খাগড়াছড়ির নতুন ঝর্না‘তুয়ারি মাইরাং’

প্রকাশঃ ২৬ অগাস্ট, ২০২০ ১১:২২:৩৩ | আপডেটঃ ২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১০:১৪:৪৩
সিএইচটি টুডে ডট কম, খাগড়াছড়ি। পাহাড়,নদী,উপত্যকা,ঝরনা আর ঝিরি নিয়ে পাহাড়ি জনপদ খাগড়াছড়ি। দেশের এই পাহাড়ি অঞ্চল পর্যটকদের কাছে বরাবরই দারুণ আর্কষনীয়। পাহাড়ের পর পাহাড়ে সাজানো এই চিরসবুজ অরণ্য দেশের যেকোন অঞ্চল  থেকে এই জনপথকে আলাদা করেছে। এর ভূপ্রাকৃতিক গঠন  স্বাতন্ত্র্য এলাকা হিসেবে মর্যদা দিয়েছে। চির রহস্যভূমির এই জনপদ যেমন পর্যটকদের কাছে আর্কষণী তেমনি এটি স্থানীয়দের কাছে‘ ভূস্বর্গ’।

খাগড়াছড়িতে দিন দিন বাড়ছে পর্যটকদের আগমন। এরই মধ্যে জেলার দীঘিনালাা সীমানা পাড়ায় সন্ধান মিলেছে প্রায় শত ফুট উঁচু ‘তুয়ারি মাইরাং ’ ঝরনা। এডভেঞ্চারের স্বাদ নিতে  নিতে নতুন সন্ধান পাওয়া ঝরনা দেখতে স্থানীয় পর্যটক ছাড়াও বাইরে থেকে আসছে অনেকে। পর্যটকদের নিরাপত্তা ও গাইড সুবিধা দিচ্ছে স্থানীয়রা।

খাগড়াছড়ি দীঘিনালার সীমানা পাড়ায় সন্ধান মিলেছে নতুন ঝরনা ‘তুয়ারি মাইরাং’ । লোকালয় থেকে হেঁটে ঝরনায় পৌছাতে সময় লাগে মাত্র ১ ঘন্টা। উঁচু নিচু পাহাড়ে  এখন চোখ ধাঁধানো  সবুজ জুম। জুমের ল্যান্ডস্কেপজুড়ের সবুজ মখমল। কাছে দূরে ছোট ছোট জুমঘর। বন্যপ্রানী থেকে জুমের ফসল বাঁচাতে জুমিয়া জুমঘর বানায়। আগে জুমিয়ারা ফলনের মৌসুমে জুমের ফসল পাহারায় জুমঘরে রাতযাপন করত। বর্তমানে বন্যপ্রানীর উৎপাত কম হওয়ায় অনেক জুমিয়া রাতে থাকে না। জুমের পাহাড়জুড়ে এখন সবুজ ধান,ভুট্টা,মারফা,হলুদসহ বিবিধ ফসলের বাহার। ঝরনায় যেতে জুমের দৃশ্য দেখে মুগ্ধ হবে যে কেউ। পাহাড় থেকে নামতে হয় প্রাকৃতিক লতা বেয়ে । কয়েকটি পাথুরে জায়গা পারাপারে একমাত্র ভরসা সেই লতা। তবে এসব জায়গা মোটা দড়ি ব্যবহার করা ঝুঁকিমুক্ত।   পাহাড় থেকে লতা বেয়ে নেমে হাঁটত হয় পাহাড়ি ঝিরিতে। ঝিরির দুই পাশে উঁচু উঁচু টারশিয়ান যুগের পাহাড়। পাহাড়ি  ঝিরিতে গা ছম ছম অনুভূতি। ঝিরিতে শত বছর ধরে আটকে আছে বড় বড় পাথর খন্ড। পাথর ও ক্যাসকেড বেয়ে নামছে পানির ¯্রােত। উঁচু পাহাড় আর গভীর অরণ্যের কারণে ঝিরি পর্যন্ত পৌছে না সূর্যের আলো।পথে পথে আরো কয়েকটি ঝরনা দেখা যায়। তবে বৃষ্টিকম হওয়ায় সেসব ঝরনায় তেমন পানি নেই।  ঝিরি পথে হাঁটার পর দেখা মিলে  সুবিশাল তুয়ারি মাইরাং ঝরনা। শীতল ঝিরি পথের শেষে পাথরের পাহাড় বেয়ে নামছে ‘তুয়ারি মাইরাং’।  এত উঁচু ঝরনা দেখে চোখ আটকে যাবে যেকারো। ঝরনার উল্টো দিকে পাথুরের পাহাড়। এমন ঝরনা দেখে মুগ্ধ পর্যটকরা।

