মঙ্গলবার | ২১ মে, ২০২৪

কাপ্তাইয়ের ওয়াগ্গাছড়াতে বধ্যভূমি চিহ্নিত করার দাবি শহীদ পরিবারের সন্তানদের

প্রকাশঃ ০৫ ডিসেম্বর, ২০২২ ০৪:৩৯:৫৩ | আপডেটঃ ২১ মে, ২০২৪ ০৬:১৬:১৩

ঝুলন দত্ত, সিএইচটি টুডে ডট কম,  কাপ্তাই ( রাঙামাটি)সোমবার ( নভেম্বরবেলা ১২ টা রাঙামাটির কাপ্তাই উপজেলার নং ওয়াগ্গা ইউনিয়ন এর নং ওয়ার্ডের ৪১  বিজিবি ক্যাম্পের বিপরীত রাস্তা দিয়ে প্রায় শত মিটার পথ পাড়ি দিয়ে পাহাড়ের পাদদেশে গিয়ে পৌঁছি একপাশে ওয়াগ্গাছড়া খাল জায়গাটির নাম ওয়াগ্গাছড়া যেইখানে ৭১ এর যুদ্ধকালীন সময়ে হাজারের উপর বাঙালী লোককে চন্দ্রঘোনা , রাঙ্গুনিয়া, রাউজান উপজেলা সহ বিভিন্ন এলাকা   হতে পাকিস্তানি সৈন্য তাদের এদেশীয় দোসররা  ধরে নিয়ে এসে গুলি করে হত্যা করা হয়েছিল বলে জানান শহীদ পরিবারের সদস্য কাপ্তাই উপজেলা পুজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি রাইখালী ইউনিয়ন এর বাসিন্দা  দীপক  ভট্টাচার্য, মিলন কান্তি দে সেই সময়ের গণহত্যার প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষী ওয়াগ্গাছড়ার বাসিন্দা   গৌরাঙ্গ মোহন বিশ্বাস


তাদের কাছ থেকে গণহত্যায় শহীদ এবং আহত কিছু লোকের নাম পাওয়া যায় তাঁরা হলেনশহীদ নলিনী রঞ্জন দে, শহীদ নিকুঞ্জ বিহারী দে, শহীদ রায় মোহন ঘোষ, শহীদ পরান ভট্টাচার্য, শহীদ বিজয় ভট্টাচার্যশহীদ রেবতি ভট্টাচার্য, শহীদ সুর্য্য চন্দ্র দে এবং শহীদ পাইসু মারমা 

তাঁরা সকলেই কাপ্তাই উপজেলার রাইখালী ইউনিয়ন এর বাসিন্দা এইছাড়া সুনীল কান্তি দে নামে রাইখালী ইউনিয়নের একজন সেইদিন গুরুতর আহত হয়ে বেঁচে গিয়েছিলেন বলে শহীদ পরিবারের সদস্যরা জানান তবে বিগত বছর আগে তিনি মারা যান

 

প্রত্যক্ষদর্শী গৌরাঙ্গ মোহন বিশ্বাস এই প্রতিবেদককে জানান, যুদ্ধকালীন সময়ে আমার বয়স ছিল ১৫ বছর আমার বাবা ক্ষিরোদ চন্দ বিশ্বাস চাকরি করতো  তৎকালীন রুহিনী মহাজনের   ওয়াগ্গা চা বাগানে আমাদের বসতবাড়ি ছিল বর্তমান যেখানে ৪১ বিজিবি ক্যাম্প আছে সেখানে  যুদ্ধকালীন সময়ে ওয়াগ্গাছড়া  একটি পাকিস্তানি ক্যাম্প ছিল সেই সময় পাকবাহিনী বিভিন্ন জায়গা হতে বাঙালীদেরকে ধরে নিয়ে এসে ক্যাম্পের পাশে ওয়াগ্গাছড়া খালের পাশে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে গুলি করে লাথি মেরে খালে ফেলে দিত আবার কিছু কিছু লোককে ক্যাম্পের পাশে একটা পাহাড়ের খাদে নিয়ে প্রথমে তাদেরকে দিয়ে গর্ত করে তারপর   মেরে সেই গর্তে  পুঁতিয়ে ফেলতো তিনি আরোও  জানান, ৭১ এর  এপ্রিল  এর মাঝামাঝি পাকবাহিনী এইখানে ক্যাম্প করে এই গণহত্যা শুরু করে তাঁরা দেশ স্বাধীন হবার আগ পর্যন্ত হাজের খানেক বাঙালীকে হত্যা করে 

