প্রকাশঃ ১০ ফেব্রুয়ারী, ২০২১ ০৯:০৫:১৫
| আপডেটঃ ২১ নভেম্বর, ২০২৪ ০৭:২৬:২৮
কৌশিক দাশ, সিএইচটি টুডে ডট কম, বান্দরবান। দেশে কার্পাস তুলার বাৎসরিক চাহিদা প্রায় ৭০ লক্ষ বেল, প্রতি বছর তা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
বান্দরবান সদরের মংপ্রু ছড়ার চাষি লালন কুমার চাকমা, পিতা: চিত্রমোহন চাকমা, তিনি পূর্বে ধান, সবজি আর তামাক চাষ করতেন। কয়েক বছর তামাক চাষ করার পর তিনি বুঝতে পারেন যে, তামাক চাষে কোন লাভ নেই। কারণ এই ফসল চাষ করতে কোম্পানির কাছ থেকে যে পরিমাণ টাকা ঋণ হিসাবে গ্রহণ করেন ফসল উঠার পরে ঋণের টাকা সমন্বয় করার পর আর অতিরিক্ত টাকা তার হাতে থাকেনা, তাই তিনি চিন্তা করলেন যে এই ফসল চাষে কোন লাভ নেই। তিনি ২০১৭ সালে তুলার চাষ দেখে বান্দরবান তুলা উন্নয়ন বোর্ডের কাছে এসে বিস্তারিত জানার পর তুলাচাষে আগ্রহী হন এবং প্রতি বছরই ১ থেকে ১.৫ বিঘা জমিতে তুলাচাষ করেন, এতে পরিশ্রম কম এবং ফলন বেশী পাওয়ায় তিনি মনে করেন যে তুলাচাষ অত্যন্ত লাভজনক। এই ফসল চাষের জন্য তুলা উন্নয়ন বোর্ড বীজ, সার ও কীটনাশক চাষীদের বিনামূল্যে বিতরণ করে, এতে চাষীরা অত্যন্ত উপকৃত হচ্ছে। তাছাড়াও বিভিন্ন সময়ে প্রশিক্ষণ, মাঠদিবস ও দলীয় আলোচনার মাধ্যমে ফসলের পরিচর্যা সম্পর্কে চাষিদের পরামর্শ প্রদান করা হচ্ছে। তুলা উন্নয়ন বোর্ডের কর্মচারীরা সপ্তাহে ২-৩ দিন মাঠ পরিদর্শন করে ফসলের অবস্থা পোকা-মাকড় সম্পর্কে চাষিদের করণীয় বিষয় যেভাবে হাতে কলমে শিখিয়ে দেন তাতে আমরা উপকৃত হই বলে জানান চাষি লালন কুমার চাকমা।
চাষি লালন কুমার চাকমা আরো জানান,তুলা উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা বস্তা দিয়ে যায়,আর আমরা বীজতুলা শুকিয়ে চাষিরা বস্তা ভর্ত্তি করে রাখি। তিনি আরো বলেন,বোর্ডের কর্মকর্তারা তাদের নিজস্ব পরিবহনের মাধ্যমে সরকারের নির্ধারিত নগদ মূল্যে বীজতুলা নিয়ে যায়। তুলা উন্নয়ন বোর্ড ছাড়া অন্য কোন অফিস চাষিদের এমন সুবিধা দেন কিনা আমার জানা নেই, তাই অনেক চাষি তুলাচাষে আগ্রহী হচ্ছে।
হেডম্যান পাড়ার থুইচাসিং মার্মা, বাদুসে মার্মা, উজিপাড়ার সুইওচিং মার্মা, মংপুসু মার্মা এবং অংচিং মার্মা তুলাচাষে উদ্যোগী হয়েছেন, তাদের তুলা ও খুব ভাল হয়েছে।
তুলা চাষী সুইচিং মার্মা জানান, জমিতে বিঘা প্রতি ১২মণ থেকে ১৫মণ পর্যন্ত পর্যন্ত তুলা হতে পারে। তুলার ফুটন্ত বল দেখে খুবই আনন্দ লাগে। তুলাচাষে তামাক চাষের মত কষ্ট নেই, তুলা উন্নয়ন বোর্ড যেভাবে ফসলের দেখাশুনা করে থাকেন অন্য কোন অফিসের লোকজন তা করে থাকে না, সেজন্য তুলাচাষ করতে আগ্রহ জাগছে আমার ও অন্যান্য চাষিদের।
বান্দরবান তুলা উন্নয়ন বোর্ডের প্রধান তুলা উন্নয়ন কর্মকর্তা আলমগীর হোসেন মৃধা জানান,নদী বা ঝিড়ির পাশে যে সমস্ত জমিতে তামাক চাষ হতো ঐ সমস্ত জায়গায় তুলাচাষ করা যাবে, ফলে তুলাচাষের জমি বৃদ্ধি পাবে। যেখানে নতুন ফলজ বাগান সৃষ্টি হচ্ছে সেখানে প্রথম ২-৩ বছর তুলাচাষ করা সম্ভব। পাহাড়ের ঢালে যেখানে জুমিয়ারা জুম চাষ করে সেখানেও লাইন পদ্ধতিতে তুলাচাষ করতে পারা যায়। পাহাড়ে এককভাবে অথবা ধান-তুলা আলাদা সারি করে তুলার চাষ করা যায়।
প্রধান তুলা উন্নয়ন কর্মকর্তা আলমগীর হোসেন মৃধা আরো জানান,বান্দরবান এলাকায় অনেক পরিত্যক্ত জমি আছে যেখানে বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টির পানি জমে থাকেনা বা বর্ষা মৌসুমে পানিতে ডুবে যায়না কিংবা পাহাড়ের ঢাল যেখানে একবার জুম চাষ করার পর ৩-৪ বছর খালি থাকে ঐ সমস্ত জায়গাতেও প্রয়োজনীয় সার প্রয়োগ করে তুলাচাষ করা সম্ভব।
তুলা উন্নয়ন বোর্ড,বান্দরবান জোন এর তথ্যমতে ,২০১৯-২০ অর্থবছরে বান্দরবানে ৬১৭৫ হেক্টর জমিতে তুলার আবাদ হয় আর এর প্রেক্ষিতে উৎপাদন হয় ২০৮৮টন । এদিকে ২০২০-২১ অর্থ বছরে ৬২০০ হেক্টর জমিতে তুলার আবাদ হয়েছে যার প্রেক্ষিতে ২১৫০টন তুলার উৎপাদন আশা করছে কর্তৃপক্ষ।