আঞ্চলিক দলগুলোর অস্থিরতার পেছনে আন্তর্জাতিক অপশক্তির মদদ !
প্রকাশঃ ০৭ মে, ২০১৮ ০২:০৬:৪৪
| আপডেটঃ ১৮ নভেম্বর, ২০২৪ ১০:০৭:১৬
শাহ আলম, সিএইচটি টুডে ডট কম, রাঙামাটি। পাহাড়ের রাজনীতিতে অস্ত্রের ঝনঝনানিতে রক্তাক্ত পার্বত্য অঞ্চল। এ যেন এক রক্তের হলি খেলায় মেতে উঠেছে পাহাড়ের রাজনীতি। অভ্যন্তরীণ কোন্দল আর আধিপত্য বিস্তারের জেরে পার্বত্য চট্টগ্রামে রক্তে রঞ্জিত হয়ে, অশান্ত হয়ে পড়েছে সুবজ পাহাড়। আঞ্চলিক দলগুলোর স্বার্থের দ্বন্দ্ব আর প্রাণঘাতি সংঘাতে একের পর এক সংগঠনের জন্ম । পার্বত্য চট্টগ্রামকে আরো সহিংসতার দিকে ঠেলে দিতে যাচ্ছে। আঞ্চলিক দলগুলোর বেপোয়ারা হওয়ার পিছনে আন্তজার্তিক শক্তির মদদ রয়েছে বলে মনে অনেকেই।
১৯৯৭ সালে জনসংহতি সমিতি- জেএসএস’র সাথে শান্তি চুক্তির পর, স্বস্থি ফিরেছিল পাহাড়ে। কিন্তু বছর না ঘুরতেই, সেই চুক্তির বিরোধিতায় জন্ম নেয় ইউনাইটেড পিপলস ডেমক্রেটিক ফন্ট-ইউপিডিএফ নামের আরেকটি সংগঠন। পাহাড়ের আধিপত্য নিয়ে এই দুই সংগঠনের মধ্যে শুরু হয় সংঘাত। সেই হানাহানি আর থামেনি। ‘‘পার্বত্য অঞ্চলের জন্ম থেকে জন্মাতরে, যুগ থেকে যুগান্তরে’’ চলা এই সহিংসতা বন্ধের জন্য ঐতিহাসিক পার্বত্য চুক্তির স্বাক্ষর হয়েছিল। কিন্তু পার্বত্য চুক্তির দুদশকেও পাহাড়ে শান্তি আসেনি। পার্বত্য চট্টগ্রামে অপহরন, গুম, হত্যা, চাঁদাবাজি ও ভ্রাত্বঘাতি সংঘাত চলছেই।
সময়ের সাথে সাথে এই দুই সংগঠন ভেঙ্গে জন্ম নেয় আরও দুটি আঞ্চলিক শাখা। এদের প্রত্যেকেই মরিয়া পাহাড়ের আধিপত্য পাকাপক্তো করতে। যার সবশেষ ঘটনা- দুই দিনে ৬ হত্যাকান্ড। হঠাৎ তাদের বেপরোয়া হওয়ার পেছনে আর্ন্তজাতিক শক্তির মদদ রয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
রাঙামাটির প্রবীন সংবাদিক সুনীল কান্তি দে বলেছেন, প্রথম যখন পাহাড়ে সংগঠন হয়েছিল তখন এখানে আন্তর্জাতিক ছোয়া ছিল। দ্বিতীয় সংগঠনের সময় তারা ভাগ হওয়ার পরে এদিক সেদিক ঘুরাফেরা করে, কারো না কারো ছোয়া নিয়ে, কারো না কারো আশির্বাদ নিয়ে, সংগঠনগুলো টিকে আছে বলে আমরা মনে করি। কিন্তু চারটি আঞ্চলিক সংগঠন যখন হলো তখন বুঝা গেল যে, না তারা কারো না কারো অস্ত্র হিসাবে কাজ করছে। কারো হাতের হয়ে কাজ করা আর কারো আন্তর্জাতিক লিংক নিয়ে কাজ করা এক জিনিস নয়, এটা আমাদের বুঝতে হবে।
অন্যদিকে আঞ্চলিক দলগুলোর সবচেয়ে শক্তিশালি, জেএসএস নেতাদের দাবি, ভ্রান্ত ধারণা এবং ব্যক্তি স্বার্থেই মূল জেএসএস ভেঙ্গে এখন চারটি সংগঠন। যাদের পেছনে কাজ করছে রাষ্ট্রবিরোধী শক্তি উল্লেখ করে জেএসএস’র তথ্য ও প্রচার সম্পাদক সজিব চাকমা বলেন, চুক্তি বাস্তবায়ন যাতে যথাযতভাবে বাস্তবায়ন না হয়, এই ধরনের একটা প্রচেষ্টা, কোন কোন সময় ষড়যন্ত্র, সব সময় এখানে কাজ করেছে। এসব সরকারের মহল ও সরকারের বাহিরের মহল জড়িত আছে বলে আমরা মনে করি।
