ক্রীড়াঙ্গনকে বাঁচাতে বান্দরবানে মাঠ সংস্কারে যুব সমাজ

প্রকাশঃ ১৬ জুলাই, ২০২১ ০৭:৩৮:৫০ | আপডেটঃ ২৪ এপ্রিল, ২০২৪ ০৮:৩৪:০৯
সিএইচটি টুডে ডট কম, বান্দরবান। ক্রীড়াই শক্তি ক্রীড়াই বল আর প্রতিপাদ্যকে বুকে ধারণ করে বান্দরবানে খেলার মাঠকে সবুজ ঘাসে আবৃত করা আর খেলা উপযোগী করার উদ্যোগ নিয়েছে স্থানীয় যুব সমাজ। দীর্ঘদিন ধরে মাঠ অকেজো থাকার ফলে বান্দরবানের রাজার মাঠকে নতুন ঘাসে পরিপূর্ণ করার এই প্রয়াসে যুক্ত হয়েছে কিছু উদ্যামী যুবক আর এর ফলে ক্রীড়াঙ্গনে আবার আসবে সুবাতাস এমনটাই মনে করছে সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা।

বান্দরবানের ঐতিহ্যের সাথে জড়িত জেলা সদরের রাজার একটি মাঠ। বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠান,সামাজিক আচার,খেলাধুলা আর বিভিন্ন মেলা নিয়ে প্রায় জমজমাট থাকে ঐতিহ্যবাহী এই রাজার মাঠ। জেলা সদরের ৪নং ওয়ার্ডের বোমাং রাজ পরিবারের এই মাঠে যেকোন আয়োজনকে ঘিরে সবসময় জাঁকজমক থাকে বান্দরবানের পরিবেশ।

তবে মাঠে খেলাধুলার আয়োজনের থেকেও বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠান,যত্রতত্র গাড়ি পাকিং আর বছরের বিভিন্ন সময় বিভিন্ন মেলা বসার কারণে মাঠের অবকাঠামো নষ্ট হয়ে যায় বেশ কয়েক বছর ধরে,আর এতে খেলোয়াড়রা পড়েছে চরম কষ্টে। মাঠ ভালো না থাকায় খেলা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে অনেকেই । তবে এবার বান্দরবানের যুব সমাজের পক্ষ থেকে নিজ উদ্যাগে ব্যক্তিগত অর্থায়নে এই রাজার মাঠকে আবারোও খেলার উপযোগী করার উদ্যোগ নিয়েছে স্থানীয় কয়েকজন উদ্যোমী যুবক।


ক্রীড়াপ্রেমী ও বান্দরবান জেলা দলের ফুটবলার খেলোয়াড় বাবলু বড়–য়া (ভুতু) বলেন,বান্দরবানে খেলার মাঠের বড়ই অভাব। একটি মাত্র মাঠ রয়েছে রাজার মাঠ, আর এই মাঠের ওপর চলে প্রতিনিয়ত অত্যাচার। বাবলু বড়–য়া (ভুতু) আরো বলেন,আমরা বান্দরবানের ফুটবল খেলোয়াড়রা রাজারমাঠে আগে প্রতিনিয়ত ফুটবল অনুশীলন করলেও গেল কয়েকবছর ধরে মাঠে যত্রতত্র পাকিং,ইট-বালি আর কংকরের স্তুপ জমানোসহ বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্টান করে মাঠকে নষ্ট করছিল অনেকেই আর কর্তৃপক্ষ এই মাঠকে রক্ষার জন্য কোন ভূমিকাই রাখছে না তাই আমরা যুব সমাজের পক্ষ থেকে এই মাঠকে রক্ষা করতে কাজে নেমে পড়লাম।

বান্দরবানের সাবেক ফুটবল খেলোয়াড় পুলু মারমা বলেন,আমরা এই রাজার মাঠ রক্ষায় এবং খেলা উপযোগী করার জন্য বিভিন্নস্থান থেকে ঘাস সংগ্রহ করে মাঠে এনে সবাই বিনাশ্রমে কাজ করে যাচ্ছি, এই ঘাসগুলো বড় হলে মাঠের সৌন্দর্য্য বৃদ্ধি পাবে এবং সেই সাথে পরিবেশও অনেক সুন্দর হবে।

ফুটবল খোলোয়াড় হ্লাচিং মারমা বলেন,আমরা চাই বান্দরবানের সকল মাঠগুলো খেলা উপযোগি করা হোক। শুধু রাজারমাঠ নয় জেলার সকল মাঠগুলোতে বিভিন্ন টুর্ণামেন্ট চালু থাকুক আর মাঠগুলো রক্ষায় সরকারি বেসরকারি সহায়তা অব্যাহত থাকুক।



ব্যক্তিগত অর্থায়নে ক্রীড়ার উন্নয়নে উৎসব ঘোষ রাহুল নামে এক যুবক এই মাঠ সংস্কারের কাজে নেমে পড়েছে। প্রথমে ট্রাক্টর দিয়ে মাঠের মাটি নরম করে তারপর সমান করে সার প্রয়োগে পর বিভিন্নস্থান থেকে ঘাস সংগ্রহ করে তা লাগানো হচ্ছে মাঠে। আর এই মাঠে ঘাসগুলো নতুনভাবে গজালে মাঠের সৌন্দর্য্য বৃদ্ধির পাশাপাশি আগামীদিনের ক্রীড়াঙ্গন আবারোও চাঙ্গা হওয়ায় আশাবাদ ব্যক্ত করেছে এই যুবক। উৎসব ঘোষ রাহুল জানান, রাজার মাঠ রক্ষায় ইতিমধ্যে আমার ব্যক্তিগত পক্ষ থেকে কয়েক হাজার টাকা খরচ হয়েছে তবে আমি আরো কিছু টাকা খরচ করে মাঠকে সবুজায়নের পাশাপাশি মাঠের আশেপাশে বিভিন্ন ফুলের চারা লাগাবো যাতে মাঠটি সকলের কাছে আরো জনপ্রিয় হয় এবং এই মাঠে বিকেলে খেলোয়াড়রা সুন্দরভাবে খেলতে পারে এবং ভ্রমনকারীরা আনন্দে ভ্রমন করতে পারে।



এদিকে যুব সমাজের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে আগামীদিনে খেলাধুলার উন্নয়নে বিভিন্ন ধরনের সহায়তার আশ্বাস দিলেন বান্দরবান জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক। বান্দরবান পৌরসভার মেয়র ও জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ইসলাম বেবী বলেন, আমরা চাই বান্দরবানের ক্রীড়াঙ্গন চাঙ্গা থাকুক আর খেলোয়াড়রা ক্রীড়ার সাথে জড়িত থাক আর এতে মাদক থেকে দূরে থাকবে যুব সমাজ। বান্দরবান পৌরসভার মেয়র ও জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ইসলাম বেবী আরো বলেন,যুব সমাজের মাঠ রক্ষার এই উদ্যোগকে আমরা স্বাগত জানাই এবং আগামীদিনে তাদের এই কর্মকান্ড সম্প্রসারণের জন্য আমরা জেলা ক্রীড়া সংস্থার পক্ষ থেকে তাদের সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেব।

ব্যক্তিগত উদ্যোগে বির্বণ এই মাঠকে সবুজায়ন করা আর খেলা উপযোগী করার এই প্রয়াসে সরকারি বেসরকারী সহযোগিতা ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি সুন্দর পৃথিবী নির্মাণে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের আরো দায়িত্বশীল হওয়ায় আহবান জানিয়েছে সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা।