প্রকাশঃ ৩১ অক্টোবর, ২০২২ ০৩:৩৫:২৩
| আপডেটঃ ১২ জানুয়ারী, ২০২৫ ০৬:৪৫:৪৩
সিএইচটি টুডে ডট কম, রাঙামাটি। ২০১৯ সালের পর দেশের চলতি বছরে আশঙ্কাজনক হারে বেড়েই চলছে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী দেশের ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ডেঙ্গু সংক্রামিত হচ্ছে চলতি বছরে। ইতোমধ্যে রাজধানী ঢাকা ও বন্দরনগরী চট্টগ্রাম ছাড়াও দেশের বিভিন্ন স্থানে ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়েছে। পার্বত্য জেলা রাঙামাটিতেও চলতি বছরে এপর্যন্ত প্রায় ৩০জন রোগী ডেঙ্গু সংক্রামিত হয়েছেন; যার বেশির ভাগই পুরুষ এবং ঢাকা-চট্টগ্রাম ফেরত মানুষ। তবে পরিস্থিতি ‘ক্রিটিক্যাল’ না হওয়ায় মৃত্যু হয়নি কারো, স্থানীয় হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েই অসুস্থ হয়েছেন অনেকেই। তাই ডেঙ্গুর সংক্রমণ মোকাবিলা ও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে দিনের বেলায় মশারি ব্যবহার ও পরিত্যক্ত স্থানে পানি জমা না রাখার পরামর্শ দিচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা।
রাঙামাটি জেলা শহরের শরীয়তপুর এলাকার বাসিন্দা ফাতেমা বেগম। চলতি মাসের শুরু থেকেই ওই পাড়ার ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হচ্ছিল। ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে গত তিনদিন ধরে ভর্তি আছেন রাঙামাটি জেনারেল হাসপাতালে। মায়ের সেবায় হাসপাতালে এসে এবার ডেঙ্গু আক্রান্ত হলেন ফাতেমা বেগমের মেয়েও। এখন মা-মেয়ে দুজনই সংক্রামিত হয়ে ভর্তি আছেন একই হাসপাতালের পাশাপাশি বেডে।
এনিয়ে কথা হলে ফাতেমা বেগম জানান, আমাদের এলাকার (শরীয়তপুর) ৯ জন এপর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে এসেছেন। গত ছয়দিন ধরে আমি অসুস্থ, তিন দিন বাসায় ছিলাম তিনদিন ধরে হাসপাতালে আছি। শনিবার থেকে আমার মেয়েও সংক্রামিত হয়ে আমার ভর্তি আছে। আমি ও মেয়েসহ আমাদের পাশাপাশি নয়জন এই পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন।
ডেঙ্গু আক্রান্ত আনসার ব্যাটালিয়নের সদস্য মো. নূর আলম জানান, গত ২৫ অক্টোবর থেকে জ্বর নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি আছি। দু-তিনদিন আগে ডেঙ্গু ধরা পড়েছে। তবে এখন জ্বর না থাকলেও শরীর মোটামুটি ভালো লাগছে। হাসপাতালে ডেঙ্গু সংক্রামিত ছেলে নিয়ে আছেন শরীয়তপুরের বাসিন্দা রোজিনা বেগম। তিনি জানান, কয়েকদিন ধরেই ছেলের ভীষণ জ্বর। শুক্রবার রাতে অবস্থা খারাপ দেখে হাসপাতালে এনেছি। এখন মোটামুটি ভালো লাগে।
চিকিৎসকরা আশ্বস্থ করেছেন, আর দুই তিনদিন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরতে পারবে। আসমা বেগম নামের আরেকজন জানান, চট্টগ্রামে তার ছেলে হাসপাতালে ভর্তি ছিল, রাঙামাটিতে এসে ডেঙ্গু ধরা পড়েছে। শনিবার রাত থেকে হাসপাতালে আছি। এখানে বেডের সংকট। করিডোরে বেড বিছিয়ে থাকতে হচ্ছে। সরকারি হাসপাতালে এখন বেড সংকট ও লোডশেডিং থাকায় সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গিয়েছে, সবশেষ ২০১৯ সালে দেশে সর্বোচ্চ ডেঙ্গু শনাক্ত ও মৃত্যু হয়েছে। ২০১৭ সালে রাঙামাটিতে ৩৭ ডেঙ্গু রোগী শনাক্তের কথা জানিয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগ। চলতি বছরেও দেশে ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হচ্ছে। অন্যান্য