প্রকাশঃ ২০ ফেব্রুয়ারী, ২০২১ ১২:৩৯:৪০
| আপডেটঃ ১৬ মে, ২০২৪ ০৯:৪১:০১
সিএইচটি টুডে ডট কম, রাঙামাটি। প্রভাবশালী মালিক পক্ষের জিম্মি দশা থেকে মুক্তি পেতে আকুতি জানিয়েছেন ৭ জন জেলে শ্রমিক। মধ্যযুগীয় বর্বরতা থেকে নিজেদের বাঁচাতে ও নিজের ছেলে মেয়ে আত্মীয় স্বজনের কাছে ফেরত যেতে সাংবাদিকদের কাছে সহযোগিতা চেয়েছেন নির্যাতিত শ্রমিকরা। রাঙামাটির সাপমারা এলাকায় কেচকি জালের ক্ষোপে কাজ করা শ্রমিকরা তাদের নির্যাতনের বর্ণনা দিতে দিতে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন।
সকালে সংবাদ সংগ্রহে সাপমারা এলাকায় গেলে সংবাদকর্মীদের দেখে অসহায় শ্রমিকরা তাদের নির্যাতনের বর্ণনা তুলে ধরেন।
রাঙামাটি শহরের অদুরে বালুখালী এলাকায় অসহায় শ্রমিকদের উপ নির্যাতন মধ্যযুগীয় ববরতাকেও হার মানিয়েছে। মাসিক ১০ হাজার টাকা আয়ের কাজ দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে নিরীহ হতদরিদ্র শ্রমিকদের এনে জিম্মি করে রেখে কাপ্তাই হ্রদে মাছ ধরতে বাধ্য করছে প্রভাবশালী একটি চক্র।
রাঙামাটি শহরের কোতয়ালী থানাধীন কাপ্তাই হ্রদের ওপারে বালুখালী এলাকায় সাতজন শ্রমিককে নির্মম নির্যাতন করে জিম্মি রেখে জালের নৌকায় কাজ করাচ্ছে জনৈক হেলাল নামের এক মাছ ব্যবসায়ি।
স্থানীয়দের মাধ্যমে খবর পেয়ে সরেজমিনে ঘটনাস্থলে গেলে শ্রমিকরা সাংবাদিকদের দেখেই তাদের উপর চলতে থাকা নির্মম নির্যাতনের বর্ণনা দেয়।
জিম্মিদশায় থাকা শ্রমিকরা হলেন,(১) মোঃ রহিম-৪০,সে বরিশালের স্বরূপকাঠি থানাধীন ইন্ধারহাট ইউনিয়নের বিঞ্চুকাটি গ্রামের বাসিন্দা মোশারফ হাওলাদারের সন্তান।(২) রাকিবুল ইসলাম-১৭, সে ভোলা’র চরফ্যাশনের আমেনাবাদ এলাকার আব্দুস কুদ্দুস এর সন্তান। (৩) মোঃ রুবেল-১৮, সে ঝালকাটি জেলার কাঠালিয়া থানাধীন পাতিয়ালঘাটা ইউপি’র ৯নং ওয়ার্ডের জুলখালি গ্রামের মনির হোসেনের সন্তান।(৪) মোঃ জিসান-২২, তার বাড়ি কুমিল্লার দাউদকান্দির চশৈলপাল পাড়াস্থ হাজিবাড়ি এলাকায়। তার বাবার নাম: আব্দুল জলিল। (৫) নাসির-১৮, সে দিনাজপুর জেলার বিরলথানাধীন ৯নং ইউপি’র মঙ্গলপুর গ্রামের ছিদ্দিক হোসেনের সন্তান। (৬)মোঃ রাশেদ মিয়া-৩০, সেকিশোরগঞ্জ জেলাধীন ছাতির ইউপি’র ছাতির চর গ্রামের ফুল মিয়ার ছেলে। (৭) মোঃ ফরিদ-১৫,তার বাড়ি চট্টগ্রামের চকরিয়ায়। বাবার নাম: জলিল, গ্রাম ইলিশিয়া, থানাঃ চকরিয়া।
