কাউখালী সরকারী ডিগ্রি কলেজ
নামে আছে কাজে নেই কম্পিউটার ল্যাব !
প্রকাশঃ ১৭ অক্টোবর, ২০২২ ০৭:৪০:১২
| আপডেটঃ ১৬ জানুয়ারী, ২০২৫ ০২:৪৯:৫৬
মেহেদী হাসান সোহাগ, রাঙামাটি। রাঙামাটির কাউখালী উপজেলার একমাত্র সরকরী ডিগ্রি কলেজ। ১৯৯৯ সালে প্রতিষ্ঠার পর মানসম্মত শিক্ষা দিয়ে অন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কাছে মডেল হতে পরতো কাউখালী সরকারী ডিগ্রি কলেজ। কিন্তু শিক্ষাকদের মধ্যে বিভাজন, সদিচ্ছার অভাবে পিছিয়ে পড়েছে অন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে।
এই প্রতিষ্ঠানটি প্রতিষ্ঠার কয়েক বছর পর স্থাপন হয় ১২টি কম্পিউটার নিয়ে একটি আধুনিক কম্পিউটার ল্যাব। আবার আইসিটি সেল এর তত্তাবধানে ২০১৯ সালে ৩০ টি উন্নতমানের ডেক্সটপ কম্পিউটার দিয়ে নতুন করে স্থাপন করা হয় শেখ রাসেল ডিজিটাল কম্পিউটার ল্যাব।
শুধু স্থাপনেই সীমাবদ্ধ এই ল্যাবগুলো। শিক্ষার্থীদের কারিগরি শিক্ষায় দক্ষতা বাড়ানোর জন্য যে উদ্দেশ্যে কম্পিউটার ল্যাব স্থাপন, কার্যত এর কোন সুফলই পাচ্ছেনা কলেজ পড়–য়া শিক্ষার্থীরা। পাবেইবা কিভাবে এ ল্যাব যে নামে আছে, কাজে নেই।
ব্যবহার না করতে করতে ব্যবহারে অনুপযোগী হয়ে পড়েছে অধিকাংশ কম্পিউটার। কলেজ প্রতিষ্ঠার পরপর স্থাপন করা ল্যাবের ১২টি কম্পিউটারের মধ্যে ৯টি একেবারে নষ্ট হয়ে গেছে। বাকি তিনটি অফিসের কাজে ব্যবহার করছে অফিস সহকারীরা। শেখ রাসেল ল্যাবে ৩০ টি কম্পিউটারের ঠিক কতটি সচল আছে তা জানার সুযোগ হয়নি। কারণ ২০১৯ সালে ল্যাব প্রতিষ্ঠার পরযে কম্পিউটার গুলো ব্যবহার করা হয়নি। তবে দীর্ঘদিন ব্যবহার না করায় অধিকাংশই নষ্ট হওয়ার শংঙ্কা জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।
ল্যাবটিযে আসলেই ব্যবহার হয়নি সরেজমিন ঘুরে তাই দেখা গেছে। ল্যাবে দেখা যায় ব্যবহারকারীর চেয়ারে এখনো প্লাস্টিক মড়ানো রয়েছে। সাংবাদিকরা ল্যাব দেখতে চাওয়ায় পরিষ্কার করা হয় ল্যাবটি। অনেকটা ভুতুড়ে কক্ষেই মতোই দীর্ঘদিন ধরে পড়ে আছে এ কম্পিউটারগুলো। এতে করে শুরু থেকেই ল্যাবের সুফল পায়নি শিক্ষার্থী, গচ্চা গেছে সরকারি টাকা।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, দীর্ঘ বছর ধরে ল্যাবে শ্রেণী কার্যক্রম পরিচালনা করতে কোনো উদ্যোগ নেয়নি কলেজ প্রশাসন। অবশ্য এর অনেকটা দায়সাড়া জবাবও দিলেন শিক্ষকরা। অধ্যক্ষ দুষলেন দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষককে। শিক্ষক বলনেন এটা অধ্যক্ষের ষড়যন্ত্রমূলক বক্তব্য। দিলেন বিদ্যুৎ সমস্যার দোহাই।
যদিও বিদ্যৎ সমস্যার বিষয়টি মানতে নারাজ কলেজ ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও কাউখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাজমুন আরা সুলতানা। বিষয়টি দ্রæত সমাধানসহ চালু করার জন্য যাবতীয় ব্যবস্থা নিতে উর্ধতন কর্মকর্তাদের জানিয়েছেন বলে জানালেন তিনি।
