প্রকাশঃ ২৩ ফেব্রুয়ারী, ২০১৯ ০১:৩৯:২৩
| আপডেটঃ ২৩ নভেম্বর, ২০২৪ ০৭:১০:০৯
সিএইচটি টুডে ডট কম, রাঙামাটি। পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশেসিং এমপি বলেছেন, পার্বত্য এলাকার ১১টি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র নৃ গোষ্ঠীর কৃষ্টি কালচারকে সমুন্নত রেখে পার্বত্য জেলায় পর্যটন শিল্প বিকাশে সব সংস্থাকে সমন্বয়ের মাধ্যমে কাজ করতে হবে। সমন্বয় না থাকলে অর্থের অপচয় হবে, পর্যটন বিকশিত হবে না, এজন্য প্রয়োজন আন্তরিকতা।
পার্বত্যমন্ত্রী আরো বলেন, পার্বত্য অঞ্চলে পর্যটনের সম্ভাবনা ব্যাপক, আমরা পর্যটন নিয়ে অনেক কথা বলি, কিন্তু পর্যটনের বিষয় যখন আসে তখন দেখা যায় এটা করা যাবে না, সেটা করা যাবে না, এক ধরনের বাধা আসে তাই আমাদের পর্যটক বান্ধব হতে হবে।
তিনি আরো বলেন, পর্যটকরা কেবল পাহাড় পর্বত লেক দেখতে আসে না, এখানকার কৃষ্টি কালচার পরিবেশ, পোশাক, ভাষা কেমন এসব দেখতে আসেন। অনেকে নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন এমন বিষয় টেনে নিয়ে পার্বত্যমন্ত্রী আরো বলেন, পর্যটকরা যেন নিরাপদে ঘুরতে পারে সে জন্য নিরাপত্তা প্রয়োজন, অনেক গাইড রুমা নিয়ে যাওয়ার কথা বলে থানচি নিয়ে যায়, এতে পর্যটকরা হয়রানি হয় আর বিদেশী পর্যটক হলে তো কথা নেই দেশের সর্ম্পক নিয়ে টানা হেচড়া হয়। এগুলো যার যার জেলায় সমন্বয় করতে হবে।
রাঙামাটিতে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড এর আয়োজনে “পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে টেকসই ও দায়িত্বশীল পর্যটন উন্নয়ন” শীর্ষক সেমিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন। রাঙামাটি পর্যটন কমপ্লেক্সের অডিটিরিয়ামে সেমিনারটি অনুষ্টিত হয়। পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড এর চেয়ারম্যান নব বিক্রম কিশোর ত্রিপুরার সভাপত্বিতে সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশেসিং এমপি। এ ছাড়া পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব মো. মেসবাহুল ইসলাম, রাঙ্গামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্বদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. প্রদানেন্দু বিকাশ চাকমা, রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বৃষ কেতু চাকমা, খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কংজুরী চৌধুরী ও বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান আখতারুজ্জামান কবির বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। এতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের ভাইস চেয়ারম্যান শাহীনুল ইসলাম। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন, ঢাকার পর্যটনবিষয়ক সংস্থা সাতত্য আর্কিটেকচার ফর গ্রিন লিভিং ফার্মের প্রধান স্থপতি রফিক আজম ও বেস ক্যাম্প বাংলাদেশ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তামজিদ সিদ্দিক স্পন্দন। সেমিনারে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, সরকারি কর্মকর্তা, পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি, উন্নয়ন সংগঠক, আবাসিক হোটেল মালিকসহ বিশিষ্টজন উপস্থিত ছিলেন।
পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশেসিং আরো বলেন, অনেক হোটেলে পাঙ্গাস মাছকে বোয়াল বলে বিক্রি করা হয়। পর্যটকদের নিয়ে টানাটানি করেন যানবাহনের লোকজন। স্থানীয় কিছু লোকজনের কারণে অনেক সময় আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতিরও বিঘœ ঘটে। এভাবে তো পর্যটক আসবেন না। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এ অঞ্চলের সংস্কৃতি, কৃষ্টি, খাদ্যাভ্যাসসহ সবকিছুর বিবেচনায় রেখে এবং স্থানীয় জনগোষ্ঠীকে সম্পৃক্ত করে পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের পর্যটন শিল্পের বিকাশ ও উন্নয়নে এগিয়ে আসবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের প্রতি সব সময় আন্তরিক। প্রধানমন্ত্রী সব সময় বলে আসছেন যে, পার্বত্য চট্টগ্রাম বাদ রেখে বাংলাদেশের উন্নয়ন সম্ভব নয়। এ ছাড়া পার্বত্য চট্টগ্রাম হচ্ছে দেশের সম্ভাবনাময় বিরাট সম্পদ।
সেমিনারে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সর্ববৃহৎ কৃত্রিম জলরাশি রাঙামাটির কাপ্তাই হ্রদের দূষণ এবং সাজেকের পর্যটন এলাকার পরিবেশ বিনষ্টের পথে বলে উল্লেখ করে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। পাশাপাশি পার্বত্য চট্টগ্রামে বিরাজমান প্রতিকূলতা ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিসহ নিরাপত্তাজনিত বিষয় ও পর্যটনসংশ্লিষ্ট ব্যবসায় জড়িতদের বিরুপ আচরণ নিয়ে পর্যটনের উন্নয়নে হতাশা ব্যক্ত করেন অনেকে।
অনুষ্ঠানে রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বৃষ কেতু চাকমা বলেছেন, শান্তি চুক্তি অনুযায়ী পর্যটনের কর্মকান্ড বাস্তবায়ন করতে হবে, চুক্তি অনুযায়ী এখনো জেলা পরিষদ ও পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের প্রবিধানমালা তৈরি করা হয়নি, তিনি প্রবিধানমালা তৈরির উপর জোর দেন। এছাড়া পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ পার্বত্য এলাকায় প্রধান সমন্বয়কারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে শান্তি চুক্তি অনুযায়ী আঞ্চলিক পরিষদকে সম্পৃক্ত করার দাবি জানান।
খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কংজরী চৌধুরী বলেন, পার্বত্য এলাকাকে নিয়ে অনেক সময় নেতিবাচক সংবাদ প্রকাশের কারনে পর্যটকরা আসতে চায় না। তিনি আরো বলেন, পর্যটনে বান্দরবান বিদ্যুতের গতিতে এগিয়ে গেছে একমাত্র বীর বাহাদুরের একক নেতৃত্বে, তার কাছ থেকে আমাদের অনেক শিক্ষনীয় বিষয় আছে।
কংজরী চৌধুরী ভ্রাত্বঘাতি সংঘাত বন্ধ করে সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার সাথে পার্বত্য এলাকাকেও এগিয়ে নিতে হবে, আমরা পিছিয়ে থাকতে চাই না।
অনুষ্ঠানের সভাপতি নব বিক্রম কিশোর ত্রিপুরা এনডিসি জানান, জাতীয় পর্যটন নীতিমালার সাথে পার্বত্য এলাকার জন্য আলাদা নীতিমালা তৈরি করতে মুলত এই সেমিনারের আয়োজন। সেমিনারে উঠা আসা বক্তব্যগুলো যাচাই বাছাই করে পাহাড়ের কৃষ্টি কালচার, জীবন ধারাকে সমুন্নত রেখে নীতিমালা তৈরি করা হবে। পার্বত্য মন্ত্রনালয়ে তিন পার্বত্য জেলা পরিষদ থেকে পাঠানো পর্যটন নীতিমালা অনুমোদনের জন্য তিনি মন্ত্রীকে অনুরোধ জানান।
সেমিনারে বক্তারা বলেছেন, পার্বত্য এলাকা পর্যটন শিল্পকে বিকশিত করতে আগে প্রয়োজন পর্যটকদের নিরাপত্তা পর্যটন বান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করা। যদি পরিবেশ না থাকে তাহলে পর্যটকরা পার্বত্য অঞ্চল বিমুখ হয়ে পড়বে। পার্বত্য অঞ্চলে কেবল ভবন বা স্থাপন নির্মাণ করে নয় এখানে বসবাসরত ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র নৃ গোষ্ঠী সমুহের কৃষ্টি কালচার অক্ষুন্ন রেখে ইকো টুরিজ্যমের উপর গুরুত্বারোপ করেন বক্তারা।