বৃহস্পতিবার | ২৮ মার্চ, ২০২৪
খাগড়াছড়িতে

সরকারি দলের বিরুদ্ধে বিএনপি প্রার্থীর আপত্তি, অভিযোগ নেই প্রশাসনে

প্রকাশঃ ০৯ ডিসেম্বর, ২০১৮ ০১:১১:১৪ | আপডেটঃ ২৪ মার্চ, ২০২৪ ১১:৩৬:২০
সিএইচটি টুডে ডট কম, খাগড়াছড়ি। খাগড়াছড়ি সংসদীয় আসনে সরকার দলীয় প্রার্থী বর্তমান সংসদ সদস্য কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা ও তাঁর নেতাকমীদের আচরণ বিধি লংঘন, বিএনপি নেতাকর্মীদের পুলিশের হয়রানী, বিএনপি অফিস খুলতে হুমকি ও  লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড না হওয়ার অভিযোগ এনে পপ্রান নির্বাচন কমিশনার বরাবর  রোববার (৯ ডিসেম্বর) চিঠি দিয়েছেন খাগড়াছড়ি ২৯৮ আসনের বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী শহীদুল ইসলাম ভুইয়া। তবে এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক এবং জেলা পুলিশ সুপার দাবি করেছেন, কোথাও এমন কোন ঘটনার সুস্পষ্ট অভিযোগ পেলে অবশ্যই আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। প্রশাসনের পক্ষ থেকো কারো প্রতিই কোন পক্ষপাতমূলক আচরণ করা হবে না।
শহীদুল ইসলামের পাঠানো চিঠিতে বিভিন্ন অভিযোগ এনে বলা হয়েছে, সুষ্ঠ নির্বাচনের স্বার্থে খাগড়াছড়িতে  লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড এখনো তৈরী হয়নি।
খাগড়াছড়ি সংসদীয় আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী সংসদ সদস্য হওয়ার পাশাপাশি তিনি প্রতিমন্ত্রী পদমর্যাদার পার্বত্য চট্টগ্রাম টাস্কফোর্স চেয়ারম্যান পদে আছেন। রাষ্ট্রীয় সকল সুযোগ-সুবিধা ভোগ করছেন। নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার পরও সে পদ-পদবী ব্যবহার করে তিনি পুলিশের স্কট ও গানম্যান ব্যবহার করছেন।
চিঠিতে বলা হয়, গত ২৮ নভেম্বর জনাব কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা এমপি কয়েক হাজার নেতাকর্মীসহ বিশাল মিছিল নিয়ে মনোনয়নপত্র দাখিলের সময় আচরণ বিধি লংঘন করলেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো প্রকার বাধা  দেওয়া বা সতর্ক করা হয়নি।
নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর এখনো খাগড়াছড়িতে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরী হয়নি। জেলার নির্বাচনী এলাকার আওতাধীন বিভিন্ন উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ের বিএনপির অফিসগুলো সরকার দলীয় নেতাদের হুমকিতে এখনো খোলা সম্ভব হয়নি। রামগড় উপজেলার লামকু ইউনিয়ন পরিষদের সামনে অবস্থিত বিএনপির অফিসটি খুলতে দিচ্ছে না আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতারা। গত ৩০ নভেম্বর রামগড়ে ছাত্রদল নেতা মনির হোসেন, ১৫ নভেম্বর হৃদয়ের উপর হামলা চালানো হয়েছে। গত ২৭ নভেম্বর রামগড় বাজারে ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের উপর ছাত্রলীগ নেতা আরাফাতের নেতৃত্বে হামলা চালানো হয়েছে।
গত ১৬ নভেম্বর রাত ৯টার দিকে জেলার মানিকছড়ি উপজলার ছাত্রদল সভাপতি জাহাঙ্গীর হোসেনের উপর ছাত্রলীগের নেতারা হামলা চালিয়ে তাকে গুরতর আহত করেছে।
পুলিশের ভূমিকা নিয়ে চিঠিতে অভিযোগ করে বলা হয়েছে, খাগড়াছড়ি জেলার রামগড় থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা(ওসি) তারেক মো. আব্দুল হান্নান অতি উৎসাহী  হয়ে প্রতি রাতে বিএনপির নেতাকর্মীদের গ্রেফতারের জন্য বাড়ি-ঘরে অভিযান চালাচ্ছে। ফলে পুলিশের ভয়ে বিএনপির নেতাকর্মীরা এলাকায় আসতে ও নির্বাচনী কর্মকান্ডে অংশগ্রহণ করতে পারছে না।

