করোনা সংক্রামক রোধে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠির ভাষায় পোষ্টার ও লিফলেট বিতরণ

প্রকাশঃ ৩১ মার্চ, ২০২০ ১১:১৪:৪০ | আপডেটঃ ২৬ এপ্রিল, ২০২৪ ০৪:২০:২৫
সিএইচটি টুডে ডট কম, বান্দরবান। বিশ্বব্যাপী করোনার আতংকে আতংকিত বিশ্বব্যাপী। করোনার করাল গ্রাসে মৃত্যুবরণ করছে পৃথিবীর অনেক জনসাধারণ।

এদিকে করোনার সংবাদ পাওয়ার পরপরই বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের উদ্যোগে গ্রহণ করা হয়েছে নানা প্রতিরোধ কার্যক্রম। “ উই লাভ ” বান্দরবান নামে ৯টি সংগঠনের প্রায় ৩শতাধিক যুবক-যুবতী স্বেচ্ছাসেবকরা করোনা মোকাবেলার প্রস্তুতি নিয়ে বান্দরবানে ৭টি উপজেলার বিভিন্ন দুর্গম  গ্রামে ঘুরে ঘুরে বিতরণ করছে  ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠির ভাষায় ছাপানো পোষ্টার ও লিফলেট । বিভিন্ন দুর্গম গ্রাম ও পাড়ায় বসবাসরত ম্রো,মারমা ও বিভিন্ন ক্ষুদ্র নৃগোষ্টির ভাষার ছাপানো এই পোষ্টার লাগানো হচ্ছে এবং  জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে লিফলেট প্রদান করছে স্বেচ্ছাসেবকরা।

বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের সদস্য সিং ইয়ং ম্রো বলেন, করোনার এই  প্রাদুর্ভাবে আমরা হঠাৎ করেই সবাই আতংকিত হয়ে পড়েছি। কিন্তু  বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ক্যশৈহ্লার নির্দেশনায় আমরা যাতে সবাই এই রোগ থেকে মুক্ত থাকি তার জন্য সচেতনতা কার্যক্রম শুরু করি ।

পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ক্যশৈহ্লার নির্দেশক্রমে আমরা ক্ষুদ্র নৃগোষ্টি সম্প্রদায়ের জনসাধারণ যাতে বুঝতে পারে তার জন্য ম্রো,মারমা ও বিভিন্ন ক্ষুদ্র নৃগোষ্টির ভাষার লিপলেট বিতরণ করছি এবং দুর্গম পাড়ায় পাড়ায় গিয়ে দেয়ালে দেয়ালে পোস্টার লাগিয়ে আসছি। সিং ইয়ং ম্রো  আরো বলেন,আমরা চাই সবাই সুস্থ থাকুক, করোনার লক্ষণ সর্ম্পকে জানুক এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলুক।

বান্দরবানের সুয়ালক ইউনিয়নের কাইচতলি গ্রামের বাসিন্দা মংক্যচিং জানান, আমরা শুধু করোনা করোনা শুনেই আসছিলাম। হঠাৎ একদিন আমাদের পাড়াতে পার্বত্য জেলা পরিষদের প্রচার প্রচারণা দেখতে পেলাম এবং দেয়ালে লাগানো মারমা ভাষায় একটি পোষ্টার দেখে আমি অনেক সর্তক হলাম।

একই এলাকার বাসিন্দা চিং চিং মারমা জানান, আমাদের লিফলেট দিল আর এতে লেখা রয়েছে করোনা রোগের লক্ষণ কি ? রোগ দেখা দিলে কি করতে হবে। এই লিফলেট পাওয়াতে আমাদের পরিবার সর্র্তক হয়েছে পাশাপাশি আমি ও এলাকায় সবাইকে এই বিষয়ে বিস্তারিত জানালাম। জেলা পরিষদের পক্ষ থেকে আমাদের ক্ষুদ্র নৃগোষ্টির ভাষায় লিফলেট ও পোষ্টার ছাপিয়ে বিতরণ করায় আমরা অনেকটাই উপকৃত হলাম।

বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ক্যশৈহ্লা বলেন, করোনার ভাইরাসের সংবাদ পাওয়ার পর থেকে বান্দরবানে বসবাসরত ক্ষুদ্র নৃগোষ্টি ম্রো সম্প্রদায়ের ৫০টি পাড়া লকডাউন করেছে, তারা নিজেরা নিজেদের উদ্যোগে পাড়া লকডাউন করে। বান্দরবান সদরের ৬টি পাড়া , রোয়াংছড়ি উপজেলায় ২ টি পাড়া ,রুমা উপজেলায় ২২ টি পাড়া ও লামা উপজেলায় ২০টি পাড়াতে ম্রো সম্প্রদায়ের নারী ও পুরুষেরা ঘরে আবদ্ধ রয়েছে এবং তারা পাড়া থেকে বের হচ্ছে না এবং পাড়াতে ও কাউকে প্রবেশ করতে দিচ্ছে না, আর তাই আমরা তাদের পাশে গিয়ে দাঁড়ানোর উদ্যোগ নিলাম।

বিশেষ করে এই করোনার প্রাদুর্ভাবের খবর পাওয়া মাত্রই বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদ করোনার বিস্তার রোধে নানান কার্যক্রম চলমান রেখেছে এবং ক্ষুদ্র নৃগোষ্টি সম্প্রদায়ের সবাই যাতে করোনা সর্ম্পকে জানতে পারে ও সচেতন হয় তার জন্য আমরা ব্যাপক প্রচারণা শুরু করি। আমরা বান্দরবানে বসবাসরত ক্ষুদ্র নৃগোষ্টি সম্প্রদায়ের সবাইকে সর্র্তক করার জন্য এই কার্যক্রম পরিচালনা করছি এবং আমরা আশাকরি এই প্রচার প্রচারণায় সবাই আরো বেশি সর্তক হবে এবং সুস্থ থাকবে।

এদিকে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং এমপি বলেন, বর্র্তমান এই সময়ে সুস্থ থাকতে সবাইকে বেশি সচেতন হতে হবে ,আর এই সুস্থতার জন্য প্রচার প্রচারণা খুবই জরুরী বিষয়। তিনি আরো বলেন, বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের পক্ষ থেকে করোনা সংক্রামক রোধে প্রচারণা বৃদ্ধিতে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠির ভাষায় পোষ্টার ও লিফলেট বিতরণ কার্যক্রম চলমান থাকাতে পাহাড়ের জনসাধরণ অনেকটাই সচেতন হচ্ছে এবং আমরা আশাকরি সবাই যদি সচেতন হয় এবং পরিস্কার পরিচ্ছন্ন থাকে তাহলে এই করোনার হাত থেকে আমরা মুক্তি পাবো।