লকডাউনে ভ্যান আর ফেরিতে সবজি বিক্রি করে ওরা জীবন জীবিকা নির্বাহ করছে

প্রকাশঃ ১৫ জুলাই, ২০২০ ০১:৫৫:২৯ | আপডেটঃ ২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১১:১৫:১১
কৌশিক দাশ, সিএইচটি টুডে ডট কম, বান্দরবান। বান্দরবানে গত ২৫জুন থেকে করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে  জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে চলছে লকডাউন । লকডাউনের কারণে পৌরসভা এলাকায় যে কোন ধরণের হাটবাজার বসতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিষেধাজ্ঞা থাকায় অন্যান্য জনসাধারণের মত বসে নেই ক্ষুদ্র নৃগোষ্টি সম্প্রদায়ের নারী ও পুরুষ সবজি ও ফলমুল বিক্রেতারা।

বান্দরবানের পৌরসভার ৩নং ওয়ার্ডের কালাঘাটা বাজারের বাসিন্দা রবীন চাক। দেশে করোনা ভাইরাস শুরুর আগে কক্সবাজারে একটি কসমেটিক দোকান পরিচালনা করে ভালোই জীবন যাপন করতো,দৈনিক দোকানে প্রায় বিক্রি করতো ৮-১০হাজার টাকা। কিন্তু করোনা ভাইরাস শুরুর পর লকডাউন হয়ে যাওয়ায় কক্সবাজার থেকে আবার বান্দরবান এসে উপায় না দেখে নেমে পড়েছে ভ্যানে করে সবজি বিক্রয় করতে।
রবীন চাক আরো জানান,আগে ব্যবসা করতাম কক্সবাজারে। পরিবারে ২ মেয়ে ও এক ছেলে নিয়ে ভালোই ছিলাম ,কিন্তু করোনায় সব শেষ ,বাধ্য হয়ে সবজি বিক্রি করছে ভ্যানে করে এক এলাকা থেকে আরেক এলাকায় ঘুরে ফিরছি। রবীন চাক  জানান,দৈনিক ১০০ টাকা দিয়ে একটি ভ্যান ভাড়া নিয়ে বান্দরবানের বিভিন্ন ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে ঘুরে ঘুরে সবজি ফেরি করে সংসার চালাচ্ছি,প্রতিদিন ৩ থেকে ৫শত টাকা বিক্রি করছি তবে বেশিরভাগ সময়ই সবজি নষ্ট হচ্ছে আর আমার ক্ষতি হচ্ছে।

বান্দরবানের পৌরসভার উজানী পাড়ার বাসিন্দা সবজি বিক্রেতা সুমন মারমা জানান, একসময় বাজারে বসে সবজি বিক্রি করতাম আর এখন লকডাউনের কারণে খানিকটা কাজের পরিবর্তন করে ভ্রাম্যমান ভ্যানে করে সামাজিক দূরত্ব রক্ষা করে ঘরে থাকা লোকজনকে সবজি পৌঁছে দিচ্ছি। অনেক কষ্ট হচ্ছে লাভ হচ্ছে কম। সুমন মারমা আরো জানান, ঝড়-বৃষ্টি আর রোদ মাথায় নিয়ে প্রতিদিন সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত সবজি বিক্রির চেষ্টা অব্যাহত রেখেছি।

এদিকে পুরুষের পাশাপাশি বসে নেই ক্ষুদ্র নৃগোষ্টি সম্প্রদায়ের নারীরা, সবজি বিক্রিসহ নানা ধরণের ফলমুল নিয়ে সড়কে নেমেছে তারা।
সবজি বিক্রেতা নুমেচিং মারমা জানান, প্রতিদিন তরতাজা সবজি নিয়ে সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত সবজি বিক্রি করি বিভিন্ন অলি গলি ঘুরে। ঘরে বসে থাকলে কোন আয় থাকে না তাই বাধ্য হয়ে রাস্তায় নেমেছি সবজি বিক্রি করে আয় উপার্জন করতে।

বান্দরবান জেলা শহরের মধ্যমপাড়ায় মারমা বাজারে আরও ১০থেকে ১২জন মারমা, চাকমা ও বাঙালি নারী সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত সড়কের ধারে বসে কাঁচা তরিতরকারি বিক্রি করে , আর রবি ও বুধবার হাটের দিন পুরুষের পাশাপাশি ক্ষুদ্র নৃগোষ্টি সম্প্রদায়ের অনেক নারী দুর্গম পথ পাড়ি দিয়ে বান্দরবান জেলা শহরে ছুটে আসে  তাদের জুমে উৎপাদিত বাঁশকেঁড়ল, আলু, বেগুন,ঢ্যাঁড়স, বরবটি, করলা, কাঁচা মরিচ, কলার মোচাসহ বিভিন্ন পণ্য বিক্রির উদ্যেশে।



বান্দরবান পৌরসভার মেয়র মোহাম্মদ ইসলাম বেবী জানান,বান্দরবান সদরে করোনা আক্রান্ত রোগী বেড়ে যাওয়ায় গত ২৩ জুন থেকে পৌরসভা এলাকাকে ২১দিনের জন্য লকডাউন ঘোষনা করে প্রশাসন, আর এই লকডাউন চলাকালীন সময়ে সকল ধরণের হাটবাজার বন্ধ রাখার পাশাপশি সামাজিক দুরত্ব নিশ্চিত করে ভ্যানে করে সবজি বিক্রি করার জন্য নির্র্দেশনা প্রদান করা হয়।

মেয়র মোহাম্মদ ইসলাম বেবী আরো জানান, করোনায় বান্দরবানে বসে নেই ক্ষুদ্র নৃগোষ্টি সম্প্রদায়ের নারী ও পুরুষরা, প্রতিদিন নানান তরতাজা সবজি বিক্রি করে তারা জীবন জীবিকা নির্র্বাহ করছে এতে তাদের আর্থিক অবস্থা ভালো থাকছে পাশাপাশি আমরা সবাই ফরমালিনমুক্ত ও তরতাজা শাকসবজি খেতে পারছি তাদের আন্তরিকতায়।