অভিযোগ করে চিঠিতে বলাহয়, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান ‘খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ’-এ উপমন্ত্রী পদমর্যাদার একজন চেয়ারম্যানসহ ১৫ সদস্যের পরিষদের সকলে আওয়ামী লীগের নেতা, যারা সকলেই সরকার কর্তৃক অস্থায়ী নিয়োগ প্রাপ্ত। পরিষদের কছে রাষ্ট্রের হস্তান্তরিত ২৪টি সরকারি বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতাসহ চাকরির এচিয়ার দিয়ে থাকেন পরিষদ চেয়ারম্যান। পরিষদের চেয়ারম্যান ও সদস্যরা  সরকারি গাড়িসহ যাবতীয় সুযোগ-সুবিধা নিয়ে আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণা চালিয়ে নির্বাচনী আচরণ বিধি লংঘন করছে।
নির্বাচনের আগ মুহূর্তে বিএনপি নেতাকর্মীদের হয়রানি করা হচ্ছে এমন অভিযোগ তুলে, কোথায় কারা হয়রানি হয়েছে চিঠিতে তা বিস্তারিত উল্লেখ করা হয। চিঠিতে বলা হয়েছে, গত ২ ডিসেম্বর পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তি বর্ষপূতি উপলক্ষে র‌্যালিতে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা নৌকার পক্ষে ভোট চেয়ে শ্লোগান দিয়েছে। একই দিন শান্তিচুক্তি উপলক্ষে জেলা সদর ও বিভিন্ন উপজেলার আয়োজিত আলোচনা সভাগুলোতে আওয়ামী লীগের নেতারা তাদের দলীয় প্রার্থীর পক্ষে ভোট চেয়ে বক্তব্য রেখে আচরণ বিধি লংঘন করেছেন।
গত ০৫ ডিসেম্বর দিঘীনালা উপজেলা বেতছড়ি ও মেরুং এ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নিউটন মহাজনের নেতৃত্বে ১৫/২০জন আওয়ামী লীগের কর্মী হামলা চালিয়ে যুবদলের সদস্য মো. রফিকসহ বিএনপির ৮নেতা কর্মীকে আহত করে। ৭ ডিসেম্বর রাত ৮টার দিকে দিঘীনালা উপজেলার কবাখালীতে জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সি. সহ-সভাপতি জয়নাল আবেদীনের অফিসে ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি সাইফুলের নেতৃত্বে পুলিশের সহযোগিতায় একদল কর্মী হামলা চালায় এবং তাকে মারধর করে আহত করে।
৮ডিসেম্বর বিকাল ৪টার দিকে রামগড় উপজেলার কালা ডেবা এলাকায় ছাত্রলীগ ও যুবলীগের কর্মীরা ২০/২৫টি মোটরসাইকেল নিয়ে মহড়া দেয় এবং উপজেলা বিএনপির সহ-সভাপতি মিন্টু কোম্পানী ও বিএনপির নেতা শাহ আলমসহ নেতাকর্মীদের বাড়ি-ঘরে হানা দিয়ে এলাকা ছেড়ে যেতে হুমকি দেয়। অন্যথায় টাকা দাবি করে।
৮ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় খাগড়াছড়ি শহরের কলেজ গেইট এলাকায় সাবেক পৌরসভার ওয়ার্ড কাউন্সিল ও জেলা যুবলীগের সহ-সভাপতি  মেহেদী হাসান হেলালের নেতৃত্বে ১০/১৫ জন আওয়ামী লীগের কর্মী বিএনপির নেতা বিনোদ কোম্পানী, যুবদল হেলালকে সহ দলীয় নেতাকর্মীদের এলাকা ছেড়ে চলে যেতে বলে, নচেৎ প্রাণ নাশের হুমকি দেয়। এমতাবস্থায় খাগড়াছড়ি আসনে অবাধ-সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে সাধারণ ভোটারদের মনে গভীর সংশয় সৃষ্টি হয়েছে।
এসকল অভিযোগ উল্লেখ করে খাগড়াছড়ি আসনে অবাধ ও নিরপেক্ষ, গ্রহনযোগ্য নির্বাচনের স্বার্থে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরী করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্টদের আবেদন করেন বিএনপি প্রার্থী শহীদুল ইসলাম ভুইয়া।
এ বিষয়ে খাগড়াছড়ির পুলিশ সুপার মো: আহমারউজ্জামান বলেন, কোথাও এমন কোন ঘটনা ঘটে থাকলে তাৎক্ণনিক সংশ্লিষ্ট থানা, পুলিশ তদন্তকেন্দ্র এবং ফাঁড়িতে অভিযোগ করার সুযোগ রয়েছে। এখন পর্যন্ত কোথাও তাঁদের পক্ষ থেকে কোন অভিযোগ বা এজাহার দাখিল করা হয়নি। ফলে পুলিশের পক্ষ থেকে পদক্ষেপ নেয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়নি।
তিনি দাবি করেন, সুনির্দিষ্ট অভিযোগ দায়ের হলে পুলিশ অবশ্যই অর্পিত দায়িত্ব পালন করবে।

