শুক্রবার | ২৯ মার্চ, ২০২৪

নতুন মুখের সন্ধানে কাল খাগড়াছড়ি জেলা আওয়ামীলীগের সম্মেলন

প্রকাশঃ ২৩ নভেম্বর, ২০১৯ ১১:২১:৪৩ | আপডেটঃ ২৮ মার্চ, ২০২৪ ০৯:০৮:৫৯
সিএইচটি টুডে ডট কম, খাগড়াছড়ি। রাত পোহালেই বহুল প্রত্যাশিত খাগড়াছড়ি জেলা আওয়ামীলীগের সম্মেলন ও কাউন্সিল। দীর্ঘ সাত বছর পর আজ খাগড়াছড়ি আউটার স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিতব্য সম্মেলনে দলের কেন্দ্রীয় সা: সম্পাদক  এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এমপি প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন। সম্মেলনকে ঘিরে পুরো জেলাশহর ব্যানার-ফেস্টুনের নগরীতে পরিণত হয়েছে। সম্মেলনে সভাপতি’র চেয়ে সা: সম্পাদক পদে কে আসছেন, সেটি নিয়েই নেতাকর্মীদের মাঝে উৎসুক্য বেশি দেখা যাচ্ছে।

আবার সম্মেলন ঘনিয়ে আসার সাথে সাথে পাল্টে যাচ্ছে রাজনীতির সমীকরণও। বিশেষ করে সাঃ সম্পাদক পদটি ঘিরেই নতুন নতুন গল্প-গুজব ডালপালা ছড়াচ্ছে। সরকারি বিভিন্ন সংস্থা’র প্রতিনিধিদেরকেও সম্মেলনকেন্দ্রীক বিশেষ ব্যস্ততায় সময় অতিবাহিত করতে দেখা যাচ্ছে। ধারণা করা হচ্ছে, শান্তিচুক্তি’র জেলা হিসেবে পরিচিত খাগড়াছড়ি জেলা আওয়ামীলীগের সাঃ সম্পাদক পদে এবার একটি নতুন মুখ-ই আসবে। তাই পদ প্রত্যাশি বেশ কয়েকজন প্রার্থীকে ঘিরে নেতাকর্মীদের মাঝে বিপুল উৎসাহ উদ্দীপনা বিরাজ করছে। সম্মেলন উত্তর কাউন্সিলে ভোটাভোটি হওয়া না হওয়া নিয়েও নেতাকর্মীদের মাঝে এক ধরনের ধোঁয়াশাভাব বিরাজ করছে।

নেতারা সম্ভাব্য পদে অধিষ্ঠিত হওয়ার জন্য দফায় দফায় গোপনে সভা করছেন। সম্মেলনকে ঘিরে নেতাকমীদের মাঝে চাঙ্গাভাব বিরাজ করছে। পদপ্রত্যাশী নেতারা কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে ধরনা দিচ্ছেন। সেই সঙ্গে তৃণমূলের কাউন্সিলরদের সঙ্গে যোগাযোগও রাখছেন নিয়মিত। সম্মেলনকে ঘিরে দলীয় কার্যালয়ের চিত্রই যেন এখন পাল্টে গেছে।

সম্মেলনকে সামনে রেখে সম্ভাব্য প্রার্থীদের ব্যানার ফেস্টুনে তোরণে ছেয়ে গেছে জেলার আনাচে কানাচ। এ সম্মেলনে  সভাপতি পদে বর্তমান সভাপতি  ও সংসদ সদস্য কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা’র সাথে বর্তমান কমিটির অন্যতম সহ-সভাপতি পানছড়ি ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ সমির দত্ত চাকমা, প্রতিদ্বন্ধীতা করার ঘোষণা দিলেও তিনি গত বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে নিজেকে প্রত্যাহার করে নেন। সংবাদ সম্মেলনে তিনি জেলা সভাপতি ও সংসদ সদস্য কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা’র বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি উপজেলা ও পৌর কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে প্রভাব বিস্তার এবং নিজের পছন্দের লোক দিয়ে পকেট কমিটি গঠনের অভিযোগ উত্থাপন করেন। তাঁর (সমির দত্ত চাকমা) বিরুদ্ধে পাল্টা আরেক সংবাদ সম্মেলনে জেলা-উপজেলা ও পৌর কমিটির শীর্ষ নেতারা বলেন, সমির দত্ত চাকমা আঞ্চলিক দল ‘ইউপিডিএফৎ-এর এজেন্ট। তিনি দলের কোন কার্যক্রমেই সক্রিয় ছিলেন না। দলে বিবাদ-বিভ্রান্তির জন্য তাঁকে বহিস্কারের দাবিও জানান নেতারা।

