বৃহস্পতিবার | ২৮ মার্চ, ২০২৪

চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান না থাকায় গতিশীলতা হারাচ্ছে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড

প্রকাশঃ ৩০ এপ্রিল, ২০২১ ০২:৫৮:১৮ | আপডেটঃ ২৮ মার্চ, ২০২৪ ১২:৪৩:১৭
সিএইচটি টুডে ডট কম, রাঙামাটি। চেয়ারম্যান এর মেয়াদ শেষ ও ভাইস চেয়ারম্যান অবসরে যাওয়ায় অভিভাকহীন অবস্থায় পড়ে আছে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড। গতিশীল উন্নয়ন বোর্ড এখন গতিহীন হয়ে পড়ছে, একই সাথে বাঁধাগ্রস্ত হচ্ছে উন্নয়ন কার্যক্রম। বন্ধ রয়েছে কর্মকর্তা কর্মচারীদের বেতন ও ঈদ বোনাস।

জানা গেছে, পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড চেয়ারম্যান নব বিক্রম কিশোর ত্রিপুরা এনডিসির সচিব পদমর্যাদায় নিয়োগের মেয়াদ ১৮ মার্চ ২০২১ইং তারিখে শেষ হয়। এরপর সরকার থেকে নতুন চেয়ারম্যান নিযুক্তি না দেয়ায় অতিরিক্ত সচিব ও বোর্ডের ভাইস চেয়ারম্যান নুরুল আলম নিজামী বোর্ডের দেখভালের দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। তিনি অবসরজনিত কারণে ১৩ এপ্রিল পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের ভাইস চেয়ারম্যানের পদ থেকে বিদায় নেন। এরপর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে নতুন করে কোন ভাইস চেয়ারম্যান নিয়োগ করা হয়নি। পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান পদ শুন্য থাকায় উন্নয়ন বোর্ডের কার্যক্রমে অনেকটা  ভাটা পড়েছে। নতুন করে কোন উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ করা ও বাস্তবায়ন করা যাচ্ছে না, ফাইল এক টেবিল থেকে অন্য টেবিলে যাচ্ছে না।

নাম প্রকাশে অনচ্ছিুক কয়েকজন কর্মকর্তার সাথে কথা বলে জানা যায়, চেয়ারম্যানের অনুপস্থিতিতে ভাইস চেয়ারম্যান কাজ চালিয়ে নিতেন, ভাইস চেয়ারম্যান নুরুল আলম নিজামী অবসরে যাওয়ার দীর্ঘ সময় পার হলেও  জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে নতুন করে ভাইস চেয়ারম্যান নিয়োগ না দেওয়ায় উন্নয়ন বোর্ডের কার্যক্রম বাঁধাগ্রস্ত হচ্ছে। কাকে চেয়ারম্যান এবং ভাইস চেয়ারম্যান দেয়া হবে, তিনি মানুষ কেমন হবেন, চলমান কাজ চলবে নাকি নতুন করে চিন্তা ভাবনা করতে হবে,, এসব নিয়ে ভাবনায় রয়েছেন বোর্ড কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। 

উন্নয়ন কর্মকান্ডের বাইরে গিয়ে বোর্ড কর্মকর্তা কর্মচারীদের এপ্রিল মাসের বেতন ও মুসলিমদের ধর্মীয় উৎসবের ঈদ বোনাসও এখনো হয়নি।

বিষয়টি নিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের সদস্য প্রশাসন ড: প্রকাশ কান্তি চৌধুরী জানান, চেয়ারম্যান এবং ভাইস চেয়ারম্যানের বিষয়টি আমরা মৌখিকভাবে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে জানিয়েছি। বিশেষ করে অর্থ লেনদেনের ক্ষমতা প্রাপ্তির বিষয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। আশা করছি দ্রুত এবিষয়ে পদক্ষেপ নেয়া হবে।

এদিকে কে হচ্ছেন পাহাড়ের অন্যতম শক্তিশালী প্রতিষ্ঠান পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড এর চেয়ারম্যান এনিয়ে জল্পনা কল্পনার শেষ নেই। পার্বত্য চট্টগ্রামে বিরজমান জাতিগত সংঘাত নিরসনে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে পাহাড়ের উন্নয়নের জন্য সরকারি সংস্থা হিসেবে ১৯৭৬ সালের ১৪ জানুয়ারি ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড’ প্রতিষ্ঠা করা হয়।

প্রতিষ্ঠার ৪৫ বছরে সাড়ে বত্রিশ বছর ধরে চেয়ারম্যান পদে চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার, সেনাবাহিনীর চট্টগ্রাম এরিয়া কমান্ডার ও সরকারি আমলারাই নিয়োগ পেয়েছেন। আর তিন মেয়াদে মাত্র সাড়ে ১২ বছর বেসামরিক পর্ষদে চেয়ারম্যান ছিলেন দুই জনপ্রতিনিধি। অথচ অনির্বাচিত যোগ্য যেকোনো ব্যক্তি উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান হওয়ার ক্ষেত্রে আইনী কোন বাধা নেই।

