প্রসঙ্গ: পাহাড়ের উত্তপ্ত পরিবেশ : প্রদীপ চৌধুরী

বিশ্বের অন্যতম গ্রহণযোগ্য গণমাধ্যম ‘বিবিসি’ তাঁদের বাংলা মাধ্যমে সাম্প্রতিক সময়ে পার্বত্যাঞ্চলে সংঘটিত সন্ত্রাসী কার্যক্রম নিয়ে আজ (২৭ আগস্ট) একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। দিনের শেষ বেলায় নিশ্চয়ই এটি এরিমধ্যে লক্ষ কোটি মানুষের নজর ছুঁয়ে গেছে।
বলা চলে নভেম্বর ২০১৭ থেকে আগস্ট ২০১৯, এই একুশ মাসে বিশেষ করে খাগড়াছড়ি’র নয় উপজেলা ও রাঙামাটি জেলার বাঘাইছড়ি, লংগদু, নানিয়ারচর ও বরকল উপজেলা মিলে প্রায় অর্ধশত রাজনৈতিক খুনোখুনির ঘটনা ঘটেছে। একই সময়ে আঞ্চলিক দলের সাথে ক্ষমতাসীন সরকার দলের বিরোধের উত্তাপ ছড়িয়েছে রাঙামাটি ও বান্দরবানেও। তাতেও উল্লেখযোগ্য সংখ্যক নেতাকর্মীর অনাকাঙ্খিত প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে।
সেই ‘শান্তিচুক্তি’র পর থেকে তিন পার্বত্য জেলায় নিরবিচ্ছিন্নভাবে পাহাড়িদের মধ্যে অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণ লেগেই আছে। কে কখন মারা যাবেন বা অপহরণ হবেন, তার কোন কার্যকারণ কেউ-ই নির্ধারণ করতে পারেন না। ‘বিবিসি বাংলা’র প্রতিবেদনে ঠিকই বলা হয়েছে, খাগড়াছড়িতেই শান্তিচুক্তি বিরোধী বা এই চুক্তি’র সাথে দ্বিমত পোষনকারী ‘ইউপিডিএফ’র অবস্থান ভালো। ২০০১ সালের ১ অক্টোবর অনুষ্ঠিত অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রথমবারের মতো খাগড়াছড়ি ২৯৮নং সংসদীয় আসনে ‘ইউপিডিএফ’ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয়। পার্বত্য শান্তিচুক্তি’র উছিলায় স্থায়ী বাসিন্দাদের নিয়ে ভোটার তালিকা প্রণয়নের প্রশ্নে সে নির্বাচন সশস্ত্র পন্থায় বর্জনের পথে ছিল শান্তিচুক্তি স্বাক্ষরকারী সন্তু লারমা’র নেতৃত্বাধীন ‘পিসিজেএসএস’। প্রথম নির্বাচনেই বেশ ভালো ভোট পেয়ে ‘ইউপিডিএফ’ প্রধান প্রসিত বিকাশ খীসা দেশ-বিদেশকে তাক লাগিয়ে দেন।
বিগত দুইটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটি আসনে মূলধারার রাজনৈতিক দল হিসেবে ‘আওয়ামীলীগ’-এর নেতাকর্মীদেরকে রীতিমতো ভীতিকর অবস্থায় পড়তে হয়ছে। অথচ, আদর্শিক দিক থেকে আঞ্চলিক দলগুলোর সাথে দক্ষিণ এশিয়ার প্রাচীনতম এই দলটির কোনই বিরোধ থাকার কথা নয়। কিন্তু, অবৈধ-অদৃশ্য এবং অনৈতিক জোরজবরদস্তির মাধ্যমে সাধারণ পাহাড়িরা জিম্মি থাকতে বাধ্য হয়েছেন। বেশিরভাগ পাহাড়ি অধ্যুষিত এলাকাতে মানুষ স্বাধীনভাবে ভোটকেন্দ্রে পর্যন্ত যেতে পারেন নি। তার বিরুপ প্রভাবের শিকার হচ্ছেন সব মানুষই।
সময় থাকতে সঠিক পথের নিশানা ঠিক করতে না পারলে, পরবর্তী প্রজন্ম কাউকে ক্ষমা করবে না। তিরিশ লক্ষ শহীদ আর দুই লক্ষ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে অর্জিত বাংলাদেশর মানুষ ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম’কে একই মানচিত্রই মনে করে। উনিশ’শ একাত্তর সালে জাতির পিতা’র তর্জনী কাঁপুনিতে নয় মাসের যে রক্তক্ষয়ী সংগ্রাম হয়েছে, সেই সংগ্রামের সোনালি ফসল এই ছাপ্পানো হাজার বর্গমাইলের সবুজ জমিন ‘প্রিয় বাংলাদেশ’।
প্রদীপ চৌধুরী: সংবাদকর্মী।