রাঙামাটিকে বাঁচাতে চ্যালেঞ্জগুলো চিহ্নিত করে এখনি উদ্যোগ নিতে হবে : মোহাম্মদ সোলায়মান

প্রকাশঃ ১২ এপ্রিল, ২০২০ ০৭:১৭:২৯ | আপডেটঃ ২১ নভেম্বর, ২০২৪ ০৬:৪২:০৭
মহামারি করোনায় থরথর করে কাঁপছে পুরো বিশ্ব। ইতোমধ্যে বাংলাদেশে আঘাত হেনেছে করোনা। ক্রমেই বাড়ছে ভয়াবহতা। একের পর এক জেলা আক্রান্ত হচ্ছে। হচ্ছে নতুন নতুন জেলা ও এলাকা লকডাউন। চট্টগ্রামে আক্রান্তের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। এখন পার্বত্য জেলা রাঙামাটিতে করোনার থাবা পড়া যেন সময়ের ব্যাপার। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে চোখ বুলালেই দেখা যায় এ জেলার মানুষ কতখানি করোনা আতঙ্কে ভুগছে।

যদিও সারা দেশের ন্যায় অসচেতন মানুষও এ জেলায় কম নয়। তবে মহামারি, মহাদূর্যোগ থেকে এখনো বাঁচার সুযোগ দেখছেন রাঙামাটির সচেতন মহল। এজন্য প্রশাসন ও নীতি নির্ধারকদের দ্রুত কিছু সিদ্ধান্ত নিতে হবে। অন্তত এ বিষয়ে কাল ক্ষেপন বা সিদ্ধান্তহীনতার কোন অবকাশ নেই। কারণ বিশ্বব্যাপী করোনার যে ভয়াবহতা তাতে মৃত্যু ও আক্রান্তের সংখ্যা গুনতে হচ্ছে প্রতি মিনিটে। তাই এখন প্রতিটি সেকেন্ডকে গুরুত্ব দিতে হবে। নয়তো আমাদের সকলকে সময়ের অনেক বড় খেসারত দিতে হতে পারে।

যেহেতু করোনা মোকাবেলায় এ মুুহুর্তে একমাত্র উপায় সামাজিক দুরত্ব বজায় রাখা। সে লক্ষে সরকার সারা দেশে গণ পরিবহণ ও দোকান পাট বন্ধ রেখে অঘোষিত লকডাউন করেছে। কিন্তু গেল দুই সপ্তাহের চিত্র বলছে কার্যত এ অগোষিত লকডাউন কোন কাজে আসছে না। একই চিত্র রাঙামাটি জেলায়। তবে রাঙামাটির অধিকাংশ মানুষ সচেতন হয়ে উঠেছেন নিজ নিজ অবস্থান থেকে। এ ছাড়া প্রশাসনের আন্তরিকতার কোন ঘাটতি পরিলক্ষিত হয়নি। তথাপিও কিছু মানুষের অসচেনতা, উদাসিনতা, এবং প্রশাসনের উদারতা বা সিথিলতা বা সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে কালক্ষেপন আমাদের সকলের জন্য কাল হতে পারে। যান চলাচল ও দোকান পাট বন্ধ হয়ে যাওয়ার ফলে খেটে খাওয়া মানুষ কর্মহীন হয়েছে কিন্তু যে লক্ষে এ লকডাউন তা অর্জন হচ্ছে না। এখনো মানুষ কারণে অকারণে, প্রয়োজনে বা অপ্রোয়জনে রাস্তায ঘূরে বেড়াচ্ছেন।

 প্রশাসনের গতানুগতিক টহল ও তল্লাসী মানুষ প্রতিনিয়ত ফাঁকি দিচ্ছে। প্রধান সড়কে চলে ইঁদুর বিড়াল খেলা আর পাড়া মহল্লায় চলছে দোকান পাট ও আড্ডা। প্রশাসনের এমন শিথিলতা রাঙামাটি জেলায় ভয়াবহ দূর্যোগ ডেকে আনতে পারে। এ অবস্থায় অসেচতন মানুষের ব্যাপারে আইন প্রয়োগকারী বাহিনীর কঠোরতার কোন বিকল্প নেই। তাই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনের বাইরে যাওয়ার আগেই চলমান অঘোষিত লকডাউনের মধ্যেও প্রশাসনের কিছু পদক্ষেপ নেয়া জরুরী হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ জেলায় করোনা মোকাবেলায় চ্যাঞ্জেগুলো চিহ্নিত করে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে হবে।

