প্রকাশঃ ১৮ এপ্রিল, ২০২০ ০৩:২০:২৭
| আপডেটঃ ২৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১০:৪১:৫২
কৌশিক দাশ, সিএইচটি টুডে ডট কম, বান্দরবান। করোনা ভাইরাসের কারনে পুরোদেশে অঘোষিত লকডাউন চলছে,সাধারণ মানুষের কাজকর্ম বন্ধ। এরই মধ্যে মানুষ যখন গৃহবন্দি তখন প্রকৃতি উন্মুক্ত হতে শুরু করেছে।
এ সুযোগে কমেছে পরিবেশ দূষণের মাত্রা। নিজেকে মেলে ধরার সুযোগ পেয়েছে প্রকৃতি,এতে পাল্টে গেছে পার্বত্য জেলা বান্দরবানের পর্যটনের চেহারা। যেন অচেনা রূপ ধারণ করেছে জেলা শহরের ব্যস্ততম পর্যটন স্পটগুলো। পর্যটন স্পটগুলো একেবারেই ফাঁকা,চিরচেনা দৃশ্যের কিছুই নেই এখন। শহর হচ্ছে দূষণ মুক্ত। একদম থেমে গেছে প্রাণের কোলাহল। বান্দরবানের এমন দৃশ্য সত্যিই বিরল।
যখনই কোলাহল থেমে গেলো পাহাড়ে যেন আগের রুপ ফিরে পাচ্ছে,শহর হচ্ছে দূষণ মুক্ত। আর পাহাড়ের মাঝে ছোট ছোট লেক, ঝরনা, আর নদীগুলোর পানি হচ্ছে অনেকটাই স্বচ্ছ। পরিবেশবিদ ও সচেতন নাগরিক এবং শিক্ষাবিদদের মতে, মানুষের আগ্রাসনের কারণে পাহাড়ের পশু পাখিগুলো ও বাঁচার পরিবেশ হারিয়ে ফেলছিল। জনসাধারণের বিরুপ আচরণে পাহাড়ের পশু পাখিগুলো এবং নদনদীগুলো ছিল অন্যরকম । পাহাড়ে এত বেশি মানুষের ঢল,এমন কোলাহলের কারণে পাহাড়ের বণ্যপ্রাণীগুলো অনিরাপদ বোধ করত প্রায়ই, যখনই কোলাহল থেমে গেলো পাহাড়ে যেন আগের রুপ ফিরে পাচ্ছে।
বান্দরবানের সংবাদকর্মী ও বান্দরবান বেতারের উপস্থাপক এন এ জাকির বলেন,সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার লক্ষ্যে সবাই এখন বাসাবাড়িতে অবস্থান করছে। করোনা ভাইরাস ঝুকি এড়াতে বান্দরবানে পর্যটক ভ্রমনে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে প্রশাসন,তবে এই সময়ে বান্দরবানে পর্যটকের আনাগোনা এবং স্বাভাবিকভাবে পরিবেশের উপর একটা বিরুপ প্রভাব থাকতোই। যেমন যানবাহন বেশি যাতায়ত করার কারণে পর্যটকবাহী যানবাহন এলাকায় বেশি দেখা যেত। পর্যটকদের অনেকের জমায়েতে প্রকৃতি অনেকটাই রুক্ষ হয়ে পড়তো।
এন এ জাকির আরো বলেন, তবে করোনা ভাইরাসের সংক্রামকের কারণে এখন পার্বত্য জেলা বান্দরবানে পর্যটকদের চাপ না থাকায় বান্দরবানের প্রকৃতি পরিবেশ পাহাড় নিজের রুপ নিয়ে সেজে রয়েছে। পাহাড়ের যেই সৌন্দয্যটা ফিরে এসেছে তার কারণ কোথা ও দূষন নেই মানুষের সমাগম নেই, প্রকৃতির দূষন নেই নদী ও লেকের পানিগুলো স্বচ্ছ হয়ে গেছে স্বচ্ছ।
বান্দরবান ডনবস্কো সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক সীমা দাশ বলেন ,পাহাড়ে মানুষের অবাধ বিচরণের কারণে সেখান কার প্রকৃতি,জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে থাকলে এখন আর সেই দৃশ্য নেই। আশার কথা হলো অন্তত এ দুর্যোগময় মুহূর্তে প্রকৃতি তার নিজের পরিবেশ ফিরে পেয়েছে,তাই এ পরিবেশকে ধরে রাখতে হবে। শিক্ষক সীমা দাশ বলেন,পর্যটন শহর বান্দরবানে অতিমাত্রায় পর্যটকের উপস্থিতি হয়, যেটা এ পরিবেশের জন্য উপযোগী নয়। সেজন্য বছরের একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যটক আগমন সীমিত এবং পর্যটন শিল্পকে পরিবেশবান্ধব গুরুত্ব দিয়ে পরিকল্পনা গ্রহণ করা উচিত, তাহলে পর্যটন-প্রকৃতি দুটোকেই রক্ষা করা যাবে।
বান্দরবান প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি সাংবাদিক আমিনুল ইসলাম বাচ্চু বলেন,করোনা ভাইরাসের কারণে বান্দরবানের মানুষ হোম কোয়ারেন্টিনে এবং পর্যটক না আসাতে বাহিরে সমাগম কম হচ্ছে,তার কারণে প্রকৃতি তার আপন রুপ ফিরে পেতে শুরু করেছে। প্রকৃতিতে এখন পশু পাখির কোলাহল কোকিলের ডাক শুনা যাচ্ছে। তিনি আরো বলেন, পাহাড়ের নদ নদী লেক আর ঝিরিঝণা গুলো তার প্রাণ ফিরে পেয়েছে। নদীগুলোর পানি এখন অনেক পরিস্কার পরিচ্ছন্ন, গাছপালায় নতুন নতুন পাতা গজাঁচ্ছে,সব মিলিয়ে বান্দরবান এখন নির্মল প্রাকৃতিক পরিবেশের শহর।
পরিবেশ অধিদপ্তরের বান্দরবান কার্যালয়ের সিনিয়র কেমিস্ট এ কে এম ছামিউল আলম কুরসি বলেন,বান্দরবানে সাময়িকভাবে পর্যটক নিষেধাজ্ঞা আরোপে জনমনে কিছুটা বিরুপ প্রতিক্রিয়া হলে ও আমরা অনেকটা সুফল পাচ্ছি।
তিনি আরো বলেন,বান্দরবানের পর্যটনস্পট যেগুলো রয়েছে সেই গুলোতে এই সময়ে জনসমাগম না হওয়ায় এইটা পরিবেশের জন্য একটা ভালো লক্ষণ। তিনি আরো বলেন ,বান্দরবানে আসা পর্যটকরা যদি একটু সচেতন হয় বিশেষ করে তাদের ব্যবহারকৃত জিনিসপত্র যেমন পলিথিনসহ নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য যেখানে সেখানে না ফেললে আমাদের পরিবেশ অনেকটাই সুরক্ষিত হতো।