সরিয়ে ফেলা হলো সেই ‘সেলাই সেতু’ দুই কোটি ৩৭ লাখ টাকার গচ্চা !

প্রকাশঃ ২৬ জানুয়ারী, ২০২১ ০৮:০৩:৫১ | আপডেটঃ ২৬ এপ্রিল, ২০২৪ ০২:২৫:১৪
সিএইচটি টুডে ডট কম, রাঙামাটি। সরিয়ে ফেলা হলো রাঙামাটি সাপছড়ি শালাবাগানের সেই ‘সেলাই সেতু’। ভেঙে ফেলা হচ্ছে সেতুটির দুই প্রান্তের পাকা ফাউন্ডেশন(ভিত্তি)। এটি তুলে নিয়ে স্থাপন করা হয়েছে রাঙামাটি-খাগড়াছড়ি সড়কের কুতুকছড়িতে ভেঙে পড়া বেইলি ব্রিজের বিকল্প সড়কের অস্থায়ী সেতু হিসেবে। সড়ক বিভাগ জানিয়েছে, সেতুটি আর আগের স্থানে ফিরছে না। সেখানে মাটি ভরাট করে স্থায়ী সড়ক তৈরি করা হবে। ফলে মাত্র তিন বছরের ব্যবধানে সরকারের দুই কোটি ৩৭ লাখ টাকা গচ্চা গেল।

৪০ মাস আগে ‘পুরণো ভঙ্গুর’ সেতুটি স্থাপন করেছে রাঙামাটি সড়ক ও জনপথ বিভাগ। আর নির্মাণের মাত্র তিন বছরের মাথায় এসে গত তিনমাস ধরে এখন সেটি হয়েছে ‘পরিত্যক্ত’। ৫৬টি পাটাতন দিয়ে তৈরি বেইলি ব্রিজটিতে ১৬৮টি ইস্পাতের বিশেষ রড দিয়ে পরস্পরের সাথে বেঁধে রাখা হয়েছে। আবার লোহার পাত দিয়েও একইভাবে ঝালাই দেয়া হয়েছে। সেলাইয়ের সংখ্যাধিক্যের কারণে স্থানীয়রা ব্যঙ্গ করে এর নাম দিয়েছেন ‘সেলাই সেতু’।

২০১৭ সালের ১৩ জুন ভারি বর্ষণে পার্বত্য চট্টগ্রামের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় পাহাড়ধসের ঘটনায় ৫ সেনাসদস্যসহ ১২০ জনের প্রাণহানী ঘটে। রাঙামাটি-চট্টগ্রাম সড়কে সাপছড়ি শালবাগান সড়কে পাহাড়ের একাংশ ধসে পড়ে সড়ক ধসে যায়। কিন্তু ধসের পাশে বিকল্প সড়ক নির্মাণের পরও এ বেইলি সেতুটি স্থাপন করা হয়। ‘ধসে পড়া পাহাড়ে হাত পড়লে ফের ধসে পড়বে’ এমন ‘শংকা’ দেখিয়ে ধসে যাওয়া সড়কের ওপর সেতু স্থাপন করেন সড়ক বিভাগের তখনকার নির্বাহী প্রকৌশলী এমদাদ হোসেন। অথচ ওই পাহাড়ধসে ১২৩টি স্থানে সড়কধস হলেও অন্য কোথাও এমন সেতু স্থাপন করেনি সড়ক বিভাগ।

স্থানীয়দের মতে, যথাযথ পরিকল্পনা আর সমন্বয়হীনতার ‘দায়’ বহন করছে সেতুটি। সেতুর প্রয়োজনীয়তা নিয়ে প্রশ্ন তুলে ক্ষোভ জানিয়েছেন অনেকেই। তারা বলছেন, ‘শতাধিক ধসে বিকল্প ব্যবস্থায় সড়ক সচল করা গেলে এখানেও সম্ভব ছিল। এতে সরকারি অর্থের অপচয় রোধ করা যেতো। কার স্বার্থে প্রকল্পটি নেয়া হয়েছে তাও খুঁজে বের করা দরকার’।

রাঙামাটি বাস মালিক সমিতির সভাপতি মঈন উদ্দিন সেলিম বলেন, ‘সেতু সরিয়ে ফেলার মধ্য দিয়ে এটা স্পষ্ট হলো যে, সেতুটির প্রয়োজনীয়তাই ছিল না। সরকারি অর্থ গচ্চা গেল’।

রাঙামাটি দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির(দুপ্রক) সভাপতি ওমর ফারুক বলেন, ‘যথাযথ পরিকল্পনা আর সমন্বয়হীনতার ‘দায়’ বহন করছে সেতুটি। জনগণের টাকা এভাবে তছরুপ করা এটা একটা ক্রাইম; একধরণের দুর্ণীতি। বিষয়টি খতিয়ে দেখা প্রয়োজন’।

রাঙামাটি সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী শাহে আরেফীন বলেন,‘শালবাগান বেইলি সেতুটি আর আগের স্থানে ফিরছে না। সেখানে মাটি ভরাট করে স্থায়ী সড়ক তৈরি করা হবে। এটি এখন রাঙামাটি-খাগড়াছড়ি সড়কের কুতুকছড়িতে ভেঙে পড়া বেইলি ব্রিজের বিকল্প সড়কের অস্থায়ী সেতু হিসেবে ব্যবহারের জন্য সেতুটি তুলে নেয়া হয়েছে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৩৪ ইঞ্জিনিয়ার কন্সট্রাকশন বিগ্রেড পরিচালিত ২০ ইসিবি সেতুটি স্থাপন করেছে’।