বিশেষ করে লকডাউন পুরোপুরি কার্যকর করতে আরো কঠোর হতে হবে প্রশাসনকে। জেলার সবকটি প্রবেশমুখে দিনরাত ২৪ ঘন্টা পাহাড়া বসিয়ে জনগণের চলাচল সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করতে হবে। এখনো পণ্য পরিবহণ, মাছ ও কাঁচামাল পরিবহণ সহ নানা অযুহাতে জেলায় মানুষ প্রবেশ করছে এবং বের হচ্ছে।  এ ছাড়াও ন্থানীয় বাজারের জনসমাগম ও আন্ত উপজেলায় জন চলাচল বন্ধ করার কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। জেলার সীমান্তবর্তি উপজেলা বরকল, রাজস্থলী, বিলাইছড়ি ও বাঘাইছড়িতে কঠোর নজরদারি দিয়ে চলাচল বন্ধ রাখতে হবে। যে সকল পেশাজীবি এখনো চলাচল করছেন যেমন: বিক্রয় প্রতিনিধি, মেডিকেল রিপ্রেজেন্টিটিভসহ যারা পেশাগত কারণে প্রতি নিয়ত বের হচ্ছেন তাদের চলাচল সীমিত বা নিয়ন্ত্রন করতে প্রশাসনকে একটি স্বল্প মেয়াদী নীতিমালা করে তা কার্যকর করতে হবে। এ ছাড়া এখনো যে সকল ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রমে স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে না তা কঠোর হাতে নিয়ন্ত্রন করা জরুরী। খেটে খাওয়া, নিন্ম আয়ের মানুষদের ঘরে রাখার স্বার্থে সরকারী বেসরকারী ত্রাণ সহায়তা কার্যক্রমে সমন্বয় বাড়াতে হবে। সুষম বন্টন করতে জনপ্রতিনিধি ও সামজিক নেতাদের নিয়ে এলাকা ভিত্তিক কমিটি গঠন করা জরুরী। এতে খাদ্য সহায়তা থেকে কেউ বাদ যাবে না।

জেলার স্বাস্থ্যখাতে যে সকল দূর্বলতা ও সংকট রয়েছে তা চিহ্নিত করে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে তা নিরসনের উদ্যোগ নিতে হবে। বিশেষ করে দ্রুত করোনা সনাক্ত করণ বা পরীক্ষার ব্যবস্থা করা, আক্রান্ত ব্যক্তি পাওয়া গেলে তাকে দ্রুত আইসোলেশনে নেয়ার ব্যবস্থা, পর্যাপ্ত এ্যাম্বুলেন্স প্রস্তুত রাখা, এ্যাম্বুলেন্স বোর্ট এর ব্যবস্থা রাখা, ক্লাস্টার এরিয়া বা ইতোমধ্যে আক্রান্ত এলাকা থেকে আসা ব্যক্তিদের কোয়ারেন্টাইনে আনতে গোয়েন্দা নজরদারি জোরদার করতে হবে। চিকিৎসকদের উপর চাপ কমাতে সাধারণ রোগিদের চিকিৎসায় আলাদা কিচিৎসক নিয়োগ ও অস্থায়ী স্বাস্থ্যকেন্দ্র খোলা যেতে পারে। এ ছাড়াও নার্স ও স্বেচ্ছাসেবীদের ইমার্জেন্সি করোনা সেবা প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে প্রস্তুত রাখতে হবে। পরিস্থিতি খারাপের দিকে গেলে জরুরী ওষুদ সরবরাহের ব্যবস্থা করা এবং খাদ্য মজুদ ও সরবরাহের পূর্ব প্রস্তুতি নিয়ে রাখা সময়ের দাবি। সব মিলিয়ে সরকারী নির্দেশনার পাশাপাশি সামাজিক সচেতনতা এবং প্রতিরোধ ব্যবস্থা আরো জোরদার করতে হবে। অন্যথায় লন্ডভন্ড হয়ে যেতে পারে জেলার স্বাভাবিক পরিস্থিতি। অকার্যকর হয়ে যেতে পারে সব উদ্যোগ। ব্যর্থ হবে আমাদের সকল প্রচেষ্টা।


 লেখক : মোহাম্মদ সোলায়মান, বার্তা প্রধান সিএইচটি টিভি, সভাপতি, রাঙামাটি সাংবাদিক ইউনিয়ন।