এদিকে, তথ্যপ্রযুক্তি শিক্ষায় শিক্ষার্থীদের পারদর্শী করে তুলতে কলেজ প্রশাসনের গাফিলতিতে সরকারের মহাপরিকল্পনা ভেস্তে যেতে বসেছে বলছেন অভিভাবকরা। অভিভাবকরা বলেছেন, এ কলেজের শিক্ষকদের মাঝে চলছে দীর্ঘদিন ধরে গ্রপিং। প্রায় সব শিক্ষক সপ্তাহে তিনদিন কলেজে আসেন। সপ্তাহে ৫ দিন কলেজে উপস্থিত থাকার কথা থাকলেও নিজেরাই অনিয়মকে করেছেন নিয়ম। তৈরি করেছেন রোস্টার ডিউটি। সপ্তাহে তিনদিন করে ক্লাস নিবেন প্রতিজন শিক্ষক। সেই সুবাধে কম্পিউটার শিক্ষক আসেন তিনদিন। নামে তথ্য প্রযুক্তি কম্পিউটার ক্লাস করালেও ব্যবহারিকের ক্লাসের উদ্যোগ নেই।
সম্প্রতি ল্যাবটি সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, ডিগ্রি ভবনের তৃতীয় তলার কক্ষটিতে সারিবদ্ধভাবে বসানো আছে কম্পিউটার। কোনোটির সংযোগ আছে কোনোটির নেই। অযতœ-অবহেলায় ধুলোবালি জমেছে সবগুলো ডেক্সে। শিক্ষকরা ল্যাবটিতে ক্লাস চলছে দাবি করলেও শিক্ষার্থীরা বলছেন ভর্তি থেকে আজ অবধি কখনো কম্পিউটার কী করে চালু করতে হয় তা তারা জানতে পারেনি!।
কলেজের উচ্চ মাধ্যমিকের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী নয়না দেবী জানান, দীর্ঘদিন ধরে কম্পিটারগুলো অকেজো হয়ে পড়ায় তারা কম্পিউটারের ব্যবহারিক জ্ঞান থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। প্রতি সপ্তাহে দুইদিন ক্লাস হলেও কম্পিউটার কী তিনি আজ অবধি সেটি জানেন না। মানবিক বিভাগের রিনা চাকমা ও আব্দুল কাদের বলেন, আমাদের নামে মাত্র কম্পিউটার ক্লাস হয়, আমরা স্যারদের ব্যবাহারিক ক্লাসের জন্য অনেক বার বলছি, সমস্যার কথা অধ্যক্ষ স্যার কে জানিয়েছি, স্যারের বার বার বিদ্যুৎ এর সমস্যা দেখিয়ে সমস্যা সমাধান করেনি।
শিক্ষদের ভয়ে নাম প্রকাশ না করা শর্তে প্রথম ও দ্বিতীয় বর্ষের অনেক শিক্ষার্থী বলেন আমাদের কলেজের শিক্ষকদের দীর্ঘদিনের গ্রæপিং এর প্রভাব পড়ছে এই ল্যাব সহ শ্রেনী পাঠদানের উপর। তাদের সদিইচ্ছার কারনে আমাদের ল্যাবের সমস্যা সমাধান হচ্ছেনা।
কাউখালী ডিগ্রি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মোহাম্মদ ইসহাক জানান, ল্যাবটি চালু হওয়ার পর থেকে কম্পিউটার ল্যাবের দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট শিক্ষককে দেওয়া হয়েছে। তিনি বারবার বিদ্যুৎ এর কারনে ক্লাস নিতে পারছেন না জানালে আমি বিদ্যুৎ অফিসের সাথে যোগাযোগ করলে তারা বিদ্যুৎ কোন সমস্যা নাই বলে জানান। ল্যাব পরিচালনার দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট শিক্ষকের আমার না।
কম্পিউটার ল্যাবের দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষক উজ্জল কুমার বড়–য়া সব অভিযোগ কে ষড়যন্ত্র বলে মনে করছেন। তিনি বলছেন বিদ্যুতের সমস্যার কারণে আমি ল্যাব পরিচালনাতে ভোগান্তি পড়তে হচ্ছে। আমি বিষয়টি অধ্যক্ষকে জানিয়েছি অনেকবার। তিনি নির্দেশ দিয়েছেন যেভাবে আছে তেমনি ক্লাস চালিয়ে নিতে। আমি আমার সবটুকু দিয়ে চেষ্টা করছি শিক্ষার্থীদের ক্লাস নিতে।
এদিকে ঘটনা তদন্ত চট্টগ্রাম মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরিচালকের (মাউসি) নেতৃত্বে ২ সদস্য তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।