প্রকাশঃ ২২ অগাস্ট, ২০২১ ০৫:৫৫:৫৯
| আপডেটঃ ২৩ নভেম্বর, ২০২৪ ০১:০৫:৪১
সিএইচটি টুডে ডট কম, কাপ্তাই (রাঙামাটি)। ধুপপানি শব্দের অর্থ হচ্ছে কুয়াশার পানি। আবার তনচংগ্যা ভাষায় ধুপ শব্দের অর্থ হলো সাদা পানি। পাহাড়ের গা ঘেঁষে কুয়াশার মতো অবিরাম ধারায় সাদা পানি প্রবাহিত হয় বলে স্থানীয়রা এর নাম রাখে ধুপপানি ঝর্ণা। রাঙামাটি জেলার বিলাইছড়ি উপজেলার ৩ নং ফারুয়া ইউনিয়ন এর ৩ নং ওয়ার্ডে ধুপপানি পাড়ায় এই দৃষ্টি নন্দন ঝর্না অবস্থিত। সমতল থেকে এই ঝর্নার উচ্চতা প্রায় ১৫০ ফুট। বিভিন্ন সময় প্রকৃতি ও ভ্রমণ পিয়াসী পর্যটকরা দুর্গম পথ পাড়িয়ে দিয়ে এই ধুমপানি ঝর্ণা দেখতে আসেন। বিলাইছড়িতে ধুমপানি ঝর্ণাসহ রয়েছে কয়েকটি ঝর্ণা। সরকার পর্যটন স্পট স্থাপনের উদ্যোগ নিলে এখানে পর্যটকের আনাগোনা যেমনি বাড়বে তেমনি এখানকার অধিবাসীদের আয়ের পথ সুগম বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
গতকাল শুক্রবার( ২০ আগস্ট) এই প্রতিবেদক বিলাইছড়ি উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ মিজানুর রহমান ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বীরোত্তম তনচংগ্যা সহ একদল পর্যটক সাথে নিয়ে এই ঝর্নার সৌন্দয্য উপভোগ করতে যান।
এইসময় বিলাইছড়ি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বীরোত্তম তনচংগ্যার বলেন, ঝর্ণাটি লোক চক্ষুর অন্তরালে ছিল। ২০০০ সালে এক বৌদ্ধ সন্ন্যাসী গভীর অরন্যে ধুপ পানি ঝর্ণার উপরে পাহাড়ে ধ্যান শুরু করেন, পরে স্থানীয় লোক জন মিলে ঐ বৌদ্ধ ধ্যান রত সন্ন্যাসীকে সেবা করতে গেলে ঐ ঝর্ণাটি জন সম্মুখে পরিচিতি লাভ করে। তিনি এই ঝর্নার অবকাঠামো নির্মাণে সরকারের সহযোগিতা কামনা করেন।
বিলাইছড়ি উপজেলা নির্বাহী অফিসার মিজানুর রহমান বলেন, রাঙামাটি জেলার বিলাইছড়ি উপজেলা বাংলাদেশের সবচেয়ে সুন্দর উপজেলা। এই উপজেলায় যতগুলো ঝর্ণা রয়েছে, বাংলাদেশের অন্য কোন উপজেলায় একগুলো ঝর্ণা নেই। এই উপজেলায় ঝর্না, পাহাড়, লেক ও সবুজের সমন্বয়ে নৈসর্গিক স্বর্গ বহমান আছে। এইখানকার পর্যটন উপযোগী স্পটগুলোর উন্নয়নের মাধ্যমে এইখানকার অধিবাসীদের জীবিকার সু- বন্দোবস্ত করা সম্ভব হবে, একই সাথে এইগুলো প্রচারের মাধ্যমে ভ্রমন পিপাসু মানুষ তাদের স্বর্গরাজ্যের সন্ধান পাবে।
বিলাইছড়ি উপজেলার ৩ নং ফারুয়া ইউনিয়ন এর চেয়ারম্যান বিদ্যালাল তনচংগ্যা, স্থানীয় ৩ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য শান্তি রঞ্জন তনচংগ্যা ও ধুপপানি পাড়ার কার্বারী নতুন কুমার তনচংগ্যা বলেন, সরকার যদি এই এলাকার যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন ঘটায় তাহলে এইখানে আরোও পর্যটকরের আগমন ঘটবে।
এই ঝর্ণা দেখতে আসা ফরিদপুর রাজবাড়ির বিশ্বজিৎ মন্ডল, কাপ্তাই থানার ওসি মোঃ নাসির উদ্দীন, চন্দ্রঘোনা খ্রীস্টিয়ান হাসপাতালের পরিচালক ডাঃ প্রবীর খিয়াং জানান, এই ঝর্ণা দেখতে না আসলে বুঝতে পারতাম না বিলাইছড়ি উপজেলায় এই রকম একটি দৃষ্টিনন্দন ঝর্ণা আছে। প্রকৃতি যেনো তাঁর আপন মহিমায় সাজিয়েছে এই ঝর্ণাকে।
প্রসঙ্গতঃ রাঙামাটি বা কাপ্তাই উপজেলা হতে নৌ পথে বিলাইছড়ি উপজেলা হয়ে ফারুয়া ইউনিয়ন এর উলুছড়ি পাড়ায় গিয়ে ঘন্টা দুয়েক পায়ে হেঁটে ধুপপানি পাড়ার পর এই ঝর্নার দেখা মিলবে।
তবে বিলাইছড়ি উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, বিলাইছড়ি উপজেলা হতে ধুপশিল হয়ে ধুপপানি পাড়া পর্যন্ত একটি সড়ক নির্মাণের চেষ্টা চলছে। এই সড়ক নির্মান হলে বিলাইছড়ি হতে সরাসরি চাঁদের গাড়ী দিয়ে ধুপপানি ঝর্ণার কাছাকাছি যাওয়া সম্ভব হবে।