বৃহস্পতিবার | ২৮ মার্চ, ২০২৪

পাহাড়ে এবারও উৎসববিহীন বিজু

প্রকাশঃ ১১ এপ্রিল, ২০২১ ০১:০২:৩২ | আপডেটঃ ২৮ মার্চ, ২০২৪ ০৭:৩৯:৫৭
সিএইচটি টুডে ডট কম,  রাঙামাটি। বৈশ্বিক প্রাণঘাতী মহামারী করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) সংক্রমণ রোধকল্পে পাহাড়ে এবারও উদযাপিত হতে যাচ্ছে তিন দিনের উৎসববিহীন বিজু। স্বাস্থ্যবিধি মেনে গত বছরের ন্যায় এবারও উৎসব ছাড়াই রাঙামাটিসহ পাহাড়ে শুরু হচ্ছে, তিন দিনের বিজু বা বৈসাবি। এ কারণে গত বছর প্রথম উৎসবটি উদযাপিত হয়েছে নিরুত্তাপ নিরুচ্ছ্বাসের মধ্য দিয়ে।  

যুগযুগ ধরে আনন্দ-উচ্ছ্বাসের বন্যায় তাদের ঐতিহ্যবাহী প্রধান এ সামাজিক উৎসবটি পালন করে আসছিল, পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত পাহাড়ি জনগোষ্ঠীগুলো। প্রত্যেক বছর চৈত্র সংক্রান্তি ও বাংলা নববর্ষবরণ উপলক্ষে ধুমধাম করে পালন করা হতো উৎসবটি। কিন্তু করোনা মহামারী পরপর দুটি উৎসব কেড়ে নিল পাহাড়িদের প্রাণের উৎসবটিকে। উৎসবটিকে ত্রিপুরা জনগোষ্ঠী ‘বৈসুক’, মারমা সম্প্রদায় ‘সাংগ্রাই’ এবং চাকমারা ‘বিজু’ নামে পালন করে। তিনটি জনজাতির ভাষায় আদ্যাক্ষর মিলিয়ে সংক্ষেপে উৎসবটির নামকরণ ‘বৈসাবি’।  

বাংলাবর্ষের ২৯ চৈত্র (১২ এপ্রিল) শুরু হয়ে নববর্ষের পহেলা বৈশাখ (১৪ এপ্রিল) পর্যন্ত ঘরে ঘরে পালিত হয় পাহাড়িদের ঐতিহ্যবাহী প্রধান সামাজিক উৎসবটি। চাকমাদের সামাজিক রীতি অনুযায়ী কাল (২৯ চৈত্র) ফুলবিজু। এদিন পুরনো বছরের যত দুঃখ-গ্লানি, ভয়, অন্তরায়, বাধা-বিপত্তি দূর করে নতুন বছরে সুখ-শান্তি ও সফলতার প্রার্থনা জানিয়ে মহান সৃষ্টিকর্তার স্মরণে পুস্পাঞ্জলি নিবেদন করে পানিতে ফুল ভাসায় তারা।

পরশু বিজুর দ্বিতীয় দিন (৩০ চৈত্র) পালিত হবে ‘মূলবিজু’। এদিন ঘরে ঘরে আয়োজন করা হয়, আনন্দ-উৎসব আর যার যা সাধ ও সাধ্যমতো আপ্যায়ণ। শেষ দিন (নববর্ষের পহেলা বৈশাখ) পালন করা হয় ‘গোজ্জেপোজ্যা দিন’। এদিন বিশ্বশান্তি ও সর্বজীবের মঙ্গল কামনায় প্রত্যেক ঘরে ঘরে এবং মন্দিরে পালিত হয় ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান। সন্ধ্যায় পালিত হয় মঙ্গলপ্রদীপ পূজা।