স্থানীয় রাজনৈতিক নেতৃত্ব থেকে চেয়ারম্যান না করায় উন্নয়নে যেমনি জনসম্পৃক্ততা বেশি থাকছে না তেমনি জন আকাংখাও পূরণ হচ্ছে না। তাই পাহাড়ের শান্তি, উন্নয়ন, স্বার্থ নিশ্চিত ও প্রতিষ্ঠানটিকে জনবান্ধব করতে হলে পাহাড়ের মানুষকেই দায়িত্বে বসাতে হবে বলে মনে করছেন পাহাড়ের মানুষেরা। সরকারি আমলার পরিবর্তে স্থানীয় রাজনৈতিক নেতৃত্ব থেকে, উপজাতীয় জনগোষ্ঠির সংখ্যাগরিষ্ঠতার বিচারে চাকমা সম্প্রদায় ও বোর্ডের প্রধান কার্যালয় রাঙামাটি হওয়ায় সেখানকার বাসিন্দা থেকে চেয়ারম্যান নিয়োগ- এই তিন বিবেচনার দাবি উঠেছে।

তারা বলছেন, উন্নয়ন বোর্ডের প্রধান কার্যালয় রাঙামাটিতে হলেও রাঙামাটির বাসিন্দাদের মধ্যে এযাবৎকাল কাউকেই চেয়ারম্যান করা হয়নি। এমনকি জনগোষ্ঠির সংখ্যাগরিষ্টতার বিচারে রাঙামাটিতে চাকমা সম্প্রদায়ের আধিক্য থাকলেও একবারও চাকমা সম্প্রদায় থেকে চেয়ারম্যান নিয়োগ দেয়া হয়নি। তবে তিন মেয়াদে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের বর্তমান মন্ত্রী বান্দরবানের এমপি বীর বাহাদুর উশৈসিং ও খাগড়াছড়ির বিএনপির সাবেক এমপি ওয়াদুদ ভুঁইয়া নিয়োগ পেলেও দু’জনই ছিলেন বান্দরবান ও খাগড়াছড়ির। সর্বশেষ তিন দফায় নিয়োগ পাওয়া সরকারী আমলা বর্তমান চেয়ারম্যান নব বিক্রম কিশোর ত্রিপুরাও খাগড়াছড়ির বাসিন্দা।

প্রতিষ্ঠানটি শুরু থেকেই ‘উন্নত সমৃদ্ধ পার্বত্য চট্টগ্রাম’ গড়তে এ অঞ্চলের অবকাঠামো ও আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের লক্ষ্যে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। বিশেষত যাতায়াত, ভৌত অবকাঠামো নির্মাণ, শিক্ষা, কৃষি, সমাজকল্যাণ, ক্রীড়া ও সংস্কৃতি খাতে এবং সমন্বিত সম্প্রদায়ের উন্নয়ন ও ক্ষমতায়নের উন্নয়ন ও প্রচারে কাজ করছে।

দেশে গণতান্ত্রিক সরকার ব্যবস্থা থাকলেও জনপ্রতিনিধিদের চেয়ারম্যান করার ধারাবাহিকতায় ছেদ পড়ে। রাষ্ট্রপতির কোটায় অতিরিক্ত সচিব হওয়া পুলিশের সাবেক অতিরিক্ত মহা-পরিদর্শক নব বিক্রম কিশোর ত্রিপুরা পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব পদে নিয়োগ পান। একইসাথে উন্নয়ন বোর্ডের ‘ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান’ হন। পরে চুক্তিভিত্তিক পূর্ণ দায়িত্ব পান ১৯ ডিসেম্বর ২০১৩ থেকে ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ পর্যন্ত। সচিব পদে অবসর নেয়ায় ১৯ মার্চ ২০১৮ তারিখে পুনরায় তিনি সচিব মর্যাদায় তিন বছরের জন্য নিয়োগ পান। ১৮ মার্চে তার চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়েছে। তবে সদ্য বিদায়ী  চেয়ারম্যান নব বিক্রম কিশোর ত্রিপুরার আমলে বোর্ডে বরাদ্দ দ্বিগুণ, সৃজনশীল কর্মের পাশাপাশি কাজে গতিশীলতা ফিরে এসেছে।
 
পাহাড়ের এ উন্নয়ন প্রতিষ্ঠানটির আগামী চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ পেতে রাঙামাটি জেলা আওয়ামীলীগের দুই সহসভাপতি ও রাঙামাটি জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান নিখিল কুমার চাকমা ও চিংকিউ রোয়াজার নাম শোনা যাচ্ছে। তবে পাহাড়ি-বাঙালী জনগোষ্ঠির মাঝে নিখিল কুমার চাকমার গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। তিনি রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান থাকাকালীন সময়ে সকল জনগোষ্ঠীর উন্নয়নের কাজ করেছেন। এছাড়া খাগড়াছড়ির সংসদ সদস্য কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা ও খাগড়াছড়ির মহিলা এমপি বাসন্তি চাকমাও নানা মহলে তদবির করছেন। আবার তথ্য কমিশনের চেয়ারম্যান সুদত্ত চাকমাকেও একটি মহল চেয়ারম্যান করার চেষ্টা করছেন বলে শোনা যাচ্ছে, তিনিও সরকারি আমলা।

তবে শেষ অবধি কে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের হাল কে ধরছেন সেটি এখন দেখার অপেক্ষা।



এইমাত্র পাওয়া
আর্কাইভ
সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত, ২০১৭-২০১৮।    Design & developed by: Ribeng IT Solutions