খাগড়াছড়ির জেলা প্রশাসক মো: শহিদুল ইসলাম বলেন, মাননীয় সংসদ সদস্য এখন পর্যন্ত প্রতিমন্ত্রী পদ-মর্যাদায় শরণার্থী টাস্কফোর্সের চেয়ারম্যান। তিনি জাতীয় পতাকা ও সরকারি গাড়ী ব্যবহার করছেন বলে এমন কোন ঘটনা দৃশ্যমান হয়নি। আর নির্বাচনী আইন অনুযায়ী প্রত্যেক প্রার্থীর প্রয়োজন অনুযায়ী নিরাপত্তা বিধানের ক্ষেত্রে প্রশাসন নিরপেক্ষ থাকতে বাধ্য। এবং স্ব স্ব প্রার্থীর আবেদনের প্রেক্ষিতে আমরা তাই করছি।
খাগড়াছড়ি জেলা আওয়ামীলীগের ভারপ্রাপ্ত সা: সম্পাদক ও নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্য-সচিব নির্মলেন্দু চৌধুরী দাবি করেন, বিএনপি প্রার্থী নির্বাচন কমিশন আইন অনুযায়ী প্রচারণা শুরু হবার আগেই দলীয় প্রতীক নিয়ে শহরে এবং উপজেলায় প্রকাশ্যে প্রচারণা চালাচ্ছেন।

খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি কংজরী চৌধুরী বলেন, নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনার বাইরে তিনি কোন দলীয় প্রচারণায় এখন পর্যন্ত যোগ দেননি। কিন্তু দায়িত্বপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে সরকারি রুটিনওয়ার্ক এবং সভা-সমাবেশে যোগ দেয়ার অধিকার আইন স্বীকৃত। এছাড়া সরকারের উন্নয়ন কর্মকান্ডের প্রচার-প্রসারে নির্বাচনী আইনে কোথাও কোন বাধা নেই।

খাগড়াছড়িতে সরকারি দলের প্রার্থী এবং বর্তমান সংসদ সদস্য কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা বলেন, দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ২০১৪ সালে মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার আগেই আমি জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদ থেকে পদত্যাগ করেছি। এখনও দলের প্রার্থী হবার পর থেকে কোথাও আমি শরণার্থী টাস্কফোর্স চেয়ারম্যান হিশেবে প্রতিমন্ত্রী পদ-মর্যাদার কোনই অপ-ব্যবহার করছি না। যাঁরা এসব অভিযোগ তুলছেন তাঁরা অকেটা গায়ে পড়ে ঝগড়া লাগানোর মাধ্যমে এখানকার শান্তিপূর্ন নির্বাচনী পরিবেশকে বানচাল করার অপচেষ্টা চালাচ্ছেন।   

খাগড়াছড়ি |  আরও খবর
এইমাত্র পাওয়া
আর্কাইভ
সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত, ২০১৭-২০১৮।    Design & developed by: Ribeng IT Solutions