বুধবার | ১৫ জানুয়ারী, ২০২৫

মাসে ৩ লক্ষ টাকার বিনিময়ে কেএনএফের ক্যাম্পে জঙ্গিদের প্রশিক্ষণ

প্রকাশঃ ২১ অক্টোবর, ২০২২ ১০:০৭:৪৪ | আপডেটঃ ১৪ জানুয়ারী, ২০২৫ ১২:২২:৫৮
সিএইচটি টুডে ডট কম, বান্দরবান। বান্দরবান ও রাঙামাটির জেলার দুর্গম এলাকায় হিজরতের উদ্দেশ্যে বাড়ি থেকে নিখোঁজ তরুণদের জঙ্গি প্রশিক্ষণ দেওয়ার খবরে অভিযান চালায় যৌথবাহিনী। এ সময় ৭জঙ্গি ও কুকি চীন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফের) তিন সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।  গ্রেফতারকৃতরা জানায়, মাসে তিন লক্ষ টাকা ও খাবারের বিনিময়ে কেএনএফের সঙ্গে জঙ্গিদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার চুক্তি হয়েছিল।

শুক্রবার (২১ অক্টোবর) দুপুর ১২টায় বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদ মিলনায়তনে র‌্যবের পক্ষ থেকে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

এসময় র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন সাংবাদিকদের জানান,সম্প্রতি কুমিল্লা হতে বেশ কয়েকজন তরুণ উগ্রবাদে উদ্ধুদ্ধ হয়ে বাড়ি থেকে নিরুদ্দেশ হয় । এলিট ফোর্স র‌্যাব সেই বিষয়ে গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করে। এসময় এলিট ফোর্স র‌্যাব আরো জানতে পারে আর বেশ কয়েকজন তরুণ ঘর ছেড়ে উগ্রবাদের উদ্যোশে বের হওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। র‌্যাবের গোয়েন্দা শাখার একটি টিম বাড়ি ছেড়ে যাওয়ার প্রস্তুুতি নিচ্ছে এরকম ৪তরুণকে ইতোমধ্যে উদ্ধার করতে সক্ষম হয়।

এসময় তিনি আরো জানান, জঙ্গিবাদে জড়িয়ে নতুন করে কথিত হিজরতের নামে ঘরছাড়া তরুণরা জামাতুল আনসারের হয়ে পাহাড়ি এলাকার আস্তানায় আশ্রয় নেয়। সেখানে তাদের ভারী অস্ত্র চালানোর প্রশিক্ষণ দেওয়া হতো, পার্বত্য অঞ্চলের প্রশিক্ষণ শিবিরে অর্ধশতাধিক প্রশিক্ষণার্থী রয়েছে।
আনিসুর রহমান মাহমুদের নেতৃত্বে ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’ নামের উগ্রবাদী সংগঠনে ছয় জন শূরা সদস্য রয়েছে, যারা দাওয়াতি, সামরিক, অর্থ, মিডিয়া ও উপদেষ্টার দায়িত্বে রয়েছে। শূরা সদস্য আবদুল্লাহ মাইমুন দাওয়াতি শাখার প্রধান, মাসকুর রহমান সামরিক শাখার প্রধান, মারুফ আহমেদ সামরিক শাখার দ্বিতীয় ব্যক্তি, মোশারফ হোসেন অর্থ ও গণমাধ্যম শাখার প্রধান, শামীম মাহফুজ প্রধান উপদেষ্টা ও প্রশিক্ষণের সার্বিক তত্বাবধায়ক এবং ভোলার শায়েখ আলেম বিভাগের প্রধান হিসেবে সংগঠনটিতে দায়িত্ব পালন করছে।

খন্দকার আল মঈন আরো বলেন, তারা অস্ত্র চালনাসহ সশস্ত্র সংগ্রামের বিভিন্ন প্রশিক্ষণ গোপনে পরিচালনার জন্য বান্দরবান ও রাঙামাটির দুর্গম এলাকাকে বেছে নেয়, এজন্য তারা স্থানীয় একটি বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠনের সহায়তা গ্রহণ করে। তারা পার্বত্য অঞ্চলের একটি বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন হতে তাদের খাদ্য ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি অর্থের বিনিময়ে সংগ্রহ করতো। তারা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে তাদের সদস্যদের সাথে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যোগাযোগ করে।