করোনার কারণে এবারও থাকছে না এসবের আনুষ্ঠানিকতা। থাকছে না উৎসব। এছাড়া উৎসবটিকে ঘিরে রাঙামাটিসহ তিন পার্বত্য জেলায় বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন এবং সরকারি বেসরকারি সংস্থা ব্যাপক কর্মসূচির আয়োজন করে থাকে। করোনা মহামারীতে দুই বছর হারিয়ে গেল এসব উৎসব আর উচ্ছ্বাস। এ পরিস্থিতিতে সবার মত একটাই- সেটা হল এখন উৎসব নয়। সবার কর্তব্য নিরাপদে থেকে দুর্যোগ মোকাবেলা।

চলমান দুর্যোগপূর্ণ পরিস্থিতির কারণে গত বছরও নিরবে নিভৃতিতে যার যার ঘরে নিরাপদে থেকে পালন করতে হয়েছিল, পাহাড়িদের প্রাণের এ উৎসবটিকে। এটিকে ঘিরে এ সময় প্রত্যেক বছর পাহাড় উৎসবমুখর হয়ে উঠলেও চলমান করোনাকালে গত বছরের ন্যায় এবারও পাহাড়ি পাড়া-গ্রামজুড়ে বিরাজ করছে, হতাশা আর নিস্তব্দতা। পরিস্থিতি এভাবে চলতে থাকলে অদূর ভবিষ্যতে তাদের ঐতিহ্যবাহী রীতিনীতির এ প্রধান সামাজিক উৎসবটি হারিয়ে যাবে বলে শঙ্কায় পাহাড়ি মানুষ জন।

এদিকে উৎসব পালনের সম্ভবনায় এবারও বৈসাবি সামনে রেখে রাঙামাটিসহ তিন পার্বত্য জেলায় নানা বর্ণাঢ্য কর্মসূচি গ্রহণ করে বিভিন্ন সংগঠন ও সংস্থা। কিন্তু করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বৃদ্ধির কারণে গত বছরের ন্যায় এবারও যাবতীয় কর্মসূচি বাতিল করতে হয়েছে। রাঙামাটিতে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক ইন্সটিটিউট সরকারিভাবে চার দিনের বৈসাবি মেলা এবং বেসরকারি সাংস্কৃতিক সংগঠন রাঙামাটি কালচারাল ইন্সটিটিউশন (আরসিআই) চাকমা ভাষায় নির্মিত স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘নুও স্ববন বা নতুন স্বপ্ন’ পর্দায় প্রদর্শনীসহ দু’দিনব্যাপী বর্ণাঢ্য কর্মসূচি হাতে নেয়। এছাড়াও অন্যান্য সংগঠনের উদ্যোগে আরও নানা কর্মসূচি হাতে নেয়া হয়। কিন্তু  হঠাৎ করোনাভাইরাসের সংক্রমণ লাফিয়ে বাড়ায় এসব কর্মসূচি বাতিল করতে হয়েছে।

রাঙামাটি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক ইন্সটিটিউটের পরিচালক রুনেল চাকমা বলেন, হঠাৎ কোভিড-১৯ সংক্রমণ উর্দ্ধগতির কারণে পূর্বে গৃহীত আমাদের চার দিনের বৈসাবি মেলা কর্মসূচি বাতিল করেছি।

রাঙামাটি কালচারাল ইন্সটিটিউশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সচিব চাকমা নবীন বলেন, এবার উৎসব উপলক্ষে ‘নুও স্ববন বা নতুন স্বপ্ন’ নামে আমাদের পূর্বে নির্মিত চাকমা ভাষা-সংষ্কৃতির একটি স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র পর্দায় প্রদর্শনীসহ দুই দিনের অনুষ্ঠানসূচি ছিল। কিন্তু করোনাভাইরাস সংক্রমণের এমন দুর্যোগপূর্ণ পরিস্থিতিতে তা বাতিল করেছি। এসব কর্মসূচির প্রস্তুতিতে আমাদের অনেক টাকা ব্যয় হয়েছে। তাই সামনে যদি পরিস্থিতির উত্তরণ ঘটে, আমাদের পূর্বে নির্মিত চলচ্চিত্রটির প্রদর্শনীর আয়োজন করা হবে।        

এইমাত্র পাওয়া
আর্কাইভ
সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত, ২০১৭-২০১৮।    Design & developed by: Ribeng IT Solutions