 

সেই সময়ের  ওয়াগ্গাছড়া গণহত্যার অন্যতম সাক্ষী ওয়াগ্গাছড়ার বাসিন্দা  শত বছর বয়সী  সহদেব দে অসুস্থতা এবং বয়সের ভারে স্মৃতিশক্তি লোপ পেলেও তিনি জানান, আমি তখন ওয়াগ্গা চা বাগানে চাকরি করতাম পাকিস্থানি হানাদার বাহিনী বিভিন্ন জায়গা হতে ধরে নিয়ে এসে  এই ওয়াগ্গাছড়া  খালের পাশে এনে গুলি করতো বাঙালীদের 

 

শহীদ নলিনী রঞ্জন দে এর ছেলে রাইখালীর বাসিন্দা মিলন কান্তি দে এবং শহীদ রেবতি ভট্টাচার্য এর ভাইয়ের ছেলে দীপক কুমার ভট্টাচার্য জানান, ১৯৭১ সালে রাইখালী বাজারের বেশ কিছু  বাসিন্দারা কাপ্তাই সড়কের মদুনাঘাট এলাকায় যুদ্ধরত  তৎকালীন ইপিআর সদস্যদের বন্ধুক খাওয়ার রসদ যোগাতেন পাকিস্তানি সৈন্য এবং রাজাকার বাহিনী  এই খবর জানতে পেরে ৭১ এর ২৯ এপ্রিল বৃহস্পতিবার সকাল ১০ টায় রাইখালী বাজার হতে   জনকে দঁড়ি বেঁধে মারতে মারতে ওয়াগ্গাছড়া পাক বাহিনীর ক্যাম্পে নিয়ে এসে গুলি করে    তাদের মধ্যে জন সাথে সাথে মারা যান তবে  সুনীল কান্তি দে সেইদিন সন্ধ্যায় আহত অবস্থায় পালিয়ে আসেন এইছাড়া গুলি খাবার দিন পর  নিকুঞ্জ বিহারী দে' কে আহত অবস্থায় সেই সময়ের নৌকার মাঝি ছিদ্দিক মাঝি বড়ইছড়ি ঘাট দিয়ে রাইখালীতে পার করে দেন সেইজন্য পাক বাহিনী ছিদ্দিক মাঝিকেও নির্যাতন করে বলে তাঁরা জানান পরবর্তীতে দেশ স্বাধীন হবার পর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর নির্দেশে চন্দ্রঘোনা মিশন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন নিকুঞ্জ বিহারী দে কে হেলিকপ্টার যোগে ঢাকা পিজি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় 

 

এই শহীদ পরিবারের সদস্যরা ওয়াগ্গাছড়া এলাকায় একটি বধ্যভূমি চিহ্নিত করে স্মৃতি চিহ্ন নির্মাণ  এবং রাইখালী এলাকায় শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের নামে একটি স্মৃতিসৌধ নির্মাণের জন্য কাপ্তাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবরে সোমবার একটি দাবিনামা উপস্থাপন করেন 

 

কাপ্তাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুনতাসির জাহান জানান, আজ( সোমবার) সকালে শহীদ পরিবারের সন্তানরা ওয়াগ্গাছড়াকে  বধ্যভূমি চিহ্নিত করার দাবিতে একটা চিঠি দেয় সাথে সাথে আমি উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা রুহুল আমিন, উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা নাজমুল হাসানওয়াগ্গা  ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান চিরনজীত তনচংগ্যাইউপি সদস্য অমল কান্তি দেকাপ্তাই প্রেস ক্লাব সাধারণ সম্পাদক ঝুলন দত্ত  এবং শহীদ পরিবারের সদস্যদের  সাথে নিয়ে এলাকায় যাই বিষয়টি আগে কেউ আমাকে  অবগত করেনি তবে স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শী এবং গণ্যমান্য মুরুব্বীদের সাথে কথা বলে এই এলাকায় একটা স্মৃতি চিহ্ন করা যায় কিনা সেই বিষয়ে আমার চেষ্টা থাকবে 

 

ওয়াগ্গা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ওয়াগ্গা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি চিরনজীত তনচংগ্যা এবং সাধারণ সম্পাদক ইউপি সদস্য অমল কান্তি দেএই এলাকায় একটি বধ্যভূমির স্মৃতি চিহ্ন করার দাবি জানান 

রাঙামাটি |  আরও খবর
এইমাত্র পাওয়া
আর্কাইভ
সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত, ২০১৭-২০১৮।    Design & developed by: Ribeng IT Solutions