বৃহস্পতিবার | ২৮ মার্চ, ২০২৪

খাগড়াছড়ির অর্ধ-লক্ষাধিক তরুণ ভোটাররাই নির্বাচনে জয়-পরাজয়ে বড়ো ফ্যাক্টর

প্রকাশঃ ০৫ ডিসেম্বর, ২০১৮ ০২:৩৫:১৪ | আপডেটঃ ২৮ মার্চ, ২০২৪ ০৫:১৪:১৫
সিএইচটি টুডে ডট কম, খাগড়াছড়ি। খাগড়াছড়ি সংসদীয় আসনে এবার নতুন ভোটার হিসেবে প্রথমবারের মতো জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন ৬১ হাজার নতুন ভোটার। এসব ভোটারের প্রায় সবার কাছেই তথ্য-প্রযুক্তি জ্ঞানের পাশাপাশি রয়েছে রাজনৈতিক সচেতনতাও। তবে এতোসব বিষয় ছাপিয়ে তাঁদের সামনে বড়ো ইস্যু হয়ে আছে পাহাড়ে শান্তি প্রতিষ্ঠা ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখা। কারণ ১৯৯৭ সালের শেষদিকে সম্পাদিত পার্বত্য শান্তিচুক্তি’র পরের এই প্রজন্ম খাগড়াছড়ি জেলায় একের পর এক সাম্প্রদায়িক সংঘাত আর রাজনৈতিক হানাহানিই দেখে এসেছে। বিশেষ করে পাহাড়ি তরুণদের বড়ো একটি অংশ নিজেদের জীবনের অনিশ্চয়তার সাথে হারিয়েছেন স্বজন-আত্মীয়ও। বিষয়টি ভাবিয়ে তুলছে এবারকার নির্বাচনের প্রতিদ্ধন্ধী দলগুলোকেও। এই বিশাল একটি অংকের নতুন ভোটারদের নিয়ে এবার নতুন করে ভাবতে শুরু করেছে রাজনৈতিক দলগুলো। শান্তি প্রতিষ্ঠা ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি নতুন ভোটারদের মন জয়ে বিশেষ মনোযোগ দিতে হচ্ছে।

খাগড়াছড়ি জেলায় নয়টি উপজেলা ও তিনটি পৌরসভা রয়েছে। গত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ আসনের ভোটার সংখ্যা ছিলো ৩ লক্ষ ৮০ হাজার ৮৫৭। এবার সেই ভোটার বেড়ে হয়েছে ৪ লক্ষ ৪১ হাজার ৬৯২। প্রায় ৬১ হাজার ভোটার বেড়েছে। গত সংসদ নির্বাচনের ফলাফলের বিবেচনায় এই সংখ্যা নির্বাচনে জয় পরাজয়ে বড় ভূমিকা রাখতে পারে। তাই বড় দলগুলো নতুন ভোটার আকর্ষণেও চেষ্টা চালাচ্ছে।
নবম ও দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন থেকে এই আসনটি আওয়ামীলীগের দখলে। বর্তমান সংসদ সদস্য কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা দশম সংসদ নির্বাচনে ৯৯ হাজার ৫৮ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছিলেন। তার প্রতিদ্বন্ধী ছিলেন আঞ্চলিক দল ইউনাইটেড পিপলস্ ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) সমর্থিত প্রার্থী প্রসিত বিকাশ খীসা। তিনি পেয়েছিলেন ৬৭ হাজার ৭০০ ভোট।
আওয়ামীলীগ ও বিএনপি এবারের সংসদ নির্বাচনে তরুণ ভোটারদের আকৃষ্ট করার জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টি, বিভিন্ন কর্মসংস্থানমুখী প্রকল্প গ্রহণের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন।
তরুণ ভোটারদের মধ্যে সরকার সমর্থক ভোটাররা মনে করছেন, দেশে জেলায় জেলায় নানামুখী উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। আন্দোলনের ফলে কোটা বাতিল হওয়ায় মেধাবীদের চাকরির পথ প্রশস্ত হয়েছে। যুদ্ধাপরাধী-স্বাধীনতা বিরোধী ও জঙ্গীবাদের কবল থেকে দেশকে মুক্ত করে সরকার একটি স্থিতিশীল পরিবেশ টিকিয়ে রেখেছে।

বিএনপি এবং সরকার বিরোধী অন্যসব দলের সমর্থক ভোটাররা মনে করেন, বিশাল অংকের নতুন ভোটাররা সারাদেশেই একটি অবাধ-সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে নিজেদের সুচিন্তিত রায় প্রদানের জন্য মুখিয়ে আছেন। এরিমধ্যে কোটা বিরোধী এবং নিরাপদ সড়ক আন্দোলনে ব্যাপক জুলুমের শিকার হয়েছেন। তাই সারাদেশের তরুণ ভোটাররাই গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের স্বপ্ন থেকে একটি নতুন সরকারকেই ক্ষমতায় বসাতে চাইবে।
জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি টিকো চাকমা বলেন, একটি দরিদ্র দেশকে প্রধানমন্ত্রী তাঁর দূরদর্শী নেতৃত্বের গুণে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করেছেন। তথ্যপ্রযুক্তি, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট, পদ্মা সেতু, দেশী-বিদেশী বিনিয়োগের মাধ্যমে মেধাবী তরুণদের নবতর স্বপ্নে ঐক্যবদ্ধ করেছেন। তাই সারাদেশের নতুন ভোটাররা মুক্তিযুদ্ধের প্রতীক নৌকাকেই বেছে নিবেন।

সাবেক ছাত্রনেতা ও জেলা জাতীয়তাবাদী যুব দলের সা: সম্পাদক ইব্রাহিম খলিল বলেন, বিগত ২০০১ সাল থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত বিএনপি শাসনামলে খাগড়াছড়ির সংসদ সদস্য ওয়াদুদ ভূইয়া উন্নয়ন বোর্ডের মাধ্যমে পুরো জেলায় হাজার হাজার তরুণদের কৃষিভিত্তিক অর্থনীতিতে সম্পৃক্ত করেছেন। আজকে খাগড়াছড়ি থেকে সারাদেশে আম্রপালি, লিচু, কমলাসহ নানা ধরনের ফল সরবরাহ হচ্ছে। তরুণদের অবক্ষয়রোধে তিনি পাড়ায় পাড়ায় সামাজিক সংগঠন গড়ে তুলেছেন। এসবের প্রতিফলন ঘটবে তরুণদের রায়েই।
জেলার ৯টি উপজেলার নতুন ভোটারদের পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, নতুন ৬১ হাজার ভোটারের মধ্যে প্রায় সমসংখ্যক পাহাড়ি ও বাঙালি। বাঙালিদের মধ্যে জাতীয় রাজনীতির প্রভাব প্রবল হলেও পাহাড়ি তরুণদের বড়ো একটি অংশই আঞ্চলিক রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত। এ ঘরানার ভোটারদের অধিকাংশই সরকাবিমুখ।

তবে এই ত্রিধাবিভক্ত পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি)-এর দায়িত্বশীল কোন নেতাই নাম প্রকাশ করতে ইচ্ছুক হননি। ইউপিডিএফ ঘরানার পিসিপি-এর এক নেতা দাবী করেন, গত এক দশকে খাগড়াছড়িতে পাহাড়িদের ওপর যে পরিমাণ দমন-নিপীড়ন হয়েছে তাতে সরকারের প্রতি সন্তুষ্ট থাকার মতো কোনই যুক্তি নেই। বর্তমান সরকারের দুই মেয়াদে খাগড়াছড়িতে চাকরি দেয়ার নামে মানুষকে সর্বস্বান্ত হতে হয়েছে। মেধাবী-অমেধাবী প্রায় সকলকেই লাখ লাখ টাকার বিনিময়ে চাকরি নিতে হয়েছে।

খাগড়াছড়ি সংসদীয় আসনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী শহিদুল ইসলাম ভূইয়া বলেন, আমাদের দল জনগণের রায়ে জিতে আসলে খাগড়াছড়ির শিক্ষার্থী-তরুণদের জন্য শিক্ষার সহজীকরণ, ব্যয় সংকোচন, মানবসম্পদ উন্নয়নের মাধ্যমে কর্মসংস্থান নিশ্চিত, মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে চাকুরী প্রদান এবং একটি অসাম্প্রদায়িক পরিবেশ সৃষ্টির প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখবো।

খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কংজরী চৌধুরী বলেন, বর্তমান সরকারের দুই মেয়াদে খাগড়াছড়িসহ অপর দুই জেলায় বিশ^বিদ্যালয়, মেডিকেল কলেজ, প্রাইমারি টিচার্স ট্রেনিং ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। প্রায় প্রতিটি বিসিএস-এ বিপুল সংখ্যক পাহাড়ি-বাঙালি তরুণদের চাকরি হয়েছে। অথচ বিএনপি ২০০১ থেকে ২০০৬ সালে ক্ষমতায় থেকে দেশের তরুণদের জঙ্গী মতাদর্শেই উদ্বুদ্ধ করেছে। বর্হিবিশে^ দেশের সুনাম নষ্ট করেছে।
খাগড়াছড়ির বর্তমান সংসদ সদস্য ও একাদশ নির্বাচনেও সরকারি দলের প্রার্থী কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা বলেন, প্রধানমন্ত্রী দেশরতœ সবসময় তরুণদের স্বপ্নকেই প্রাধান্য দিয়েছেন। তরুণদের মেধা ও যোগ্যতার যাতে অবমূল্যায়ন না হয় সেজন্য বিসিএস-এ কোটা ফ্রি করে দিয়েছেন। দেশের জেলায় জেলায় আজকে বিশ^বিদ্যালয়-মেডিকেল কলেজ। শুধুমাত্র খাগড়াছড়ি জেলাতেই ৯টি কলেজ, ১০টি হাইস্কুল এবং কয়েক’শ প্রাথমিক বিদ্যালয় সরকারিকরণ করেছেন।
তিনি দৃঢ়তার সাথেই দাবী করেন, দল এবার ক্ষমতায় আসলে খাগড়াছড়ি জেলার তরুণরা খাগড়াছড়িতেই যোগ্যতম কর্মের ঠিকানা খুঁজে পাবে। অন্য কোথাও যেতে হবে না।
দশম সংসদ নির্বাচনে ৫০% ভোটার ভোট প্রদান করেছে। তাই প্রতিদ্বন্ধী প্রার্থীদের ভোটের পার্থক্য খুব বেশী নয়। তাই এবারে তরুণ ভোটারদের যে দল টানতে পারবে, সেই দল নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বেশী।


খাগড়াছড়ি |  আরও খবর
এইমাত্র পাওয়া
আর্কাইভ
সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত, ২০১৭-২০১৮।    Design & developed by: Ribeng IT Solutions