বছরে আশঙ্কাজনক হারে রোগী পাওয়া না গেলেও এবছর ডেঙ্গু সংক্রামিত রোগী ক্রমান্বয়ে বেড়েছে। তাই পাহাড়ি জেলা রাঙামাটিও ঝ্ুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। রাঙামাটি জেনারেল হাসপাতালের তথ্য মতে, এ বছরে এ পর্যন্ত ২৫-৩০ ডেঙ্গু রোগী রাঙামাটি জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন। ২০ জনের অধিক রোগী সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। রোববার বিকেল পর্যন্ত হাসপাতালের দ্বিতীয় তলায় ৪ ও তৃতীয় তলায় ৩ জনসহ মোট ৭ জন রোগী চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, পাহাড়ি এলাকায় গহীন বনাঞ্চল ও ঝোপঝাড়ের কারণে এখানে মশার উপদ্রব থাকে অনেক বেশি। তবে এবছর ডেঙ্গু সংক্রামিত রোগীর বেশিরভাগ শহর কিংবা এর আশপাশের এলাকার। মূলত ঢাকা-চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা মানুষজন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন বেশিরভাগ। তাদের থেকে স্থানীয় অনেকে আক্রান্ত হয়ে পড়ছেন। গ্রাম এলাকায় এখনো আশঙ্কাজনকহারে ডেঙ্গু না ছড়ালেও ক্রমেই পরিস্থিতি অবনতির দিকে যাচ্ছে। এজন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে শিগগিরই পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।
জেলা সিভিল সার্জন (সিএস) কার্যালয়ের কীটতত্ত্ববিদ বিশ্বজিৎ চৌধুরী জানান, সবশেষ ২০১৯ সালে রাঙামাটিতে ৩৭ জন ডেঙ্গু রোগী পাওয়া গিয়েছিল। এরপর বিগতবছরগুলোতে তেমনটা প্রাদুর্ভাব ছিল না। তবে এবছর রাঙামাটিতে আশঙ্কাজনকভাবে ডেঙ্গু সংক্রামিত হয়ে যাচ্ছে। প্রাথমিকভাবে আমরা যেটি জানতে পেরেছি মূলত ঢাকা-চট্টগ্রাম থেকে ফেরা মানুষজনই ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন। আবার স্থানীয় অনেকেই তাদের থেকে আক্রান্ত হয়েছেন। রাঙামাটি জেলা শহরের পুরানবস্তি (শরীয়তপুর) এলাকায় কিছু মানুষ ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে পড়েছেন, তাদের অনেকেই হাসপাতালে ভর্তি আছেন। কেউ কেউ চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন। আমরা মাঠ পর্যায় কাজ শুরু করেছি। কোন কোন এলাকায় এডিস মশার কোন জাত থেকে ডেঙ্গু ছড়াচ্ছে সেটি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হচ্ছে।
তিনি আরো বলেন, এডিস মশা বিশেষ করে দিনের বেলায় বেশি কামড়ায় তাই দিনের বেলা ঘুমানোর সময় ছেলে-বুড়ো সবাইকে মশারি টানিয়ে ঘুমানো প্রয়োজন। আর যেকোনো স্থানে যেন তিনদিনের বেশি পানি জমা না থাকে; অন্যনাথ এই পানিতে এডিস মশার লার্ভা সৃষ্টি হতে পারে।
রাঙামাটি জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা (আরএমও) ডা. শওকত আকবর জানিয়েছেন, রাঙামাটি জেনারেল হাসপাতালে ২৭ জন ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন। এরমধ্যে ২০জন পুরুষ ৭ জন নারী। তবে বাহিরে থেকে আসা লোকজনই বেশিরভাগ আক্রান্ত হয়েছেন, স্থানীয়ভাবে এতটা বেশি প্রভাব নেই। রাঙামাটিতে বেশি ক্রিটিক্যাল রোগী না থাকায় সবাইকে এখানেই চিকিৎসা দেয়া সম্ভব হয়েছে।
আরএমও আরো জানান, ডেঙ্গু এখন ঢাকা-চট্টগ্রাম আটকে নেই, এখন সারাদেশে ছড়িয়ে পড়েছে। তাই পাহাড়ের মানুষকে এখন আরো অনেক সচেতন হতে হবে। রাঙামাটি জেনারেল হাসপাতালে বিনামূল্যে ডেঙ্গু পরীক্ষা করা যাচ্ছে। কারো শরীরে লক্ষণ দেখা দিলে পরীক্ষা করার পরামর্শ দেন এই আবাসিক চিকিৎসক।