শ্রমিকরা জানায়, মাছ ব্যবসায়ী হেলাল তাদেরকে ঠিকমতো খাবার-দাবার না দিয়ে রাত-দিন একাধারে তিন বার কাপ্তাই হ্রদে মাছ ধরার কাজে ব্যস্ত রাখে। অনাহারে অর্ধাহারে দীর্ঘ ২ মাস কাজ করার ফলে বেশ কয়েকজন শ্রমিক অসুস্থ হয়ে পড়ে। প্রতিদিন কেজি কেজি মাছ শিকার করলেও তাদের ভাগ্যে জোটে না একটি মাছও। মাছ চাইলে ব্যবসায়ী হেলাল ও তার ভাগিনা তাদের উপর চড়াও হয় বলে তারা বর্ণনা করেন। তারা কাজ করে প্রতিদিনই মরিচ মেখে ভাত খেতে দেওয়া হয় শ্রমিকদের।
এছাড়াও হেলালের ভাগিনা নয়নকে দিয়ে শ্রমিকদেরকে বেদড়ক পিটিয়ে প্রতিনিয়তই ভীতিকর পরিস্থিতিতে রাখা হচ্ছে তাদের। শ্রমিকরা তাদের অত্যাচারে অতিষ্ট হয়ে স্থানীয় কয়েকজনকে জানালে তারা সাংবাদিকদের অবহিত করেন। সাংবাদিকরা সরজমিনে গিয়ে তাদের অবস্থান দেখে পুলিশকে খবর দেয়। পুলিশ আসার খবর পেয়ে ব্যবসায়ী হেলাল বোট নিয়ে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়।
এদিকে ঘটনাস্থলে যাওয়া প্রতিবেদকসহ গণমাধ্যমকর্মীরা সরকারের জরুরী সেবা ৯৯৯ এ কল করে শ্রমিকদের জিম্মির বিষয়টি জানায়। পরবর্তীতে কোতয়ালী থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ কবির হোসেন থানার এসআই ওসমান এর এর নেতৃত্বে পুলিশের একটি টিমকে ঘটনাস্থলে প্রেরণ করেন। এরই মধ্যে পুলিশ শ্রমিকদের উদ্ধারে রওয়ানা দিয়েছে এমন তথ্য সাংবাদিকদেরকেও নিশ্চিত করেন ওসি।
এদিকে বিষয়টি পুলিশের নজরে আসলে কোতয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কবির হোসেন সাংবাদিকদের কাছ থেকে বিষয়টি নিশ্চিত হয়ে ফোর্স পাঠায়। তিনি বলেন, বিষয়টি আমি দেখছি তাদেরকে ওখানে থাকতে বলেন।
পরবর্তীতে সাংবাদিকরা অন্য একটি সংবাদ সংগ্রহের জন্য ঘটনাস্থল থেকে সরে গেলে ব্যবসায়ী হেলাল লোকজন নিয়ে এসে শ্রমিকদেরকে অন্যত্র তুলে নিয়ে যায়। পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে তাদের কাউকে খুজে না পেয়ে খোঁজাখুজি শুরু করে। পরবর্তীতে স্থানীয় লোকজন পুলিশকে বিষয়টি অবহিত করে। পরে স্থানীয় লোকজন সহ বোট নিয়ে তাদের বিভিন্ন জায়গায় খোঁজাখুজি করলে এলাকার লোকজন বলে তাদেরকে বালুখালীর গভীরে চাকমা এলাকায় তাদের নিয়ে গেছে।
এই বিষয়ে এস আই ওসমান জানান, তাদেরকে অনেক খোঁজাখুজি করেছি কিন্তু কোথাও পেলাম না। স্থানীয়দের ভাষ্যমতে ব্যবসায়ী হেলাল তাদেরকে নদী পথে আরো ভিতর নিয়ে গেছে। এখানে আরো সঙ্গীয় ফোর্স ছাড়া যাওয়া যাবে না বলে তিনি বলেন, আমরা বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে ঘটনাস্থল থেকে চলে এসেছি।
উল্লেখ্য ব্যবসায়ী হেলালের বিরুদ্ধে আগেও শ্রমিক নির্যাতন ও শ্রমিকদের টাকা না দেওয়ার অভিযোগ রাঙামাটি আদালতে মামলা রয়েছে। জামিনে এসে ব্যবসা চালানোর সাথে সাথে আবারো শ্রমিক নির্যাতনে নেমেছে হেলাল।