বাংলাদেশ মানবধিকার কমিশনের সাবেক কমিশনার নিরুপা দেওয়ান বলেন, শান্তি চুক্তি ববাস্তবায়িত না হওয়ায় হতাশা থেকে এবং কিছু মানুষের প্ররোচনায় এসব ঘটনা ঘটছে। আমরা পাহাড়ে সংঘাত চাই না, শান্তি চাই। শান্তি প্রতিষ্ঠায় আঞ্চলিক দল এবং সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে। সংঘাত যে কোন উপায়ে বন্ধ করতে হবে।
কিন্তু রাঙামাটি জেলা আইনজীবি সমিতির সাবেক সভাপতি মোক্তার আহম্মেদ বলেন, অবৈধ অস্ত্র এবং অবৈধ চাঁদার ব্যবস্থা বন্ধ করতে পারলেই এই হত্যা কান্ড অচিরেই বন্ধ হয়ে যাবে।
আইনজীবির সাবেক আরেক সভাপতি এডভোকেট দুলাল কান্তি সরকার বলেন, স্বদিচ্ছা থাকলে বিবাদমান পক্ষগুলোই পাহাড়ে সংঘাত বন্ধ করতে পারে। তবে তার জন্য সরকারের হস্তক্ষেপ চেয়ে নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা বলেন, আঞ্চলিক সংগঠনগুলোতো কোন অবৈধ সংগঠন নয়। তারা সবসময় নির্বাচন করছে। তাহলে যেহেতু তাদের কোন নেতৃত্ব আছে সেহেতু তাদেরকে নিয়ে সরকার উচ্চ পর্যায়ে বৈঠক করে তাদের সাথে একটা সমঝোতার বৈঠক করার প্রয়োজন আছে বলে আমরা মনে করি।
স্থানীয় শীর্ষ আওয়ামীলীগ নেতারা বলছেন, দীর্ঘদিন যাবৎ আমরা বলে আসছি, পাহাড় থেকে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার ও অস্ত্রধারিদের নির্মূল করা হোক। একজন উপজেলা চেয়ারম্যানসহ ৬জন কে প্রকাশ্যে দিনে দুপুরে এইভাবে নির্মমভাবে হত্যা করার পর এখনো কি আমরা চুপ করে থাকবো? এখনো কি আমরা অপেক্ষা করবো ? আমি মনে করি, এটাই সঠিক সময়, এদের বিরুদ্ধে অভিযান চালানোর এবং পার্বত্য চট্টগ্রামকে অবৈধ অস্ত্রমুক্ত করার।
অন্যদিকে পাহাড়ের প্রণঘাতি সংঘাত বন্ধে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর তৎপরতা বাড়ানোর উপর জোর দিচ্ছে পাহাড়ের শান্তিপ্রিয় সাধারণ মানুষ। পাহাড়ের বিবাদমান পক্ষগুলোর জের ধরে গেল পাঁচ মাসেই প্রাণ গেল সতেরো জনের। এই বিরোধ অচিরেই মেটানো না গেলে কিংবা উদ্দ্যোগ না গেলে সবুজ শ্যামল শান্ত পাহাড় আবারো অশান্ত হয়ে উঠবে।
‘‘পার্বত্য অঞ্চলের জন্ম থেকে জন্মাতরে, যুগ থেকে যুগান্তরে’’ চলা এই সহিংসতা কিংবা রাজনৈতিক বন্ধ হয়ে, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যরে সবুজ পাহাড়ে শান্তির সুবাতাস বয়ে আসুক। এই প্রত্যাশা করেন পার্বত্য অঞ্চলের পাহাড়ী-বাঙালী সব সম্প্রদায়ের মানুষ।