জেলা-উপজেলার সভাপতি এবং সা: সম্পাদকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, দুইবারের সংসদ সদস্য এবং বর্তমান সভাপতি কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা দলের দু:সময়ে ভূমিকা রেখেছেন। সাংগঠনিকভাবেও খাগড়াছড়ি আগের থেকে অনেক বেশি সংহত। তাই, বেশিরভাগ কাউন্সিলর কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা’র প্রতিই আস্থা প্রকাশ করেছেন।

সাধারণ সম্পাদক পদে বর্তমান জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মনির হোসেন খান, ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নির্মলেন্দু চৌধুরী, দীঘিনালা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও দীঘিনালা উপজেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি হাজী মো: কাশেম, জেলা আওয়ামীলীগের অন্যতম উপদেষ্টা সাহাব উদ্দিন মিয়া, জেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এম. এ. জব্বার, জেলা আওয়ামী লীগের শিক্ষা ও মানব সম্পদ বিষয়ক সম্পাদক দিদারুল আলম দিদার এবং মাটিরাঙা পৌরসভার মেয়র সামছুল হক’র নাম আলোচিত হচ্ছে।

এই সাত প্রার্থীর মধ্যে কোন প্রকার প্রচার-প্রচারণায় না গিয়েও সম্মেলনের দিনক্ষণ যতোই ঘনিয়ে আসছে ততোই নেতাকর্মীদের মুখে মুখে হাজী মো: কাশেমের নাম আলোচিত হচ্ছে। দীঘিনালা উপজেলা আওয়ামীলীগের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা এই নেতা সাধারণ কর্মীদের সুখে-দু:খে সহযোগিতার হাত বাড়াতে পিছপা হন না। বেশ কয়েকজন কাউন্সিলর জানান, অসাম্প্রদায়িক ব্যক্তিত্ব হিসেবে হাজী মো: কাশেম একজন দানশীল মানুষ। রাজনীতির বাইরে ব্যবসায়িক ও সামাজিক অঙ্গনেও তাঁর গ্রহনযোগ্যতা রয়েছে।

সম্মেলন সফল করতে জেলা জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি এবং জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কংজরী চৌধুরীকে অর্থ উপ-কমিটির আহ্বায়ক, জেলা আওয়ামী লীগের যুব ও ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক এবং জেলা পরিষদ সদস্য মংসুইপ্রু চৌধুরী অপুকে আপ্যায়ন উপ-কমিটির আহ্বায়ক, তরুন রাজনীতিবিদ এবং জেলা পরিষদ সদস্য পার্থ ত্রিপুরা জুয়েলকে স্বেচ্ছাসেবক উপ-কমিটির আহ্বায়ক, জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি কল্যাণ মিত্র বড়–য়াকে অভ্যর্থনা উপ-কমিটির আহ্বায়ক, ক্যাজরী মারমাকে প্রচার উপ-কমিটির আহ্বায়ক করে ৫টি উপ-কমিটি গঠন করে নেতাকর্মীদের মাঝে দায়িত্ব বন্টন করে দেয়া হয়েছে।

স্বেচ্ছাসেবক উপ-কমিটির আহ্বায়ক পার্থ ত্রিপুরা জুয়েল বলেন, আগামী ২৪ নভেম্বর জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন সফল করতে আমরা বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি। সেদিন সম্মেলনে সারা জেলা থেকে আগত প্রায় ১৫ হাজার নেতাকর্মী এবং আমাদের মেহমানদের যেন কোন প্রকার কষ্ট না হয় সে জন্য আমাদের পক্ষ থেকে প্রায় ২ হাজার স্বেচ্ছাসেবক মাঠে থাকবে। আমরা একটি সুন্দর, সুশৃঙ্খল সম্মেলন সম্পন্ন করতে চাই।

জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক এবং জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি চাইথোঅং মারমা বলেন, সম্মেলনকে ঘিরে আমাদের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। ইতিমধ্যে সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির সভাও করা হয়েছে। সম্মেলনে প্রায় দশ হাজার লোকের সমাগম হবে। সে লক্ষে আমরা একটি শান্তিপূর্র্ণ সম্মেলন সস্পন্ন করতে কাজ করছি।

জেলা কমিটির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নির্মলেন্দু চৌধুরী বলেন, ১৯৮০ সাল থেকে আওয়ামী লীগের সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত আছি। দলের দুঃসময়ে অনেক দূঃখ,কষ্ট সহ্য করেছি। বর্তমানে সুশৃঙ্খলভাবে জেলার ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছি। নেতাকর্মীরা চাইলে আমি সাধারণ সম্পাদক হতে পারব।

জেলা কমিটির বর্তমান সাংগঠনিক সম্পাদক এম. এ. জব্বার বলেন, দীর্ঘদিন থেকে আওয়ামী লীগের রাজনীতি করে আসছি। ১৯৯১-৯৪ সাল পর্যন্ত আমি মানিকছড়ি উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলাম। ১৯৯৫-২০১২ সাল পর্যন্ত উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছি। বর্তমানে নিষ্ঠার সাথে জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছি। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন সাবেক ছাত্রনেতাদের প্রাধান্য দিবেন। এ ক্ষেত্রে আমি আশাবাদী নেতাকর্মী এবং দল যদি চায়, আমি সাধারণ সম্পাদক হবো।

মাটিরাঙ্গা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও পৌর মেয়র মোঃ শামছুল হক বলেন, যারা দলের দুঃসময়ে বেশি কষ্ট সহ্য করেছে এখন তাদের মূল্যায়ন করা উচিত। আমি সাধারণ সম্পাদক পদে প্রার্থী হয়েছি, নেতাকর্মীরা বিচার-বিশ্লেষণ করে যে সিদ্ধান্ত দিবেন আমি সেটা মেনে নেবো।
জেলা আওয়ামী লীগের শিক্ষা ও মানব সম্পদ বিষয়ক সম্পাদক মোঃ দিদারুল আলম বলেন, আমি তৃণমূল ছাত্রলীগ থেকে উঠে এসেছি। কলেজ ছাত্রলীগ এরপর জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করেছি।

জেলা কমিটির সহ-সভাপতি মোঃ মনির হোসেন খান বলেন, দীর্ঘ সময় থেকে আমি আওয়ামীলীগের সাথে আছি। দল চাইলে আমি সাধারণ সম্পাদক হব। সে লক্ষ্যে আমি দলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছি।

দীঘিনালা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান হাজী মোহাম্মদ কাশেম বলেন, সম্মেলন উপলক্ষে নেতাকর্মীদের মাঝে উৎসাহ-উদ্দীপনা দেখা দিয়েছে। কাউন্সিলর আর নেতাকর্মীদের সমর্থন আর ভালোবাসার চাইতে আর কোন বড় প্রাপ্তি নেই। তাঁরা চাইলে আমি সাধারণ সম্পাদক হতে পারি।

২০১২ সালের ১১ নভেম্বর খাগড়াছড়ি জেলা আওয়ামী লীগের কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হলেও প্রায় তিন বছর পর ২০১৫ সালের ৫ অক্টোবর কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরাকে সভাপতি ও জাহেদুল আলমকে সাধারণ সম্পাদক করে খাগড়াছড়ি জেলা আওয়ামী লীগের ৭১ সদস্য বিশিষ্ট কার্যনির্বাহী কমিটির অনুমোদন পায়। কিন্তু ২০১৫ সালের খাগড়াছড়ি পৌর নির্বাচন ইস্যুতে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের মধ্যে বিরোধের সৃষ্টি হয়। সেই বিরোধ পৌঁছে যায় তৃণমূল পর্যন্ত। শুরু হয় আলাদা কর্মসূচী পালন, পাল্টা-পাল্টি হামলা-মামলা। দুইপক্ষের মধ্যে অন্তত তিন ডজন পাল্টা-পাল্টি মামলা হয়। এমন কি প্রাণহানির ঘটনাও ঘটে।


খাগড়াছড়ি |  আরও খবর
এইমাত্র পাওয়া
আর্কাইভ
সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত, ২০১৭-২০১৮।    Design & developed by: Ribeng IT Solutions