শুক্রবার | ২৯ মার্চ, ২০২৪

খাগড়াছড়িতে সরকারি ত্রাণ বিতরণেই জনপ্রতিনিধি আর নেতাদের তৃপ্তির ঢেকুর

প্রকাশঃ ০১ এপ্রিল, ২০২০ ০৭:১১:১৪ | আপডেটঃ ২৯ মার্চ, ২০২৪ ০২:২৭:৪৪
বিশেষ প্রতিনিধি, খাগড়াছড়ি। খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলের অধিকাংশ লোকজন খেটে খাওয়া। দুর্গম এলাকার লোকজন যারা সপ্তাহে একবার বাজারে আসেন। তাদের অবস্থা এখন খুবই খারাপ। কারণ তারা এক সাথে ১৫ বা ২০ দিনের বাজার করে ঘরে মজুত রাখতে পারেননি। আর অনেকে লক ডাউন না মেনে পেটের জ্বালায়  জোর করে বাজারে আসছেন।

তেমনি একজন কমলছড়ি ভিতর পাড়া থেকে সদরের আপার পেরাছড়া বাজারে ঢেঁকি শাক বিক্রি করতে আসা রবীন্দ্র লাল চাকমা।

তিনি এ প্রতিবেদককে জানান, বাজারে আসার গ্রামের অনেকে বলেছেন কি রোগ নাকি এসেছে একজনের হলে অন্যজনের নাকি হয়। তখন তিনি নাকি বলে এসছেন রোগ ভয় না, ভয় ক্ষুধাকে। সরকারীভাবে কোন সাহায্য বা অনুদান পেয়েছেন কিনা জানতে চাইলে, এক কথায় বলেন না।  এ ধরনের অনেক লোক না পারতে পেটের জ্বালায় বাজারে আসেন বিভিন্ন ধরনের জঙ্গলের শাক-সবজি বিক্রি করতে।

গুচ্ছগ্রাম এলাকার বাসিন্দা শমসের আলী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, গুচ্ছগ্রামে থাকি কিন্তু রেশন কার্ড তো আমার মতো অনেকেরই নেই। এই দুর্যোগে কর্মহীন হয়ে পরিবার-পরিজন নিয়ে কষ্টে আছি।

কিন্তু এসব মানুষের পাশে নেই রাজনীতিক ও বিত্তবানদের কেউ-ই। সবাই ব্যস্ত সরকারি ত্রাণ বিতরণের কতৃৃত্ব নিয়েই। আর এসব ত্রাণ বিতরণের ছবি অনুগত নেতাকর্মী ও সংবাদকর্মীদের মাধ্যমে সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে দিয়েই গিলছেন তৃপ্তির ঢেকুর।

ত্রাণ সহায়তার বিষয়ে খাগড়াছড়ি সদরের কমলছড়ি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সাউপ্রু মারমা বলেন, তার ইউনিয়নে মাত্র ৪৫ পরিবারকে ত্রাণ সহায়তা দেওয়া হয়। যা পর্যাপ্ত নয় বলে জানান তিনি।

পেরাছড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান তপন বিকাশ ত্রিপুরা বলেন, ইউএনও এসে ৫০ পরিবারকে চাল, ডাল, তেল সাবান,লবন দিয়ে যান। তাঁর ইউনিয়নের চাহিদা তুলনায় খুবই কম।

খাগড়াছড়ি জেলার সবচাইতে দুর্গম উপজেলা লক্ষ্মীছড়ি উপজেলা যে উপজেলার অধিকাংশ লোকজন গরীব ও খেটে খাওয়া। লক্ষ্মীছড়ি উপজেলা চেয়ারম্যান বাবুল চৌধুরী এ প্রতিবেদককে বলেন তার উপজেলার লোকজন অধিকাংশ গরীব ও দুর্গম এলাকায় বাস করেন। তিনি জেলা প্রশাসনের কার্যালয় থেকে ১০ মেট্রিকটন চাল ও ৫০ হাজার টাকা বরাদ্দ পেয়ে সেগুলো ৬শ পরিবারের মাঝে বন্টন করে দিয়েছেন। কিন্তু তার এলাকায় চাহিদা প্রায় সাড়ে সাত হাজার পরিবার।

মহালছড়ি উপজেলা চেয়ারম্যান বিমল কান্তি চাকমা বলেন বর্তমান আপদকালীন সময়ে যা বরাদ্দ পেয়েছেন তা চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল। যদি পর্যাপ্ত সরকারী বরাদ্দ পাওয়া না যায় তাহলে গরীব লোকদের আর বাড়ীতে রাখা যাবে না। তাই তিনি সরকারী বরাদ্দ বাড়ানো দাবী জানান।

সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)-খাগড়াছড়ি জেলা কমিটির সা: সম্পাদক এড. নাসির উদ্দিন আহমেদ বলেন, দেশ স্বাধীনের পর জাতি-রাষ্ট্র কখনোই এ ধরনের দুর্যোগের মুখে পড়েনি। আর এ ধরনের মহামারী দুর্যোগে নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিবর্গ এবং বিত্তবানদের নিজস্ব অর্থায়নে এগিয়ে না আসাটা দু:খজনক।

খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসক প্রতাপ চন্দ্র বিশ্বাস মুঠো ফোনে এ প্রতিবেদকে জানান, মঙ্গলবার পর্যন্ত প্রতি উপজেলায় ২০ মেট্রিকটন চাল ও নগদ এক লক্ষ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া খাগড়াছড়ি পৌরসভাকে ৩০ মেট্রিক টন  এবং মাটিরাঙ্গা ও রামগড় পৌরসভাকে -১০ মেট্রিক টন করে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

এদিকে করোনা ভাইরাস পরিস্থিতি মোকাবেলায় পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দেয়া বিশেষ বরাদ্দে খাগড়াছড়ি জেলার ১০ হাজার গরীব, দুস্থ ও দিনমজুর পরিবারের পাশে দাঁড়াবে পার্বত্য জেলা পরিষদ।

খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলাকে কোভিড-১৯’র বিপর্যয় থেকে মুক্ত ও নিরাপদ রাখতে খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কংজরী চৌধুরী কাজ করছেন। সংকট মোকাবেলায় পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয় ইতোমধ্যে খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদকে ৫০ লক্ষ টাকা এবং ২’শ মেট্রিক টন খাদ্যশস্য বরাদ্দ দিয়েছে।

খাগড়াছড়ি |  আরও খবর
এইমাত্র পাওয়া
আর্কাইভ
সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত, ২০১৭-২০১৮।    Design & developed by: Ribeng IT Solutions