প্রকাশঃ ১০ অক্টোবর, ২০২০ ০৯:২৯:৩০
| আপডেটঃ ২৩ নভেম্বর, ২০২৪ ০৬:৪২:৪২
কৌশিক দাশ, সিএইচটি টুডে ডট কম, বান্দরবান। পার্বত্য অঞ্চলে বসবাসকারী পাহাড়ীদের আদিপেশা জুম চাষ। বান্দরবানের রোয়াংছড়ি, রুমা, থানচি, লামা ও আলীকদম উপজেলায় বসবাসকারী পাহাড়ী পরিবারগুলো প্রায় সকলেই জুম চাষ করে থাকে।
প্রতিবছর এপ্রিল মাসের শেষের দিকে শুরু হয় জুমে ধান লাগানোর প্রক্রিয়া। প্রায় ৩-৪ মাস পরির্চযার পর সেপ্টেম্বর মাসের শেষদিক থেকে পাহাড়ে জুমের ধান কাটা শুরু করে জুমিয়ারা আর শেষ হয় অক্টোবর মাসে। তাই জুমের ফসল ঘরে তুলতে এখন ব্যস্ত সময় পার করছে জুমিয়া পরিবারগুলো। শিশু কিশোরসহ পরিবারের কেউই বসে নেই ঘরে, পরিবারের সবাই জুমের ধান কাটতে নেমেছে পাহাড়ে।
তবে এবছর আবাহাওয়া অনুকুল থাকার কারণে ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সহায়তায় জুম চাষে বেশি ফলন পেতে শুরু করেছেন বান্দরবানের চাষীরা। জুমের ধানের সাথে মারফা,ভূট্টা, তিল, তুলা, মরিচ কাকনচাল, বিনি চালসহ বিভিন্ন ধরনের স্বল্পমেয়াদী ফসলের চাষ করে জুমিয়ারা। জুম চাষীরা জানায়, পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত ক্ষুদ্র নৃগোষ্টি পরিবারগুলো প্রতিবছর জেলার বিভিন্ন স্থানে শত শত একর পাহাড়ে জুম চাষ করে।
জুমিয়ারা পাহাড়ে ধানের পাশাপাশি ভুট্টা,মরিচ,যব,সরিষা,মিষ্টি কুমড়াসহ বিভিন্নরকমের সবজির চাষ করে থাকে। তবে একই পাহাড়ে একাধিকবার জুম চাষ করা যায় না বলে জুমিয়ারা প্রতি বছর ভিন্ন ভিন্ন পাহাড়ে এ জুম চাষ করা হয়ে থাকে। জেলায় বসবাসরত মার্মা, চাকমা, তঞ্চঙ্গ্যা, ম্রো খুমী, লুসাই, পাংখো, বম, চাকসহ ১১টি জনগোষ্টীর অধিকাংশই জুম চাষের উপর নির্ভরশীল।
বান্দরবানের সদরের বাঘমারা এলাকার জুম চাষী মং মারমা জানান, এবছর আবহাওয়া ভালো থাকায় জুমের ফসল ভাল হয়েছে, নিজেদের জন্য রেখে বাকীটা বিক্রি করে ভাল টাকাও আয় করতে পারবো।
চিম্বুক এলাকার জুম চাষী মেনপো ম্রো বলেন, জুমের ফলন ভাল হওয়ায় খুব খুশি লাগছে, পরিশ্রমও সার্থক হয়েছে সারা বছর শান্তিতে খেতে পারবো।
পার্বত্য এলাকায় বসবাসরত ১১টি ক্ষুদ্রনৃগোষ্টির জনগোষ্টীর মধ্যে একমাত্র ম্রো সম্প্রদায় আদিকাল থেকে এখনো পর্যন্ত জুম চাষের মাধ্যমেই সারা বছরের জীবিকা সংগ্রহ করে। ফসল ঘরে তোলার আনন্দে পাহাড়ী পল্লীগুলোতে চলছে এখন নবান্ন উৎসবও। গোত্র ভেদে পাহাড়ীরা উৎপাদিত ফসল দেবতাকে উৎসর্গের মাধ্যমে এই নবান্ন উৎসব উদযাপন করে থাকে।
বান্দরবান কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, গতবছর জেলায় ৮ হাজার ৮শত ৯৫ হেক্টর জমিতে জুম চাষের বিপরীতে উৎপাদন হয় ১৪ হাজার ৩মেট্রিক টন চাল,আর এবার ৯ হাজার ২০ হেক্টর জমিতে চাষের বিপরীতে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ হয়েছে ২৩ হাজার ২শত ৯২ মেট্রিক টন চাল।
বান্দরবান কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর এর উপ-পরিচালক ড. একে এম নাজমুল হক বলেন,বান্দরবান জেলায় প্রতি বছর জুম চায় হয়। জুমে আধুনিক প্রযুক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে বিভিন্ন জাতের ধানের ফলন বাড়ানোর লক্ষ্যে কৃষি অধিদপ্তর কাজ করছে। তিনি আরো বলেন ,আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে প্রতিবছর জুম চাষ করা হলে তাদের আর্থ সামজিক উন্নয়নসহ আর্থিক স্বচ্ছলতা আসবে এবং সারা বছরের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে।
.