এদিকে ২০ অক্টোবর র‌্যাবের অভিযানে রাঙ্গামাটির জেলার বিলাইছড়ির সাইজামপাড়া ও বান্দরবানের রোয়াংছড়ি উপজেলার বাজার এলাকা থেকে র‌্যাব-৭ ও র‌্যাব-১৫ এর সদস্যরা অভিযান পরিচালনা করে পাহাড়ী বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন এর তিনজন সদস্যকে গ্রেফতার করে জানতে পারে তারা পার্বত্য চট্টগ্রামের কুকি চীন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফের) সদস্য। এসময় একটি জঙ্গি আস্তানা ধ্বংস করা হয় এবং সেখান থেকে ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’র ৭জন সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়। তবে সেখানে তাদের আরও বেশ কয়েকটি আস্তানা থাকতে পারে বিধায় যৌথবাহিনীর অভিযান চলমান থাকবে বলে জানায় র‌্যাব।

র‌্যাব জানায়,পার্বত্য চট্টগ্রামের কুকি চীন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফের) প্রতিষ্ঠাতা নাথাং বমের সঙ্গে ২০২১ সালে ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’র আমিরের সম্পর্ক গড়ে উঠে। পরে পার্বত্য অঞ্চলের কেএনএফের ছত্রচ্ছায়ায় তাদের সদস্যদের ২০২৩ সাল পর্যন্ত প্রশিক্ষণ প্রদানের জন্য চুক্তি হয়। চুক্তি অনুযায়ী প্রতি মাসে তিন লাখ টাকা এবং কেএনএফের সব সদস্যের খাবার খরচ বহন করা হতো।

এদিকে র‌্যাবের সংবাদ সম্মেলনের আগে বান্দরবানের মেঘলায় র‌্যাব -১৫ এর কার্যালয়ে ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’র ৭সদস্য ও কুকি চীন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফের) ৩ সদস্যকে সাংবাদিকদের সামনে হাজির করা হয়। গ্রেফতারকৃতরা হলেন,‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’র সদস্য সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলার সৈয়দ মারুফ আহমেদ (৩১),পিরোজপুরের স্বরুপকাঠি উপজেলার ইমরান হোসাইন (৩১),ঝিনাইদহের কাওসার (৪৬), সিলেটের বিয়ানীবাজার উপজেলার জাহাঙ্গীর আহম্মেদ(২৭), বরিশালের মো.ইব্রাহিম (১৯),সুনামগনেঞ্জর ছাতক থানার রুফু মিয়া। আর কুকি চীন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফের) এর সদস্য বান্দরবানের রোয়াংছড়ি উপজেলার জৌথান বম (১৯), স্টিফেন বম (১৯) ও মাল সম বম (২০)।

এসময় উদ্ধার করা বিপুল পরিমান অস্ত্র ও গোলাবারুদ প্রদর্শন করে র‌্যাব। যার মধ্যে রয়েছে ৯টি এসবিবিএল বন্দুক, ৫০ রাউন্ড এসবিবিএল বন্দুকের গুলি, ৬২টি কারতুজ কেইস, ছয়টি হাত বোমা, ওয়াকিটকি ,লিফলেট, পোশাক ও বিভিন্ন সরঞ্জাম।

আগামীতেও পার্বত্য এলাকায় উন্নয়ন ব্যাহত ও শান্তি শৃংঙ্খলা ভঙ্গে যারা জড়িত থাকবে এবং সন্ত্রাসী কর্মকান্ড পরিচালনা করবে সেই ধরণের সকল সংগঠন ও ব্যক্তির বিরুদ্ধে র‌্যাবের অভিযান অব্যাহত থাকবে বলে জানান র‌্যাবের লিগ্যাল আ্যন্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

বান্দরবান |  আরও খবর
এইমাত্র পাওয়া
আর্কাইভ
সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত, ২০১৭-২০১৮।    Design & developed by: Ribeng IT Solutions