বাস টার্মিনাল না থাকায় রাঙামাটি-চট্টগ্রাম সড়কে যাত্রীদের প্রতিনিয়ত দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে

প্রকাশঃ ০১ এপ্রিল, ২০১৮ ০৩:০৩:৩৮ | আপডেটঃ ২৩ নভেম্বর, ২০২৪ ০৭:১৩:৫৬

সিএইচটি টুডে ডট কম, রাঙামাটি। বাস টার্মিনাল না থাকায় চট্রগ্রাম রাঙামাটি সড়কের যাত্রীদের সীমাহীন কষ্ট আর দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। নানা প্রতিকুল পরিবেশের মধ্যে প্রতিদিন হাজার হাজার যাত্রী বাধ্য হয়ে এই সড়কে চলাচল করছে। ইতিপুর্বে  চট্রগ্রামের মুরাদপুরে সিটি কর্পোরেশন থেকে ভাড়া নিয়ে চট্রগ্রাম রাঙামাটি বাস মালিক সমিতি অস্থায়ী একটি বাস টার্মিনাল চালালেও বিগত তত্বাবধায়ক সরকারের সেটি উচ্ছেদ করে দেয়।
স্থানীয় যাত্রী জনসাধারনের সাথে আলাপ করে জানা গেছে, রাঙামাটি- চট্রগ্রাম, খাগড়াছড়ি রাউজান, রাঙ্গুনিয়াসহ উত্তর চট্রগ্রাম ও পার্বত্য চট্রগ্রামের যাত্রীদের জন্য বাসে উঠা নামার জন্য স্থায়ী কোন টার্মিনাল করা হয়নি। চট্রগ্রাম রাঙামাটি বাস মালিক সমিতি সিটি কর্পোরেশন থেকে জায়গা নিয়ে মুরাদপুরে যাত্রী ছাউনি স্থাপনসহ অস্থায়ীভাবে বাস টার্মিনালের কাজ পরিচালনা করে আসছিল। বিগত তত্বাবধায়ক সরকার  বিকল্প বাস টার্মিনাল না করেই অক্সিজেন মোড়ে এই সড়কে হাজার হাজার যাত্রী উঠানামার জন্য জায়গা করে দেয়। পরবর্তী সময়ে একটি বাস টার্মিনাল স্থাপন করার কথা থাকলেও সেটি মুখ থুবরে পড়ে আছে। আর বাস টার্মিনাল না থাকায় দুর দুরান্ত থেকে আসা যাত্রীদের পড়তে হচ্ছে বিপাকে। অক্সিজেন মোড়ে বাস টিকেট কাউন্টারগুলো কোন রকম ঝুপড়ি স্থাপন করে টিকেট বিক্রি করলেও যাত্রীদের বসার জায়গা রাখেনি।
যাত্রীদের জন্য সবচেয়ে জরুরী প্রয়োজন শৌচানাগার নেই তাই সেখানে টিকেট কেটে ঘন্টার পর ঘন্টা দাড়িয়ে থেকে মহিলা ও শিশুদের বিপাকে পড়তে হয়। যাত্রীরা অভিযোগ করেছেন এমনি লক্কর ঝক্কর মার্কা গাড়ী চলাচল করছে তার উপর টার্মিনাল না থাকায় কষ্টের শেষ নেই। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের যেন যাত্রীদের প্রতি কোন দায়বদ্ধতা নেই।
টার্মিনালের বিষয় জানতে চাইলে রাঙামাটি চট্রগ্রাম বাস মালিক সমিতির নেতা  মঈন উদ্দিন সেলিম জানান, প্রশাসনিক সমন্বয়হীনতার কারনে বাস টার্মিনাল নির্মান করতে দেরী হচ্ছে। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী রাঙামাটি চট্রগ্রাম সড়কে চলাচলকারী হাজার হাজার যাত্রীর সুবিধা নিশ্চিত করতে বাস টার্মিনাল স্থাপনের বিষয়ে চট্রগ্রাম সিটি কর্পোরেশন, বিআরটিসি এবং বিভাগীয় কমিশনারকে নির্দেশ দিলেও সেটি কার্যকর করা হয়নি। এই সড়কে চলাচলকারী যাত্রীরা প্রয়োজনের তাগিদে চট্রগ্রাম শহরে যাতায়াত করলেও একটি পক্ষ চাচ্ছে হাটহাজারী বাস টার্মিনাল স্থাপন করতে কিন্তু এতে করে যাত্রীদের দুর্ভোগ বাড়বে। হাটাহাজারীতে বাস টার্মিনাল হলে সেখান থেকে আবার সিএনজি ভাড়া করে গন্তব্যস্থলে যেতে হবে আবার সিএনজি বা বিকল্প যানবাহনে করে  বাস টার্মিনালে আসতে হবে এতে করে একজন যাত্রীকে দ্বিগুন ভাড়া দিতে হবে।