ঢাকা থেকে তুয়ারি মাইরাং দেখতে বেড়াতে এসেছে নেচার ট্র্যাভেলস বাংলাদেশ । বেড়াতে আসা পর্যটক মারিয়া ,মুশফিকা ,শান্তু জানান,‘  করোনার মধ্যে দীর্ঘদিন যান্ত্রিক জীবনে আটকে ছিলাম। তুয়ারি মাইরাং ঝরনা দেখতে আসলাম। যারা এডভেঞ্চার পছন্দ করে তারা আসতে পারবে। ঝরনার আসা পথ অত্যন্ত রোমাঞ্চকর। যারা পাহাড়ে আসতে পছন্দ করে,ঝরনা পছন্দ এটি তাদের বেশ ভালো একটি জায়গা। নাগরিক জীবনের কøান্তি কাটাতেই খাগড়াছড়ি এসেছি। নতুন একটা ঝরনা তুয়ারি মাইরাং ঝরনা। এখানে প্রাকৃতিক অনুভূতি আছে। তবে প্রকৃতিকে প্রকৃতির মতো করে উপভোগ করতে হবে।  তুয়ারিং মাইরাং প্রায় শতফুট উঁচু। অল্প কষ্টে অল্প হাঁটায় এখানে আসা যায়।দুই পাশে পাহাড়।’

নেচার ট্র্যাভেলস বাংলাদেশ এর টিম লিডার ডা.মইনুল হাসান জানান ,‘ তুয়ারি মাইরাং বেশ অত্যন্ত সুন্দর ঝরনা। ঝরনার চারপাশটা বেশ রোমাঞ্চকর। পুরো পথজুড়ে এডভেঞ্চার এর স্বাদ পাওয়া যায়। কোথাও কোথাও ঝিরি এবং ক্যাসকেড বেয়ে নামতে হয়। এসময় সাবধানতা অবলম্বন করতে হয়। বন্ধুর পথ পেরিয়ে ঝরনা দেখে মুগ্ধ হবে যে কেউ। ’


পর্যটকদের যাতায়াতে অবকাঠামো উন্নয়নের দাবি জানিয়েছে স্থানীয়রা। আগত পর্যটকদের গাইড সুবিধাও দিবে তারা।স্থানীয় সাবেক ইউপি সদস্য হতেন ত্রিপুরা জানান,‘তুয়ারি মাইরাং নতুন ঝরনা। স্থানীয়রা বেড়াতে আসলেও বাইরে পর্যটকরা খুব একটা আসেনি। যাতায়াতের পথ কিছুটা ঝুঁকিপুর্ণ।  সরকারের পক্ষ থেকে রাস্তাসহ অবকাঠামো নির্মাণ করে দিলে সুবিধা হবে। পর্যটক বেড়াতে আসলে গাইড সুবিধা দেয়া যাবে।

ঝরনায় যাতায়াতে অবকাঠামো উন্নয়নে কথা জানিয়েছে দীঘিনালা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ( ইউএনও)  মোহাম্মদ উল্ল্যাহ । তিনি জানান,‘দীঘিনালায় তৈদুছড়া ঝরনা,বাদুড় গুহাসহ বেশ কিছু পর্যটন কেন্দ্র রয়েছে। তবে দুর্গম যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে পর্যটকদের যাতায়াতে অসুবিধা হয়। তুরায়ি মাইরাং  পর্যটকদের কাছে এটি নতুন আর্কষ হতে পারে। ট্রেকিং প্রিয় পর্যটকরা এটি ঘুরে আসতে পারে। ’