি-বাঙালি দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। এসময় সংঘর্ষ চলাকালে পাহাড়িরা পিছু হটে এবং বাঙালিরা এগিয়ে আসে। এসময় বাঙালিদের জমায়েত থেকে পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর ব্যক্তিদের মালিকানা ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। অনেক বাঙালির ব্যবসা প্রতিষ্ঠানও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সংঘর্ষের ঘটনায় দুই পক্ষের ৫৮ জন রাঙামাটি জেনারেল হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা নিয়েছেন। ভর্তি আছেন ১৯ জন এবং নিহত একজন।
এদিকে, দুপুরের দিকে দুই পক্ষের সংঘর্ষ থামলেও লাঠিসোঁটা হাতে রাস্তায় দুই পক্ষের লোকজনকেই দেখা গেছে। শহরজুড়ে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতির হওয়ায় রাঙামাটি পৌরসভা এলাকায় অনির্দিষ্টকালের জন্য ১৪৪ ধারা জারি করেছে জেলা প্রশাসন। আজ শনিবার রাঙামাটিতে সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষের ঘটনা তদন্ত ও পরিদর্শনে আসবেন অন্তর্র্বতীকালীন সরকারের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব:) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী ও পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা।
রাঙামাটি জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক (আরএমও) ডা. শওকত আকবর জানান, সংঘর্ষের ঘটনায় হাসপাতালে ৫৮ জনকে আহত অবস্থায় আনা হয়েছে। আহত হয়ে ভর্তি আছেন ১৯ জন। নিহত আছেন একজন। তবে তার নাম-পরিচয় জানা যায়নি।
রাঙামাটির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, সেনাবাহিনী, পুলিশ, বিজিবি মাঠে আছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এখন আমাদের নিয়ন্ত্রণে আছে৷ পৌর এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি হয়েছে। ঘটনার সূত্রপাত সম্পর্কে আমরা এখনো গভীরভাবে জানতে পারিনি।
রাঙামাটির জেলাপ্রশাসক মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন খান জানান, শহরের বিভিন্ন এলাকায় বিচ্ছিন্নভাবে বিভিন্ন ঘটনার খবর পাওয়া যাচ্ছে। এখনো সুনির্দিষ্টভাবে কিছু বলা যাচ্ছে না। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে জানা যাবে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। শুক্রবার সংঘর্ষের ঘটনায় রাঙামাটিতে একজন মারা গেছেন। তবে তার নাম-পরিচয় পাওয়া যায়নি। আগামীকাল (শনিবার) স্বরাষ্ট্র ও পার্বত্য উপদেষ্টা রাঙামাটিতে আসবেন।
এদিকে দুপুরে ১৪৪ ধারা জারি ও সেনাবাহিনী, বিজিবি. পুলিশ ও র্যাব মাঠে নামলে উভয় পক্ষের লোকজন সরে পড়ে।