রাঙামাটি-চট্টগ্রাম সড়কে চলাচলরত বিরতিহীন বাস সার্ভিস নামের যানবাহনগুলোয় ব্যাপক যাত্রী হয়রানির অভিযোগ উঠেছে। রাঙামাটিবাসীর আন্দোলনের মুখে কয়েক বছর আগে পার্বত্য শহর রাঙামাটি এবং বন্দরনগরী চট্টগ্রামের মধ্যে যোগাযোগকারী একমাত্র সড়কে চালু হয়েছিল এস আলম, সৌদিয়া, চ্যালেঞ্জারসহ অভিজাত বাস পরিবহন সার্ভিস। এসব পরিবহন চালু হওয়ার আগে এ সড়কে দীর্ঘ ৩৬ বছর ধরে একক কর্তৃত্ব বজায় রেখে যাত্রী হয়রানি  করেছিল রাঙামাটি-চট্টগ্রাম বাস মালিক সমিতি। লক্কর-ঝক্কর মার্কা গাড়ি, ছোট ছোট সিট, যাত্রী তোলা এবং যাত্রীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহারের অভিযোগ ছিল এদের বিরুদ্ধে। সীমিত আকারে অভিজাত বাস সার্ভিস চালু হলে স্থানীয় ব্যবসায়ী, সামাজিক নেতৃবৃন্দ, আন্দোলনকারী নেতারা একতাবদ্ধ হয়ে রাঙামাটির যাত্রীসেবাকে উন্নক করতে চালু করে নতুন স্থানীয় বাস সার্ভিস কর্ণফুলী। প্রবল প্রতিদ্বন্ধিতায় পড়ে নিজেদের সেবাও উন্নত করে রাঙামাটি-চট্টগ্রাম বাস মালিক সমিতি। চালু করে পাহাড়ীকা স্পেশাল সার্ভিস। একটু হলেও স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়ে রাঙামাটির মানুষ।
কিন্তু কিছুদিন যেতে না যেতেই আবার পুরনো চরিত্রে ফিরে এসেছে মালিক সমিতির বিরতিহীন ও লোকাল বাসগুলো। প্রাপ্ত অভিযোগে বলা হয়েছে, লোকাল বাসগুলোতে ছাগল-মুরগিসহ সব মালামাল পরিবহন করা হয়। বিরতিহীন বাসগুলো নামে বিরতিহীন। পথে পথে লোকাল বাসের মতো যাত্রী উঠানামা করা হয়। পরিবহন করা হয় অতিরিক্ত মালামাল। অন্যদিকে অভিজাত সার্ভিস এস, আলম, সৌদিয়া সার্ভিস নিয়েও রয়েছে প্রচুর অভিযোগ শহরে অনেক কাউন্টারের সামনে বাস  দাঁড় করিয়ে ৫-৭ মিনিট ধরে নিজস্ব হিসাব-নিকাশ করতে করতে এসব অভিজাত সার্ভিসের বাসগুলোর শহর ছাড়তে ৫ মিনিটের জায়গায় লাগে ৩০ মিনিট। আবার মালামাল পরিবহনের কারণে আনলোডিংয়ে অনেক সময় ব্যয় হয়। ফলে বিরতিহীন বাস পথে পথে যাত্রী ওঠানামার কারণে গন্তব্য স্থলে পৌঁছাতে ২ ঘন্টার সময়ে লাগে ৩ ঘন্টা।
এদিকে সম্প্রতি রাঙামাটিতে চালু হয়েছে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত বিআরটিসি ও শ্যামলী পরিবহন। উন্নত যাত্রীসেবার লক্ষ্যে শ্যামলী পরিবহন কর্তৃপক্ষ চাচ্ছে নন-এসি বাসও রাঙামাটি-চট্টগ্রাম সড়কে চালু করতে। কিন্তু বাস মালিক সমিতির দাপটে প্রভাবশালী এসব অভিজাত কোম্পানি চাহিদা থাকা সত্ত্বেও নতুন বাস নামাতে পারছে না।
সাধারণ বাসযাত্রীরা জানান, রাঙামাটির বাসগুলো মুড়িরটিনের মতো অবস্থা। তারা বিরতিহীন বাসগুলোতে জনপ্রতি ১২০ টাকা করে ভাড়া নিচ্ছে। বাসওয়ালারা যাত্রীদের মানুষ মনে করে না। তাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে গেলে সমিতির দাপট দেখায়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মোটর মালিক সমিতির এক সদস্য জানান, সমিতির দুর্নীতিবাজ নেতাদের যোগসাজশে বাস শ্রমিকরা প্রতিনিয়ত চট্টগ্রাম-রাঙামাটি সড়কে যাত্রী হয়রানি করছে। চট্টগ্রাম-রাঙামাটি মোটর মালিক সিন্ডিকেট সমিতির হঠকারিতা সিদ্ধান্ত এই অবস্থার জন্য দায়ী। এদের খামখেয়ালির কারণে প্রতিনিয়ত এ সড়কে যাতায়াতকারী যাত্রীদের সীমাহীন কষ্ট করতে হচ্ছে। এ কষ্ট থেকে পরিত্রাণ চায় রাঙামাটিবাসী।